“শিপিং করপোরেশন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক রুটে পাঁচটি জাহাজ পরিচালনা করে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ,” বলেন নৌ উপদেষ্টা।
আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে ৫ প্রকল্পে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

- আপডেট সময় ০১:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৬ বার পড়া হয়েছে

নৌ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাঁচ প্রকল্পে অযাচিত দুই হাজার ৪৮০ কোটি টাকার ব্যয় সাশ্রয়ের কথা বলছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলছেন, ৩৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকার একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলায় বিল-নদী খননের নামে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় প্রায় ৭০ কোটি টাকা খরচও হয়ে গিয়েছিল।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি বুঝতে পেরে প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়াননি। ফলে সেখানে ২৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়।
নৌমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টার হিসাবে, এর বাইরে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ২১৪ কোটি টাকা, ৩৫ ড্রোজার প্রকল্পে ১৩০০ কোটি, মেরিন একাডেমির সিমুলেটর প্রকল্পে ১৩৩ কোটি টাকা এবং রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং প্রকল্পে ৫৬৩ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, “মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং ও ইটনা উপজেলার ধনু, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বর নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা থেকে ৭৯ শতাংশ কমিয়ে ৭১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে মোট ২৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। মোট কথা হলো এই কাজ বন্ধ। টাকা ফেরত যাবে সরকারের কাছে। প্রকল্পে কত টাকা ধরে, কত টাকা বাঁচে আর কত টাকা খরচ হয়, চিন্তা করতে পারেন!
“বিল খনন করার একটা প্রকল্প বানিয়েছে। আমি বললাম, খনন করার কী আছে। এটা তো কোনো নৌ রুট না। আমি আশ্চর্য হলাম। তখন একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করলাম। ওখানে গিয়ে দেখা গেল, কোনো চ্যানেল নেই; ঘরবাড়ি সেখানে। ৩০০ কোটি টাকা তারা সেখানে খরচ করতে চেয়েছিল। মানে হচ্ছে একটা হরিলুট। যতটুকু হয়েছে তার টাকা তো তাকে দিতেই হবে। বিলের মধ্যে এমনিতেই চার থেকে ৫ মিটার গভীরতা থাকে। এক বিল থেকে মাটি নিয়ে তারা আরেক বিলে ফেলতে গিয়ে গন্ডগোল লেগেছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই ৭৭ কোটি টাকা পে করতে হয়েছে। এরকম অনেকগুলো ইউজলেস প্রকল্প বানিয়েছে কিছু কিছু লোককে বেনিফিট দেওয়ার জন্য।”
ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহন খাতে গত এক বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন, কার্যক্রম ও উন্নয়ন সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত।
তিনি বলেন, “২০২৪-২৫ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি ৯৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি। একই সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
“চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয় করেছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৪ শতাংশ এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ৬ শতাংশ বেড়েছে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আন্তর্জাতিক রুটে পাঁচটি জাহাজ পরিচালনা করে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা বিএসসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী থেকে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌপথে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি নৌপথের ভাড়া সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়াকে নতুন নদীবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের বিচ্ছিন্ন জনপদ, যেমন কুতুবদিয়া, ভাসানচর ইত্যাদি এলাকার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। চর কুকরিমুকরি, কচ্ছপিয়া, ঢালচর, কলাতলী পথে নৌ চলাচল চালু করা হয়েছে।
দেশের নৌকেন্দ্রীক পর্যটন সুবিধা বিকশিত করার লক্ষ্যে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটনের উদ্দেশ্যে ১২৫ বছরের পুরনো স্টিমার পিএস মাহসুদ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫ জলযান প্রকল্পের আওতায় সংগ্রহ করা সী-ট্রাক/ক্রুজ শিপ চালু এবং শিমুলিয়াতে একটি গ্রিন পোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেবা সম্প্রসারণে, বাঁশবাড়িয়া (সীতাকুণ্ড)-সন্দ্বীপ (গুপ্তছড়া) রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সি-ট্রাক সার্ভিস চালু করা হয়েছে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে।
সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম