বার্স ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন "এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে।"
‘আল্লাহ আমার সন্তানরে ফিরাইয়া দেও’

- আপডেট সময় ০৫:২৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
সেখানকার জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে ১১ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান আরিয়ান, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া শায়ান, তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানসহ আরো বহু শিক্ষার্থীর।
জরুরি বিভাগের বাইরে অপেক্ষায় আছেন এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। যাদের আহাজারিতে ভারি ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন “এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে।”
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত ও দগ্ধ হয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
সারা শরীর পুড়ে যাওয়া ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের যখন জরুরি বিভাগের ভেতরে চিকিৎসা চলছিল, বাইরে বসে তার মা মনিকা আক্তার আঁখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আল্লাহ আমার সন্তানরে আমার কাছে ফিরাইয়া দেও।”
“সকাল পৌনে আটটায় স্কুলে গেছে। দেড়টায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল, এরপর দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোচিং। সকালে ছেলেরে খাবার দিয়া দিছি, এরমধ্যে এই ঘটনা ঘটল।”
স্কুলের কাছেই তাদের বাসা, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছেলের খোঁজে স্কুলে ছুটে যান বলে জানিয়েছেন আঁখি; এরপর গিয়ে ওই মা ছেলেকে দগ্ধ অবস্থায় পান।
সেখান থেকে তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে আরিয়ানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।
উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের এই বাসিন্দা বলেন, “সকাল বেলা সুস্থ ছেলেটা বাসা থেকে বের হইল, আর এখন হাসপাতালে।”
তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানের মা ঝর্না আক্তারও জরুরি বিভাগের সামনে কাঁদছিলেন। নয়া নগরের এই বাসিন্দা বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তার ছেলেকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আর একটু পরেই ছুটি হইলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আমার আইসিইউতে।”
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইয়ুম খান বলেন, জুনিয়রদের শিফটটা সকাল থেকে শুরু হয়।
“ঘটনার সময় ক্লাসে ছিলাম। তারপর বিকট শব্দ শুনে দেখি আগুন, অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারপর ফায়ার সার্ভিস আসে।
“এক আন্টি বলেন বাবা আমার মেয়েকে একটু ধরো, তার দুই হাত পুড়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।”
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ প্রশিক্ষণ বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
স্কুলের একটি অ্যাকাডেমিক ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। অনেক দূর থেকেও সেখানে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। জ্বলন্ত উড়োজাহাজটির আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানটি একটি ভবনের গেইটে আছড়ে পড়ে। সেটি অ্যাকাডেমিক ভবন। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। আগুনে অনেকেই সেখানে দগ্ধ হয়েছে।”
দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেককে স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদের একটি অংশকে প্রাথমিকভাবে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দগ্ধদের অধিকাংশকে পাঠানো হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
মইদুল হাসান – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম