১০:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

তুরস্কে বারবার ভূকম্পন এখনো বিধ্বস্ত প্রদেশ ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব সংবাদ দাতা
  • আপডেট সময় ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
  • / ৯৭ বার পড়া হয়েছে

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের ১০টি প্রদেশ থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা বিনামূল্যে বিমান ও সড়ক যানের সুবিধা পাচ্ছেন। তুরস্ক সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমন সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও, তা আবারও বাড়ানো হয়েছে।

১০ প্রদেশ থেকে দেশের অন্য অঞ্চলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০টি বিমান যাওয়া আসা করছে। বিমানে শোকাহত লোকজনকে বিলাপ করতে দেখা গেছে। সড়ক পথেও যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে নিখোঁজদের পাওয়ার আশায় এখনও অপেক্ষায় স্বজনরা। তারা ধ্বংসস্তূপে, গণকবরে খুঁঁজছেন প্রিয়জনের মুখ।

এমন অবস্থায় সোমবার তৃতীয়বারের মতো আবারও ৫.৬ মাত্রার কম্পনে বহু স্থাপনা ভেঙে পড়েছে। এক জনের মৃত্যুসহ কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি গুরুত্বর আহত হয়েছে। ছোট-বড় কম্পনে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন শঙ্কায় রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ভ্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে। অতিরিক্ত চাপ থাকায় কোনো কোনো যাত্রী ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি হাতায় বিমানবন্দর থেকে মধ্যরাতে পেগাসাস এয়ারলাইন্সে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নামেন যুগান্তরের প্রতিবেদক। বিমানে ওঠার আগেই শোকাহত স্বজনরা বিলাপ করছিলেন। প্রিয়জনদের গণকবরে রেখে, ধ্বংসস্তূপে রেখে ছুটছেন অন্য প্রদেশে।৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশ থেকে টার্কিশ ও পেগাসাস এয়ারলাইন্স বিনা মূল্যে যাত্রী বহন শুরু করে।

ওই বিমানে ২৫০ জন যাত্রীর সঙ্গে তুরস্কের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী ইয়ানার ও লিনদা ইয়ানার ইস্তাম্বুলে যাচ্ছিলেন। সম্পর্কে দুজন স্বামী-স্ত্রী। আলী জানান, তার পরিবার হাতায় শহরে থাকতেন। ৫ তলা ভবন পুরোটা ধসে গেছে।তার পরিবারের ৭জন সদস্যসহ ওই ভবনে থাকা প্রায় সবাই মারা গেছেন। ভূমিকম্পের সময় তারা ইস্তাম্বুলে ছিলেন। ঘর নেই, বাড়ি নেই।

নেই বাড়ির মানুষগুলো। এমনটা বলতেই তারা বিলাপ করতে শুরু করেন। ওই সময় বিমানের ভেতরে থাকা অধিকাংশ যাত্রীই কান্না করছিলেন। বিমানের ভেতর আলভি এরা নামক এক শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার গাজী আনতেপে থাকতেন। মা-বাবা আর ৩ ভাইবোন মিলে একটি ফ্ল্যাটে ছিলেন। তিনি ইস্তাম্বুলে পড়াশোনা করেন। ভূমিকম্পে তিনি ছাড়া সবাই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন।

কেউ বেঁচে নেই। বলেই কাঁদতে শুরু করেন আলভি। মধ্য বয়সি দুই নারী একে অপরকে ধরে বিলাপ করছিলেন। আয়শা নামের একজন জানান, পাশের জন সম্পর্কে মামাতো বোন। তাদের পরিবারে ৩ জন মারা গেছেন। ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১০ দিন অপেক্ষা করেও নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান পাননি। তুরস্কের পেগাসাস এয়ারলাইন্সের সিনিয়র বিমানবালা বুশরা পেকডেমির বলেন, ‘ভূমিকম্পের দিন থেকেই ১০টি প্রদেশে বিনা মূল্যে যাত্রী নিয়ে উড়ছে আমাদের বিমান।

একই সঙ্গে টার্কিশ বিমানও এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক সময়ে ডেঅফ নেই, কিন্তু এখন ডেঅফ বাতিল করেছি। রাতদিন ক্ষতিগ্রস্ত-শোকাহতদের নিয়ে ছুটছি।স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করছি। আমরা বেঁচে আছি, তুরস্কের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে কাজ করতে চাই।’ তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘আফাদ’-এর একটি সূত্র জানায়, শুধু দুটি বিমান সংস্থা নয়-বিনা মূল্যে সেবা দিতে এগিয়ে এসেছে আরও অন্তত ৬টি বিমান সংস্থা।

তবে দুটি সংস্থা টানা যাত্রী বহন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ প্রদেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে। যারা আশ্রয় পাচ্ছেন তাদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোস্টেল, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আফাদ সূত্র আরও জানায়, ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাওয়ায় হাজার হাজার যানবাহনও ভেঙে গেছে। বাসাবাড়িও ধসে গেছে।

সড়কপথের অধিকাংশই ফেটে গেছে। তুরস্ক পুলিশ, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার গাড়ি দিয়ে বিনা মূল্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আনা-নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের যান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মী, এনজিওকর্মী ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের বিনা মূল্যে বিমান ও সড়কপথে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

তুরস্কে বারবার ভূকম্পন এখনো বিধ্বস্ত প্রদেশ ছাড়ছে মানুষ

আপডেট সময় ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের ১০টি প্রদেশ থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা বিনামূল্যে বিমান ও সড়ক যানের সুবিধা পাচ্ছেন। তুরস্ক সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমন সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও, তা আবারও বাড়ানো হয়েছে।

১০ প্রদেশ থেকে দেশের অন্য অঞ্চলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০টি বিমান যাওয়া আসা করছে। বিমানে শোকাহত লোকজনকে বিলাপ করতে দেখা গেছে। সড়ক পথেও যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে নিখোঁজদের পাওয়ার আশায় এখনও অপেক্ষায় স্বজনরা। তারা ধ্বংসস্তূপে, গণকবরে খুঁঁজছেন প্রিয়জনের মুখ।

এমন অবস্থায় সোমবার তৃতীয়বারের মতো আবারও ৫.৬ মাত্রার কম্পনে বহু স্থাপনা ভেঙে পড়েছে। এক জনের মৃত্যুসহ কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি গুরুত্বর আহত হয়েছে। ছোট-বড় কম্পনে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন শঙ্কায় রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ভ্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে। অতিরিক্ত চাপ থাকায় কোনো কোনো যাত্রী ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।

২৫ ফেব্রুয়ারি হাতায় বিমানবন্দর থেকে মধ্যরাতে পেগাসাস এয়ারলাইন্সে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নামেন যুগান্তরের প্রতিবেদক। বিমানে ওঠার আগেই শোকাহত স্বজনরা বিলাপ করছিলেন। প্রিয়জনদের গণকবরে রেখে, ধ্বংসস্তূপে রেখে ছুটছেন অন্য প্রদেশে।৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশ থেকে টার্কিশ ও পেগাসাস এয়ারলাইন্স বিনা মূল্যে যাত্রী বহন শুরু করে।

ওই বিমানে ২৫০ জন যাত্রীর সঙ্গে তুরস্কের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী ইয়ানার ও লিনদা ইয়ানার ইস্তাম্বুলে যাচ্ছিলেন। সম্পর্কে দুজন স্বামী-স্ত্রী। আলী জানান, তার পরিবার হাতায় শহরে থাকতেন। ৫ তলা ভবন পুরোটা ধসে গেছে।তার পরিবারের ৭জন সদস্যসহ ওই ভবনে থাকা প্রায় সবাই মারা গেছেন। ভূমিকম্পের সময় তারা ইস্তাম্বুলে ছিলেন। ঘর নেই, বাড়ি নেই।

নেই বাড়ির মানুষগুলো। এমনটা বলতেই তারা বিলাপ করতে শুরু করেন। ওই সময় বিমানের ভেতরে থাকা অধিকাংশ যাত্রীই কান্না করছিলেন। বিমানের ভেতর আলভি এরা নামক এক শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার গাজী আনতেপে থাকতেন। মা-বাবা আর ৩ ভাইবোন মিলে একটি ফ্ল্যাটে ছিলেন। তিনি ইস্তাম্বুলে পড়াশোনা করেন। ভূমিকম্পে তিনি ছাড়া সবাই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন।

কেউ বেঁচে নেই। বলেই কাঁদতে শুরু করেন আলভি। মধ্য বয়সি দুই নারী একে অপরকে ধরে বিলাপ করছিলেন। আয়শা নামের একজন জানান, পাশের জন সম্পর্কে মামাতো বোন। তাদের পরিবারে ৩ জন মারা গেছেন। ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১০ দিন অপেক্ষা করেও নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান পাননি। তুরস্কের পেগাসাস এয়ারলাইন্সের সিনিয়র বিমানবালা বুশরা পেকডেমির বলেন, ‘ভূমিকম্পের দিন থেকেই ১০টি প্রদেশে বিনা মূল্যে যাত্রী নিয়ে উড়ছে আমাদের বিমান।

একই সঙ্গে টার্কিশ বিমানও এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক সময়ে ডেঅফ নেই, কিন্তু এখন ডেঅফ বাতিল করেছি। রাতদিন ক্ষতিগ্রস্ত-শোকাহতদের নিয়ে ছুটছি।স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করছি। আমরা বেঁচে আছি, তুরস্কের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে কাজ করতে চাই।’ তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘আফাদ’-এর একটি সূত্র জানায়, শুধু দুটি বিমান সংস্থা নয়-বিনা মূল্যে সেবা দিতে এগিয়ে এসেছে আরও অন্তত ৬টি বিমান সংস্থা।

তবে দুটি সংস্থা টানা যাত্রী বহন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ প্রদেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে। যারা আশ্রয় পাচ্ছেন তাদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোস্টেল, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আফাদ সূত্র আরও জানায়, ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাওয়ায় হাজার হাজার যানবাহনও ভেঙে গেছে। বাসাবাড়িও ধসে গেছে।

সড়কপথের অধিকাংশই ফেটে গেছে। তুরস্ক পুলিশ, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার গাড়ি দিয়ে বিনা মূল্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আনা-নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের যান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মী, এনজিওকর্মী ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের বিনা মূল্যে বিমান ও সড়কপথে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।