পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা অভিযানে আরও মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫৭ ছাড়িয়েছে।
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃত বাড়ছে, ত্রাণ সংকটের মুখে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা

- আপডেট সময় ০৫:৪৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৬ বার পড়া হয়েছে
আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধারে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে জীবিতদের জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। তারা খাদ্য, আশ্রয় ও ওষুধ সংকটের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো।
তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা অভিযানে আরও মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫৭ ছাড়িয়েছে। তবে সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশের বাসিন্দা আলম জান বলেন, “আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়ি ভেঙে পড়েছে, সব সম্পদ হারিয়েছি। এখন শুধু গায়ে যে কাপড় আছে, সেটাই রয়ে গেছে।”
রোববার প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৬। এটি আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পগুলোর একটি। কুনার ও নানগারহার প্রদেশে অগণিত বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
মঙ্গলবারের দ্বিতীয় দফায় ৫ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প নতুন আতঙ্ক ছড়ায়, বন্ধ হয়ে যায় উদ্ধারকাজ; পাহাড় থেকে রাস্তায় পাথর গড়িয়ে পড়ায় অনেক গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কর্তৃপক্ষের হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৪০০ মানুষ আহত হয়েছেন এবং ধসে পড়েছে ৬ হাজার ৭০০-রও বেশি বাড়ি।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ধ্বংসস্তূপে আরও অনেকে আটকে আছেন, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) জানিয়েছে, মানবিক ত্রাণ সহায়তার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
প্রাথমিক হিসাবে ৮৪ হাজার মানুষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বহু পরিবার গৃহহীন। কুনারের কিছু গ্রামে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্বজনদের খুঁজে পেতে বেঁচে যাওয়া মানুষজন খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ ঘেঁটে চলেছেন, খোঁজ পাচ্ছেন শুধু মরদেহ। কারও কারও কাঁধে বোনা খাটিয়ায় লাশ বহন করতে, আবার কারও হাতে কুঠার—নিজ হাতে কবর খুঁড়ছেন তারা।
রয়টার্সের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ময়দার বস্তাভর্তি ট্রাক আর হাতে কোদাল ধরা পুরুষেরা ছুটছেন দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোর দিকে। যেখানে হেলিকপ্টার নামতে পারেনি, সেসব জায়গায় কমান্ডো সদস্যদের নামানো হয়েছে আকাশপথে।
৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন এই দেশে উদ্ধার ও ত্রাণের সম্পদ সংকট প্রকট। কঠোর আবহাওয়াও সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশি সাহায্যে অর্থছাঁটাই এবং নারীদের প্রতি তালেবানের বিধিনিষেধ, সহায়তাকর্মীদের ওপর কড়াকড়ি—এসব আফগানিস্তানকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অন্তত ৩০ লাখ ডলারের অর্থঘাটতি রয়েছে। ওষুধ, ট্রমা কিট আর জরুরি সরঞ্জামের প্রবাহ সচল রাখতে এই অর্থ এখন খুবই জরুরি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তাদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী আছে মাত্র চার সপ্তাহের জন্য।
“শুধু তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে আফগানদের ভবিষ্যতের জন্যও দাতাদের এগিয়ে আসতে হবে,” বলেছেন নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান জ্যাকোপো ক্যারিডি।
তিনি যোগ করেন, “এই ভূমিকম্প যেন এক কঠিন সতর্কবার্তা হয় যে—এক সংকটের পর আরেক সংকটে জর্জরিত আফগানিস্তানকে একা ফেলে রাখা যাবে না।”
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম