“আজ, মানবজাতি শান্তি বা যুদ্ধ, আলোচনা বা সংঘাত, সবার জয় অথবা সবার হার, যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার মুখোমুখি,” কুচকাওয়াজের আগে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে দেওয়া ভাষণে বলেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
‘অদম্য চীনকে’ নিয়ে গর্বিত শি কুচকাওয়াজে নতুন অস্ত্রে দেখালেন শক্তি

- আপডেট সময় ০১:০৬:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জমকালো এই কুচকাওয়াজের মাধ্যমে চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর উদ্যাপন করল। ছবি: রয়টার্স
চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনসহ দুই ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতাকে পাশে নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সতর্ক করে বলেছেন, শান্তি বা যুদ্ধ, বিশ্বের সামনে এখন এই দুইয়ের মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার সময়।
বুধবার বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জমকালো এই কুচকাওয়াজের মাধ্যমে চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর উদ্যাপন করল, যেখানে পশ্চিমা নেতাদের বাদ দিয়ে তাদের চোখে ব্রাত্য পুতিন ও কিমকে অতিথি বানিয়ে, নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ে বেইজিংয়ের অভিলাষ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
এই আয়োজনের উদ্দেশ্যই ছিল চীনের সামরিক শক্তি ও কূটনৈতিক অর্জন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা; তাও এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ ও ওলটপালট নীতি শত্রু-মিত্র সবার সঙ্গেই ওয়াশিংটনের সম্পর্ক খারাপ করছে।

“আজ, মানবজাতি শান্তি বা যুদ্ধ, আলোচনা বা সংঘাত, সবার জয় অথবা সবার হার, যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার মুখোমুখি,” তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শকের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শি এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইতিহাসের সঠিক পাশে চীনের জনগণ অটল-অবিচল থাকবে, ভাষণে বলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এ শীর্ষনেতা।
তিনি বলেন, তার দেশ ‘অদম্য’ এবং কখনোই ‘কোনো হুমকির কাছে মাথা নত করবে না’।
ছাদখোলা লিমুজিনে দাঁড়িয়ে এরপর শি তার বাহিনীর সদস্যদের এবং প্রদর্শনীর জন্য রাখা ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও ড্রোনসহ অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্র ঘুরে দেখেন।
৭০ মিনিটের এ প্রদর্শনীতে হেলিকপ্টার থেকে ব্যানার নামানো, সুশৃঙ্খলভাবে যুদ্ধবিমানের উড়ে যাওয়াও ছিল। ওড়ানো হয়েছে ৮০ হাজার শান্তির পায়রা ও রঙবেরঙের হাজার হাজার বেলুন।
চীনের বিপ্লবী নেতা মাও জে দংয়ের আদলে স্যুট পরে এর আগে শি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দুই ডজনের বেশি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে ইংরেজিতে ‘দেখে ভালো লাগছে’ এবং ‘চীনে স্বাগতম’ বলে অভ্যর্থনা জানান।

নিজ দেশে বিক্ষোভ চলাকালে চীন সফর বাতিলের ঘোষণা দিলেও এদিনের অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার প্রাবোও সুবিয়ান্তোকেও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিবিসি জানিয়েছে, কুচকাওয়াজে চীন একগুচ্ছ নতুন সামরিক অস্ত্রও উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- নতুন পারমাণবিক আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সহজে পরিবহনযোগ্যে ও হাইপারসনিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন লেজার অস্ত্র এবং ‘রোবট কুকুর’ ড্রোন।
চীনের সেনাবাহিনী পিএলএ যে ব্যাপক সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল তার ফলশ্রুতিতে বেইজিং এখন অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ধরে ফেলেছে, শব্দের গতির পাঁচ গুণেরও বেশি দ্রুত চলে এমন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কিছু ক্ষেত্রে তারা ওয়াশিংটনকে ছাড়িয়েও গেছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবারই চীন প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল ওয়াইজে-১৭ ও হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ওয়াইজে-১৯ দেখিয়েছে।
উন্মোচন করেছে পানির নিচে থেকে আঘাত হানতে সক্ষম এমন বড় আকারের স্বয়ংক্রিয় ড্রোন এজেএক্স০০২, যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
কুচকাওয়াজ শুরু হওয়ার পরপরই ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হাত থেকে চীনকে রক্ষায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন’।

“প্লিজ ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা পৌঁছে দিন, যখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন,” লিখেছেন তিনি।
মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি চীনের কুচকাওয়াজকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করেন না এবং তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি-র ‘সম্পর্ক বেশ ভালো’।
জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র বুধবার চীনের কুচকাওয়াজ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে তিনি বলেছেন, এশিয়ার শীর্ষ দুই অর্থনীতি গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ছে।
জমকালো কুচকাওয়াজের পাশাপাশি শি, পুতিন ও কিম নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার কোনো ইঙ্গিত দেন কিনা, সেদিকেও পর্যবেক্ষকদের নজর ছিল।

আলাদা আলাদাভাবে চীন-উত্তর কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার মধ্যে এ ধরনের চুক্তি থাকলেও তিন দেশ একত্রে নেটো গোছের কোনো প্রতিরক্ষা সমঝোতা বা চুক্তিতে নেই। তেমন কোনো চুক্তি হলে তা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তো বটেই বিশ্বের গোটা সামরিক বিন্যাসেই বড় পরিবর্তন আনতে বাধ্য করতো।
কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুতিন এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য আরও গাঢ় করার চুক্তি সেরে ফেলেছেন। আর কিম সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একসঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেকে উপস্থাপনের।
উত্তর কোরিয়ার এ শীর্ষ নেতা এবার চীন গেছেন তার মেয়ে জু এ’কে সঙ্গে নিয়ে। এই মেয়েকেই কিম জং উনের উত্তরসূরী মনে করছে দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দারা। তবে কুচকাওয়াজে বাবার সঙ্গে জু এ’কে দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম