আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে তথ্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।
অর্থপাচার রোধে বৈশ্বিক আইনি কাঠামো তৈরির আহ্বান ইউনূসের

- আপডেট সময় ০১:৩৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৪ বার পড়া হয়েছে

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ার ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান।
ন্যূনতম কর আর কঠোর আর্থিক গোপনীয়তা মেনে চলা দেশ ও ধনী দেশগুলোতে লুটের অর্থ পাচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কঠোর আইনি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ার ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান সাক্ষাতে এলে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন।
বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, “বেশিরভাগ সময় আমরা জানি চুরি হওয়া অর্থ কোন জায়গা থেকে এসেছে। তবু আমরা এটিকে বৈধ স্থানান্তর হিসেবে গ্রহণ করি এবং ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।
“বিদ্যমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার কারণে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ‘অফশোর সেইফ হেভেন’ এবং উন্নত দেশে পাচার হতে বাধা দেওয়া যায়নি। সেখানে এই চুরি হওয়া সম্পদ গ্রহণ ও বৈধতা পায়।”
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে তথ্য দেন প্রধান উপদেষ্টা।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই নীতিগুলো খুব সহজেই লুট হওয়া অর্থকে ‘অফশোর’ দ্বীপ ও ধনী দেশে স্থানান্তর করার সুযোগ দেয়।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তবে মানিলন্ডারিং বন্ধ করতে তিনি আরও কার্যকর ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’ এবং শক্তিশালী আর্থিক নিয়মকানুনের ওপর জোর দেন।
ভ্যালেরিয়ান বলেন, “আমাদের আরও কঠোর আন্তর্জাতিক নিয়ম ও সেগুলো জোরদার করা প্রয়োজন।”
কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা জেনেশুনে অবৈধ অর্থ রাখে, তারা গুরুতর ক্ষতির কারণ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে তার কণ্ঠ জোরালো করে লুটের অর্থের পাচার রোধে আইন প্রণয়নে একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম আয়োজন করতে সহায়তার আহ্বান জানান ইউনূস।
বৈঠকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
শ্রম বিষয়ক একটি জাপানি সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের কারখানার উন্নত কর্ম পরিস্থিতির প্রশংসা করেছে।
বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বিষয়ক ‘জাপানিজ পার্লামেন্টরিয়ানস লীগ’ এর প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে কর্ম পরিবেশ আরও উন্নতির কথা তুলে ধরেছে।

জাপানের ‘কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির’ সেক্রেটারি জেনারেল কেন্টা ইজুমি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন।
সাক্ষাতে ইজুমি ইপিজেডের ভেতরে ও বাইরে কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোতে ভ্রমণের সময় ইতিবাচক শক্তি অনুভব করেছি। আমরা আশা করি জাপানি কোম্পানিগুলো অবকাঠামো এবং অন্যান্য খাতে আরও বিনিয়োগ করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাপানকে বাংলাদেশের একটি ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক বহুপাক্ষিক এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র মৎস্য প্রকল্পের জন্য জাপানের সমর্থন চান মুহাম্মাদ ইউনূস। জাপানি কোম্পানিতে বাংলাদেশি ইন্টার্ন ও দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা পরিকল্পনা করেছি ১ লাখ তরুণকে জাপানে পাঠানোর। তারা ভাষা প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, ভদ্রতা শিক্ষা এবং কিছু ইতিহাস শিক্ষা পাবেন। এটি কেবল সূচনা। ভবিষ্যতে আরও অনেককে পাঠানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের যুব সমাজের জন্য সৃজনশীলতা প্রদর্শনের একটি অসাধারণ সুযোগ।”
প্রতিনিধি দলে লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস সেক্রেটারি জেনারেল হানাকো জিমি, ইনডিপেন্ডেন্ট এমপি মাকিকো ডোগোমি, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম