মহাকাশে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহ প্রযুক্তিগত সংকটের মধ্যেও লোভেল এবং তার ক্রুরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পেরেছিলেন।
আসল নায়কের স্মরণে ‘রুপালি পর্দার লোভেল’ টম হ্যাংকস

- আপডেট সময় ১২:৩৩:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৭ বার পড়া হয়েছে

হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে জিম লোভেল ও টম হ্যাংকস। ছবি: ক্লিনটন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি
হলিউডের চলচ্চিত্রে খুব কমন একটি শব্দগুচ্ছ ‘লিড রোল’, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে নায়ক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র। ‘ফিলাডেলফিয়া’ বা ‘ফরেস্ট গাম্প’ সিনেমার লিড রোলে অভিনয় করা টম হ্যাংকস এবার স্মরণ করলেন এমন একজনকে, যিনি ছিলেন বাস্তব জীবনের নায়ক আর তার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সদ্য প্রায়াত ইমেরিটাস নভোচারি জিম লোভেলকে অন্তিম সম্মান জানালেন, দুবার অস্কার জয়ী এ অভিনেতা, যিনি লোভেলের চরিত্রে অভিনয় করে জিতেছিলেন ১৯৯৬ সলের স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড অ্যাওয়ার্ড।
নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে হ্যাংকস লিখেছেন, “এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সাহস করেন, স্বপ্ন দেখেন, আর নেতৃত্ব দিয়ে অন্যদের এমন এক জায়গায় নিয়ে যান যেখানে আমরা নিজেরা কখনো যেতাম না।”
‘হিউস্টন, উই হ্যাভ এ প্রবলেম’
১৯৭০ সালের অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার ছিলেন নাসা নভোচারী জিম লোভেল। ওই মিশনেই ঘটেছিল নাটকীয় সব ঘটনা। সত্যি কথা হল, ওই মিশনের কারও বেঁচে থাকারই কথা ছিল না।
অথচ, মহাকাশে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহ প্রযুক্তিগত সংকটের মুখোমুখি হয়েও লোভেল ও তার সঙ্গীরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন। এ ঘটনাটি মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে বিবেচিত হয় এক অনন্য সফলতার উদাহরণ হিসেবে।
অ্যাপোলো ১৩ ছিল নাসার তৃতীয় চন্দ্রাভিযান পরিকল্পনা, কিন্তু যাত্রার শুরুতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মিশনটি দ্রুত বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়। সার্ভিস মডিউলের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে জীবন রক্ষাকারী সিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
অ্যাপোলো মিশনের যাত্রাপথ। ছবি: নাসা
এই সংকট মোকাবেলায় লোভেল ও তার সহকর্মীরা লুনার মডিউলকে অস্থায়ী জীবনরক্ষাকারী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সীমিত যন্ত্রিক সহায়তয় নাসার মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রযুক্তিগত জটিলতা পেরিয়ে আসেন। দ্রুত ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে ঘটনাটি ‘সফল ব্যর্থতা’ হিসেবে স্থান পেয়েছে বলে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
নাসার মহাকাশ মিশনের গ্রাউন্ড কনট্রোল ছিল টেক্সাসের হিউস্টনে। ভয়াবহ বিপদ টের পেয়ে অসম্ভব ঠান্ডা মাথায় লোভেল গ্রাউন্ড কনট্রোলকে বলেন – “হিউস্টন, উই হ্যাভ এ প্রবলেম”।
সিনেমার ইতিহাসেতো বটেই, যে কোনো অভিযানেই ভয়াবহ বিপদের লক্ষণ হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে লোভেলের ওই বাক্যটি। টম হ্যাংকস অভিনীত ‘অ্যাপেলো ১৩’ সিনেমারও ট্যাগ লাইন, ‘হিউস্টন, উই হ্যাভ এ প্রবলেম’।
দুই নায়কের বন্ধুত্ব
অ্যাপোলো ১৩ সিনেমায় অভিনয়ের আগে হ্যাংকস নাসার মূল মিশন কন্ট্রোল সেন্টার পরিদর্শন করেন এবং প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করেন। এ ছাড়াও, শারীরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহাকাশচারীদের ভারহীনতার অনুভূতি অর্জন করেছিলেন তিনি।
ওই সিনেমার কারণেই এ নভোচারীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল টম হ্যাংকসের। এ অভিনেতাকে নিজের ব্যক্তিগত প্নেনে নিয়ে উড়েওছিলেন লোভেল।
জিম লোভেল ছিলেন জেমিনাই ৭, জেমিনাই ১২, অ্যাপোলো ৮ এবংঅ্যাপোলো ১৩ এ চারটি মহাকাশ মিশনের নভোচারী।
অ্যাপোলো ১৩ সিনেমার পোস্টারে টম হ্যাংকস ও জিম লোভেলের অফিশিয়াল পোরট্রেইট। ছবি: ইউনিভার্সাল ও নাসা
অ্যাপোলো ৮ মিশনে তিনি পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে চাঁদের কক্ষপথে প্রথম সফলভাবে যাত্রা করেন, যা মানব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়। তার নেতৃত্বে অ্যাপোলো ১৩ মিশন মহাকাশ গবেষণায় প্রযুক্তি এবং মানবিক সহনশীলতার এক অনন্য মিশ্রণ স্থাপন করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল।
অ্যাপোলো ১৩ মিশনের এই অসাধারণ প্রযুক্তিগত এবং মানবিক কাহিনীকে বর্ণনা করে টম হ্যাংকসের অভিনয় আজও লাখ লাখ মানুষের মধ্যে মহাকাশ অভিযানের প্রতি আগ্রহ ও শ্রদ্ধা জাগ্রত করে চলেছে।
কী বললেন হ্যাংকস?
ব্যক্তিগত জীবনে টম হ্যাংকস এখনও টাইপরাইটার ব্যবহার করেন। ইনস্টাগ্রাম পোস্টেও তিনি লেখার জন্য বেছে নিয়েছেন টাইপরাইটার ফন্ট।
অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরণে অ্যাপেলো ১৩ মিশনে যখন জ্বালানী স্বল্পতার ঝুঁকিতে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মিশন চাঁদে নামবে না, বরং চাঁদকে আবর্তন করে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল কাজে লাগিয়ে গতি অর্জন করবে এবং পৃথিবীর দিকে ফিরবে।
এখন পর্যন্ত অ্যাপেলো ১৩-ই একমাত্র মানব মিশন যেটি চাঁদকে আবর্তন করেছে। ফলে, পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে যাওয়ার রেকর্ডও অ্যাপোলো ১৩ নভেচারীদের, যার নেতৃত্বে ছিলেন লোভেল।
সেই বিষয়টি স্মরণ করেই হ্যাংকস লিখেছেন, “জিম লোভেল মহাকাশে পৃথিবীর যে কারও চেয়ে দূরে গিয়েছেন, থেকেছেন দীর্ঘ সময়। তিনি ছিলেন ঠিক সেই ধরনের একজন মানুষ।
“পৃথিবীকে ঘিরে অসংখ্য ভ্রমণ আর চাঁদের খুব কাছ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, এর কোনোটাই ধনসম্পদ বা খ্যাতির জন্য ছিল না। বরং ছিল এমন চ্যালেঞ্জ, যা জীবনের গতি জোগায়।”
আবেগপূর্ণ পোস্টের শেষে হ্যাংকস লিখেছেন, “পূর্ণিমার এই রাতে তিনি যাত্রা করলেন আকাশে, মহাবিশ্বে, তারাদের দিকে।”
“নতুন অভিযানে ঈশ্বর আপনার সহায় হোন, জিম লোভেল।”
প্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম