০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫
চীনে প্রথম গড়ে উঠলেও এই চক্র এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন দেশে চক্রটির সদস্যদেরকে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে বিবিসি।

অনলাইনে বিড়াল নির্যাতনের নৃশংস ভিডিও ছড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্র: বিবিসি’র অনুসন্ধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০২:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি: বিবিসি

 

বিড়াল ও বিড়াল ছানাদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়ানোর একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে বিবিসি। এই চক্রে যুক্তরাজ্যের সদস্যরাও রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে পরিচালিত এসব গ্রুপে হাজার হাজার সদস্য সক্রিয়, যারা বিড়লকে নৃশংসভাবে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও শেয়ার ও বিক্রি করে।

একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপে বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের কিছু সদস্য আরএসপিসিএ (ব্রিটিশ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা) থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিয়ে সেগুলোকে নির্যাতন করার পরামর্শ দিচ্ছে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদেরকে।

বিবিসি-র এই অনুসন্ধান এমন সময় প্রকাশ করা হল, যখন লন্ডনের রুইসলিপে দুটি বিড়াল ছানাকে নির্যাতন ও হত্যা করার দায়ে কিশোর বয়সী দুই জন অপরাধ স্বীকার করেছে। ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর-কিশোরীকে সোমবার আদালতে সাজা দেওয়া হবে।

তারা বিড়ালছানা দুটিকে কেটে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, ব্লোটর্চ ও কাঁচি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিড়াল নির্যাতনকারীদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের ভিডিও তৈরি করে তা গোপন অ্যাপে বিক্রি করে।

এই চক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে:

চীনে প্রথম গড়ে উঠলেও এই চক্র এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন দেশে এই নেটওয়ার্কের সদস্যদেরকে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে বিবিসি।

ফেলিন গার্ডিয়ানস নামের একটি প্রাণী অধিকার সংগঠন বলছে, মে ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতি ১৪ ঘণ্টায় বিড়াল নির্যাতনের নতুন একটি করে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে।

সংগঠনটি জানায়, তারা এ বছর ২৪টি সক্রিয় গ্রুপ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপটিতে এক হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। সবচেয়ে ‘সক্রিয় নির্যাতনকারী’ ব্যক্তি একাই ২০০টির বেশি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের কিছু অ্যাকাউন্টে বিড়াল সংগ্রহ করে সেগুলোকে কীভাবে নির্যাতন করা যায় তা নিয়ে একটি গ্রুপে আলোচনা হতে দেখেছে বিবিসি।

কীভাবে আরএসপিসিএ থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিতে হয়, আবেদন করতে হয় তা নিয়ে এক সদস্য আলোচনা করেছে। আরেকটি পোস্টে যুক্তরাজ্যের বিড়াল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে একজন লিখেছে, তারা এদেরকে খুব বাজেভাবে নির্যাতন করতে চায়।

ফেলিন গার্ডিয়ান্সের স্বেচ্ছাসেবক লারা (পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রেখে এই নির্যাতনকারী চক্রের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন।

বিবিসি-কে তিনি বলেন, “তাদের পোস্ট করা ভিডিও-ছবি, কথোপকথন প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয় ভেঙে দেয়।” এ ধরনের বর্বরতাকে ‘শয়তানি কার্যকলাপের চরম রূপ’ আখ্যা দেন তিনি।

 

শিশুরাও জড়িত:

বিবিসি দেখেছে- একটি গ্রুপে এক সদস্য নিজেকে ১০ বছর বয়সী বলে পরিচয় দিয়ে লিখেছে, “আমি বিড়াল নির্যাতন করতে ভালোবাসি।” নতুন সদস্যরা ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে চক্রটিতে প্রবেশ করতে পারে।

বিবিসি-র দেখা ভিডিও ও ছবি অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মান্তিক — যেখানে বিড়ালকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা, পানিতে ডুবিয়ে ও অনাহারে রেখে মারতে দেখা যায়।

আরেক ভিডিওতে একটি খাঁচাবন্দি বিড়ালছানাকে না খাইয়ে রাখলে কত দিন বাঁচবে তা পরীক্ষা করা হয়।

মৃতপ্রায় বিড়ালকে কীভাবে শক দিয়ে জীবিত করে আবার নির্যাতন করা হয়— অনলাইন চ্যাটে এমন বিবরণও দিয়েছে কোনও কোনও নির্যাতনকারী।

নতুন সদস্যদের বিড়াল নির্যাতন করে ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে এই অনলাইন নেটওয়ার্ক আরও বড় হয়। এসব নির্যাতনকারীর অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই চক্র ‘১০০ বিড়াল হত্যা প্রতিযোগিতা’ নামে একটি চ্যালেঞ্জ আয়োজন করেছিল। সেখানে কত দ্রুত ১০০টি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যা করা যায় তা দেখাতে সদস্যদের উৎসাহিত করা হয়েছিল।

চীনে ২০২৩ সালে প্রথম এমন ভয়াবহ ভিডিও ভাইরাল হয়। দুটি নৃশংস ভিডিওর জন্য দায়ী ওয়াং চাওয়িকে ১৫ দিনের জন্য আটক করেছিল চীন কর্তৃপক্ষ। পরে ‘অনুতাপপত্র’ লিখিয়ে তাকে ছাড় দেওয়া হয়।

কিন্তু তার ভিডিও থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে পরে আরও অনেকেই চীনা ও পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুরূপ ভিডিও ছাড়তে শুরু করে। সেগুলো হাজার হাজার ভিউও পায়। তারপর এই চক্র গোপন মেসেজিং অ্যাপে রূপান্তরিত হয়।

এমনকি, একটি ওয়েবসাইট নিজেদের ‘বিড়ালপ্রেমীদের কমিউনিটি’ বলে দাবি কররলেও তারা বিড়াল নির্যাতনে জড়িত। এই সাইটে প্রবেশাধিকার পেতে হলে ব্যবহারকারীকে বিড়াল নির্যাতনের প্রমাণ দেখাতে হয়।

 

‘লিটল উইনি’:

বিড়াল নির্যাতন চক্রে ‘লিটল উইনি’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এর প্রোফাইল ছবিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ব্যঙ্গ করে উইনি দ্য পুহ চরিত্র বসানো আছে।

ফেলিন গার্ডিয়ানস-এর এক সদস্য এমনই এক লিটল উইনি অ্যাকাউন্টের মালিকের সঙ্গে অনলাইনে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করেন।

সেখানে তিনি একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও দেখেন। পরে ওই কর্মী অভিযুক্তের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। এই কলের মাধ্যমেই তিনি জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি জাপানের টোকিওতে বাস করা ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি।

তবে বিবিসি-র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সেই ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ভিডিও তৈরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

চীনে প্রাণী নির্যাতনবিরোধী কোনও আইনি কাঠামো নেই, যা নির্যাতনকারীদের কার্যত দায়মুক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফেলিন গার্ডিয়ানস।

সংগঠনটি বলছে, শাস্তির ভয় না থাকায় এমন কাজ চালিয়ে যেতে পারছে অপরাধীরা। সংগঠনের পরিচালক লারা বলেন, “এ ধরনের চক্র এখনই রোধ না করা গেলে এটি আরও বাড়বে হবে এবং ভয়ংকর রূপ নেবে।”

 

যুক্তরাজ্যে উদ্বেগ:

আরএসপিসিএ’র বিশেষ তদন্ত ইউনিটের প্রধান ইয়ান ব্রিগস বলেন, “এ ধরনের নির্যাতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং একটি সভ্য সমাজে এর কোনো স্থান নেই।”

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ক্যাটস’ এর চেয়ারপারসন এমপি জোহানা ব্যাক্সটার বলেন, “এই চক্র তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা তৈরি করছে। প্রাণী নির্যাতন ভবিষ্যতের মানবিক সহিংসতারই পূর্বাভাস।”

কঠোর পদক্ষেপ দাবি:

প্রাণী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের সহিংস ভিডিও প্ল্যাটফর্মে অনায়াসে ছড়িয়ে পড়ায় কেবল প্রাণীর নিরাপত্তা নয়, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

তাই কড়া আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই ভয়াবহ চক্রকে দমন করতে হবে। “এটি কেবল প্রাণী নির্যাতনের বিষয় নয়, বরং মানবতার প্রশ্নও,” বলেন লারা।

 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

চীনে প্রথম গড়ে উঠলেও এই চক্র এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন দেশে চক্রটির সদস্যদেরকে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে বিবিসি।

অনলাইনে বিড়াল নির্যাতনের নৃশংস ভিডিও ছড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্র: বিবিসি’র অনুসন্ধান

আপডেট সময় ০২:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

 

বিড়াল ও বিড়াল ছানাদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়ানোর একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে বিবিসি। এই চক্রে যুক্তরাজ্যের সদস্যরাও রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে পরিচালিত এসব গ্রুপে হাজার হাজার সদস্য সক্রিয়, যারা বিড়লকে নৃশংসভাবে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও শেয়ার ও বিক্রি করে।

একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপে বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের কিছু সদস্য আরএসপিসিএ (ব্রিটিশ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা) থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিয়ে সেগুলোকে নির্যাতন করার পরামর্শ দিচ্ছে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদেরকে।

বিবিসি-র এই অনুসন্ধান এমন সময় প্রকাশ করা হল, যখন লন্ডনের রুইসলিপে দুটি বিড়াল ছানাকে নির্যাতন ও হত্যা করার দায়ে কিশোর বয়সী দুই জন অপরাধ স্বীকার করেছে। ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর-কিশোরীকে সোমবার আদালতে সাজা দেওয়া হবে।

তারা বিড়ালছানা দুটিকে কেটে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, ব্লোটর্চ ও কাঁচি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিড়াল নির্যাতনকারীদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের ভিডিও তৈরি করে তা গোপন অ্যাপে বিক্রি করে।

এই চক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে:

চীনে প্রথম গড়ে উঠলেও এই চক্র এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন দেশে এই নেটওয়ার্কের সদস্যদেরকে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে বিবিসি।

ফেলিন গার্ডিয়ানস নামের একটি প্রাণী অধিকার সংগঠন বলছে, মে ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতি ১৪ ঘণ্টায় বিড়াল নির্যাতনের নতুন একটি করে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে।

সংগঠনটি জানায়, তারা এ বছর ২৪টি সক্রিয় গ্রুপ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপটিতে এক হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। সবচেয়ে ‘সক্রিয় নির্যাতনকারী’ ব্যক্তি একাই ২০০টির বেশি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের কিছু অ্যাকাউন্টে বিড়াল সংগ্রহ করে সেগুলোকে কীভাবে নির্যাতন করা যায় তা নিয়ে একটি গ্রুপে আলোচনা হতে দেখেছে বিবিসি।

কীভাবে আরএসপিসিএ থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিতে হয়, আবেদন করতে হয় তা নিয়ে এক সদস্য আলোচনা করেছে। আরেকটি পোস্টে যুক্তরাজ্যের বিড়াল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে একজন লিখেছে, তারা এদেরকে খুব বাজেভাবে নির্যাতন করতে চায়।

ফেলিন গার্ডিয়ান্সের স্বেচ্ছাসেবক লারা (পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রেখে এই নির্যাতনকারী চক্রের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন।

বিবিসি-কে তিনি বলেন, “তাদের পোস্ট করা ভিডিও-ছবি, কথোপকথন প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয় ভেঙে দেয়।” এ ধরনের বর্বরতাকে ‘শয়তানি কার্যকলাপের চরম রূপ’ আখ্যা দেন তিনি।

 

শিশুরাও জড়িত:

বিবিসি দেখেছে- একটি গ্রুপে এক সদস্য নিজেকে ১০ বছর বয়সী বলে পরিচয় দিয়ে লিখেছে, “আমি বিড়াল নির্যাতন করতে ভালোবাসি।” নতুন সদস্যরা ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে চক্রটিতে প্রবেশ করতে পারে।

বিবিসি-র দেখা ভিডিও ও ছবি অত্যন্ত ভয়াবহ ও মর্মান্তিক — যেখানে বিড়ালকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা, পানিতে ডুবিয়ে ও অনাহারে রেখে মারতে দেখা যায়।

আরেক ভিডিওতে একটি খাঁচাবন্দি বিড়ালছানাকে না খাইয়ে রাখলে কত দিন বাঁচবে তা পরীক্ষা করা হয়।

মৃতপ্রায় বিড়ালকে কীভাবে শক দিয়ে জীবিত করে আবার নির্যাতন করা হয়— অনলাইন চ্যাটে এমন বিবরণও দিয়েছে কোনও কোনও নির্যাতনকারী।

নতুন সদস্যদের বিড়াল নির্যাতন করে ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে এই অনলাইন নেটওয়ার্ক আরও বড় হয়। এসব নির্যাতনকারীর অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই চক্র ‘১০০ বিড়াল হত্যা প্রতিযোগিতা’ নামে একটি চ্যালেঞ্জ আয়োজন করেছিল। সেখানে কত দ্রুত ১০০টি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যা করা যায় তা দেখাতে সদস্যদের উৎসাহিত করা হয়েছিল।

চীনে ২০২৩ সালে প্রথম এমন ভয়াবহ ভিডিও ভাইরাল হয়। দুটি নৃশংস ভিডিওর জন্য দায়ী ওয়াং চাওয়িকে ১৫ দিনের জন্য আটক করেছিল চীন কর্তৃপক্ষ। পরে ‘অনুতাপপত্র’ লিখিয়ে তাকে ছাড় দেওয়া হয়।

কিন্তু তার ভিডিও থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে পরে আরও অনেকেই চীনা ও পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুরূপ ভিডিও ছাড়তে শুরু করে। সেগুলো হাজার হাজার ভিউও পায়। তারপর এই চক্র গোপন মেসেজিং অ্যাপে রূপান্তরিত হয়।

এমনকি, একটি ওয়েবসাইট নিজেদের ‘বিড়ালপ্রেমীদের কমিউনিটি’ বলে দাবি কররলেও তারা বিড়াল নির্যাতনে জড়িত। এই সাইটে প্রবেশাধিকার পেতে হলে ব্যবহারকারীকে বিড়াল নির্যাতনের প্রমাণ দেখাতে হয়।

 

‘লিটল উইনি’:

বিড়াল নির্যাতন চক্রে ‘লিটল উইনি’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এর প্রোফাইল ছবিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ব্যঙ্গ করে উইনি দ্য পুহ চরিত্র বসানো আছে।

ফেলিন গার্ডিয়ানস-এর এক সদস্য এমনই এক লিটল উইনি অ্যাকাউন্টের মালিকের সঙ্গে অনলাইনে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করেন।

সেখানে তিনি একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও দেখেন। পরে ওই কর্মী অভিযুক্তের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। এই কলের মাধ্যমেই তিনি জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি জাপানের টোকিওতে বাস করা ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি।

তবে বিবিসি-র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সেই ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ভিডিও তৈরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

চীনে প্রাণী নির্যাতনবিরোধী কোনও আইনি কাঠামো নেই, যা নির্যাতনকারীদের কার্যত দায়মুক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফেলিন গার্ডিয়ানস।

সংগঠনটি বলছে, শাস্তির ভয় না থাকায় এমন কাজ চালিয়ে যেতে পারছে অপরাধীরা। সংগঠনের পরিচালক লারা বলেন, “এ ধরনের চক্র এখনই রোধ না করা গেলে এটি আরও বাড়বে হবে এবং ভয়ংকর রূপ নেবে।”

 

যুক্তরাজ্যে উদ্বেগ:

আরএসপিসিএ’র বিশেষ তদন্ত ইউনিটের প্রধান ইয়ান ব্রিগস বলেন, “এ ধরনের নির্যাতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং একটি সভ্য সমাজে এর কোনো স্থান নেই।”

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ক্যাটস’ এর চেয়ারপারসন এমপি জোহানা ব্যাক্সটার বলেন, “এই চক্র তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা তৈরি করছে। প্রাণী নির্যাতন ভবিষ্যতের মানবিক সহিংসতারই পূর্বাভাস।”

কঠোর পদক্ষেপ দাবি:

প্রাণী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের সহিংস ভিডিও প্ল্যাটফর্মে অনায়াসে ছড়িয়ে পড়ায় কেবল প্রাণীর নিরাপত্তা নয়, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

তাই কড়া আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই ভয়াবহ চক্রকে দমন করতে হবে। “এটি কেবল প্রাণী নির্যাতনের বিষয় নয়, বরং মানবতার প্রশ্নও,” বলেন লারা।

 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম