০২:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
"অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।"

অপরাধী ধরতে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরুর সিদ্ধান্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৫:২৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

 

‘মব’ সৃষ্টি করে নৈরাজ্য এবং একের পর এক নৃশংসতার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

চুরি, ছিনতাই,মব সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকার যে কোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে।”

চিরুনি অভিযান কখন থেকে শুরু হতে পারে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকেই।” এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি; ‘মব’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; ‘অস্থিরতা সৃষ্টিকরী’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা; মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কারখানাগুলোতে অস্থিরতা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ের বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা বলে তিনি।

মিটফোর্ডে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “এটা অনেক দুঃখজনক ঘটনা, সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। এটা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখছে। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধ পরিকর।”

এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

গত বুধবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। ৩২ বছর বয়সী সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় পুরনো তার কেনাবেচার ব্যবসা করতেন।

নৃশংস ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন।

পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত। ওই হত্যা মামলায় নাম আসায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল ইতোমধ্যে তাদের পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে।

ওই তিন সংগঠন শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয়’ রেখেছে যাতে দেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি থাকে এবং এই অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।

তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অত্যন্ত তৎপর’ রয়েছে।

“সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে।”

ওই ঘটনায় জড়িত ১৯ জনের মধ্যে সাতজনকে র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও তিনি তথ্য দেন।

উপদেষ্টা বলেন, গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্যদের গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শৈথিল্য ছিল কিনা, তাও দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।”

‘সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও নৈতিক স্খলনে ‘ কারণেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এ বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানান।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাই।”

নির্বাচন আয়োজনের অংশীজনদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন কবে তারিখ দেয় সেটার উপর নির্ভর করছে। এটা রোজার আগে হতে পারে রোজার পরেও হতে পারে।”

‘মব’ সৃষ্টি করে নৃশংসতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মিটফোর্ডের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যে পাশে আনসার বাহিনীকে ডেকে নিয়ে আসবে সেটাও করেনি। তবে এক্ষেত্রে কাউকে দোষ দিচ্ছি না।”

অপরাধীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি আইন ন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

 

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

"অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।"

অপরাধী ধরতে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরুর সিদ্ধান্ত

আপডেট সময় ০৫:২৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

 

‘মব’ সৃষ্টি করে নৈরাজ্য এবং একের পর এক নৃশংসতার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

চুরি, ছিনতাই,মব সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকার যে কোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে।”

চিরুনি অভিযান কখন থেকে শুরু হতে পারে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকেই।” এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি; ‘মব’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; ‘অস্থিরতা সৃষ্টিকরী’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা; মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কারখানাগুলোতে অস্থিরতা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ের বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা বলে তিনি।

মিটফোর্ডে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “এটা অনেক দুঃখজনক ঘটনা, সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। এটা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখছে। যারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধ পরিকর।”

এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

গত বুধবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। ৩২ বছর বয়সী সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় পুরনো তার কেনাবেচার ব্যবসা করতেন।

নৃশংস ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন।

পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত। ওই হত্যা মামলায় নাম আসায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল ইতোমধ্যে তাদের পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে।

ওই তিন সংগঠন শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয়’ রেখেছে যাতে দেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি থাকে এবং এই অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।

তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন, এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অত্যন্ত তৎপর’ রয়েছে।

“সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে।”

ওই ঘটনায় জড়িত ১৯ জনের মধ্যে সাতজনকে র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও তিনি তথ্য দেন।

উপদেষ্টা বলেন, গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্যদের গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শৈথিল্য ছিল কিনা, তাও দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।”

‘সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও নৈতিক স্খলনে ‘ কারণেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এ বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানান।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাই।”

নির্বাচন আয়োজনের অংশীজনদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন কবে তারিখ দেয় সেটার উপর নির্ভর করছে। এটা রোজার আগে হতে পারে রোজার পরেও হতে পারে।”

‘মব’ সৃষ্টি করে নৃশংসতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মিটফোর্ডের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যে পাশে আনসার বাহিনীকে ডেকে নিয়ে আসবে সেটাও করেনি। তবে এক্ষেত্রে কাউকে দোষ দিচ্ছি না।”

অপরাধীরা গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও জামিন পেয়ে যাচ্ছেন, এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি আইন ন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

 

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম