বিতর্কিত এই বিলের কারণে ইউক্রেইনে সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের মধ্যে প্রথম সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
ইউক্রেইনে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার স্বাধীনতা কমিয়ে বিল পাস, ব্যাপক বিক্ষোভ

- আপডেট সময় ১২:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা কমিয়ে একটি বিল পাস করেছেন। বিতর্কিত এই বিলের কারণে ইউক্রেইনে সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের মধ্যে প্রথম সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
মার্শাল ল এর আওতায় ইউক্রেইনে বড় ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে মঙ্গলবার হাজার হাজার ইউক্রেইনীয় রাজধানী কিইভ ও অন্যান্য নগরীর রাস্তায় নেমে আসে।
তারা ‘লজ্জ্বা’, ‘ইউক্রেইন রাশিয়া নয়’ স্লোগান দেয়। বুধবারও আন্দোলনকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষজনকে কিইভের প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভে নামার ডাক দেয়।
নতুন আইনে প্রসিকিউটর জেনারেলকে ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো’ (নাবু) ও ‘স্পেশালাইজড অ্যান্টি-করাপশন প্রসিকিউটরস অফিস’ (স্যাপ)-এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই নিয়ন্ত্রণের ফলে সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব খর্ব হবে।
বুধবার এক ভাষণে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “দুই সংস্থাই এখনও কাজ চালিয়ে যাবে। তবে তাদেরকে রুশ প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে কাজ করতে হবে।”
তিনি ইউক্রেইনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর দক্ষতারও সমালোচনা করেন। নতুন আইনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেছেন, তার এই পদক্ষেপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার প্রভাব দূর করবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।
একদিন আগেই ইউক্রেইনের নিরাপত্তা সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো’ (নাবু) – এর দুই কর্মকর্তাকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে এবং অন্যান্য কর্মচারিদের রুশ সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখেছে।
জেলেনস্কি তার ভাষণে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থায় রুশ অনুপ্রবেশ ঘটার দাবি করেন এবং বলেন, বহু মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে, যার কোনও যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। তিনি বলেন, যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন প্রসিকিউটর জেনারেল।
তবে সমালোচকরা ভাষ্য, এই প্রক্রিয়া ইউক্রেইনের এক দশকেরও বেশি সময়ের গণতন্ত্রপন্থি এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টার সঙ্গে বেমানান।
নতুন আইনের প্রতিবাদে কিইভের পাশাপাশি লিভিভ, দনিপ্রো ও ওদেসাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। এক বিক্ষোভকারীর পোস্টারে লেখা ছিল, ‘আমরা স্বৈরশাসন নয়, ইউরোপকে বেছে নিয়েছি’। ‘আইনে ভিটো দিন’ লেখা ছিল আরেকটি পোস্টারে।
নতুন আইনটিকে অনেকেই ইউক্রেইনের কয়েক দশকের গণতান্ত্রিক শাসব্যবস্থা, সচ্ছ্বতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের পথে অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবেকই দেখছেন।
কারণ, ইউক্রেইনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যোগ দেওয়া আকাঙ্খা পূরণ হতে হলে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা পেয়ে যেতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখা জরুরি।
ইউক্রেইনের ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো ও স্পেশালাইজড অ্যান্টি-করাপশন প্রসিকিউটরস অফিস- দু’টো সংস্থাই দীর্ঘদিন থেকে দেশটির উচ্চ-পর্যায়ের দুর্নীতি দমনে ইউরোময়দান বিক্ষোভ-পরবর্তী প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে আছে।
সমালোচকরা বলছেন, নতুন আইনের ফলে এই সংস্থাদুটির স্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না এবং সংস্থাগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
সূত্র : রয়টার্স
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম