ছেলের জন্মদিনে ম্যাডোনা লিখেছিলেন, “গাজায় যদি নির্দোষ শিশুদের বাঁচানো যেত, তবে সেটাই হত মা হিসেবে সন্তানকে দেওয়া আমার সবচেয়ে বড় উপহার।”
‘অনেক দেরি হওয়ার আগে’ পোপকে গাজা সফরের আহ্বান ম্যাডোনার

- আপডেট সময় ০৫:১৫:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
আরো অনেক প্রাণনাশ এবং রক্ত ঝরার আগেই পোপ লিও চতুর্দশকে গাজা সফরের অনুরোধ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পপ তারকা ম্যাডোনা।
একজন মা হিসেবে শিশুদের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ম্যাডোনা। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শিশুদের প্রতি দায়িত্ব এড়ানো যায় না।
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভূখণ্ডটিতে অনাহারে ও অপুষ্টিতে ১০৬ জন শিশুর প্রাণ হারানোর তথ্য দিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কদিন আগে জানিয়েছিল, ইরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলা ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে প্রতিদিন গড়ে ২৮টি শিশুর প্রাণহানি হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় লাখ লাখ শিশু এই যুদ্ধে তাদের শৈশব হারিয়েছে। গাজার শিশুদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও সুরক্ষা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
পোপকে গাজা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ম্যাডোনা লিখেছেন, পোপই একমাত্র ব্যক্তি যাকে গাজায় প্রবেশে ‘বাধা দেওয়া হবে না’।
ম্যাডোনা এমন একটি সময়ে এই আহ্বান রেখেছেন যখন যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করেছে, ‘আমাদের চোখের সামনেই দুর্ভিক্ষ তৈরি হচ্ছে।’
তবে গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। উল্টো তারা অভিযোগ করেছে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া সাহায্য সংগ্রহ ও বিতরণ করছে না।
ইনস্টাগ্রামে ম্যাডোনা লিখেছেন, “সবচেয়ে পবিত্র পিতা, অনুগ্রহ করে গাজায় যান এবং দেরি হওয়ার আগে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।
“একজন মা হিসেবে আমি তাদের কষ্ট দেখাটা সহ্য করতে পারি না। বিশ্বের শিশু সবারই সন্তান। আপনি আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যাকে প্রবেশে বাধা দেওয়া যাবে না।”
ম্যাডোনা আরও লিখেছেন, “এই নিষ্পাপ শিশুদের বাঁচাতে মানবিক সহায়তার সব দরজা পুরোপুরি খুলে দিতে হবে।”
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন সংস্থা ও ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাডোনা।
তিনি লিখেছেন, “আমি কারও দিকে আঙুল তুলছি না। দোষারোপ করছি না বা পক্ষ নিচ্ছি না। সবাই কষ্ট পাচ্ছে। অপহৃতদের মায়েরাও। আমি প্রার্থনা করি তারা মুক্তি পাক।”

পোপকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া বার্তাটি ম্যাডোনা শেষ করেছেন এভাবে, “সময় আর নেই। দয়া করে বলুন, আপনি যাবেন। ভালোবাসা রইল, ম্যাডোনা।”
পপ তারকা ম্যাডোনার এই পোস্টে ৩ লাখের বেশি প্রতিক্রিয়া এসেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার ম্যাডোনা। ২০২৩ সালে লন্ডনে পারফর্ম করার সময় তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, শিশুদের কষ্ট, তরুণদের কষ্ট, বয়স্কদের কষ্ট আর নেওয়া যায় না।
সবকিছু ‘হৃদয়বিদারক বর্ণনা করে ম্যাডোনা বলেন, “তবে আমাদের হৃদয় ভাঙলেও মনোবল ভাঙতে পারবে না।”
কনসার্টে দর্শকদের শক্তি ও ভালোবাসা জাগ্রত করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান রেখেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া কিছুদিন আগে ছেলের জন্মদিনে ম্যাডোনা লিখেছিলেন, “গাজায় যদি নির্দোষ শিশুদের বাঁচানো যেত, তবে সেটাই হত মা হিসেবে সন্তানকে দেওয়া আমার সবচেয়ে বড় উপহার।”
জুলাইয়ে নতুন পোপ গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান রেখেছিলেন। তিনি যেদিন এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তার আগের দিন গাজা সিটির ক্যাথলিক গির্জায় আশ্রয় নেওয়া তিনজন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।

পোপ পরে পিএ নিউজকে বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই যে মানবিক আইন মেনে চলতে হবে। বেসামরিকদের সুরক্ষা, সমষ্টিগত শাস্তি নিষিদ্ধকরণ, নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা এবং জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত না করার বাধ্যবাধকতা অবশ্যই পালন করতে হবে।”
গাজা নিয়ে ম্যাডোনার এই পোস্টের আগে, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ব্যান্ড ইউটু’র ভোকালিস্ট বোনো ও তার অন্যান্য সহশিল্পীরা।
গাজায় গণহত্যা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওই বিবৃতিতে ইউটু’র ভোকালিস্ট বোনো বিবৃতিতে বোনো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাস, দুই পক্ষের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ব্যান্ড ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে আছে।“
অবশিষ্ট জিম্মিদের সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করে বেনো বলেন, “আমাদের আবেদন কেউ যেন যুক্তিসঙ্গতভাবে আলোচনার মাধ্যমে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেন।”

এদিকে গাজার শিশুদের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে এনজিও ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর আঞ্চলিক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি আল-জাজিরাকে বলেন, “গাজা এখন শিশু ও তাদের স্বপ্নের জন্য কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।
প্রতিটি শিশুর জন্য এ এক দুঃস্বপ্ন, যেখান থেকে তাদের পালানোর কোনও পথ নেই। এই প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এই বিশ্বাস নিয়ে যে, বিশ্ব তাদের ত্যাগ করেছে। তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এবং দেশড়টির বেশি মানবিক সহায়তা সংস্থা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যাতে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয় এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের সুস্থ করে তোলা যায়।
বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম