পূর্বাঞ্চলীয় ইইউ দেশগুলোতে সফরের অংশ হিসাবে বুলগেরিয়া যাওয়ার সময় উরসুলা ফন ডার লিয়েনকে বহনকারী উড়োজাহাজের জিপিএস সিগন্যাল জ্যাম করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
ইউরোপীয় কমিশন প্রধানের উড়োজাহাজে জিপিএস বিভ্রাট, রাশিয়ার দিকে আঙুল

- আপডেট সময় ০৪:১৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনকে বহনকারী উড়োজাহাজের জিপিএস ((দিকনির্ধারণ ব্যবস্থা) সিগন্যাল মাঝ-আকাশে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাটিকে ‘রাশিয়ার হস্তক্ষেপ’ হিসেবেই দেখছে ইউরোপীয় কমিশন।
কমিশনের মুখপাত্র বলেন, উরসুলা ফন ডার লিয়ের রোববার দক্ষিণ বুলগেরিয়ায় পৌঁছানোর প্রাক্কালে জিপিএস অচল (জিপিএস জ্যামিং) হয়। তবে শেষ পর্যন্ত উরসুলাকে নিয়ে উড়োজাহাজটি নিরাপদেই অবতরণ করে বুলগেরিয়ার দক্ষিণের প্লোভডিভ শহরে।
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র আরও বলেন, “বুলগেরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি এই ঘটনার নেপথ্যে রাশিয়ার স্পষ্ট হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে তারা সন্দেহ করছেন।”
বুলগেরিয়ার সরকার জানিয়েছে, স্যাটেলাইট সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নেয়, স্থলভিত্তিক নেভিগেশন ব্যবহার করে ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
ঘটনার পর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কমিশনার আন্দ্রিয়ুস কুবিলিউস ঘোষণা দিয়েছেন, ইইউ অতিরিক্ত স্যাটেলাইট নিম্নকক্ষপথে পাঠাবে, যাতে জিপিএস হস্তক্ষেপ শনাক্ত করার সক্ষমতা বাড়ানো যায়।
রাশিয়া সীমান্তবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোতে চার দিনের সফরের অংশ হিসাবে বুলগেরিয়া যাচ্ছিলেন উরসুলা। এর মাঝেই তার উড়োজাহাজে জিপিএস সিগন্যাল বিকল করার অভিযোগ উঠল।
প্রায় সাড়ে তিনবছর ধরে চলে আসা রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে কিইভের পাশে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা।
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানের উড়োজাহাজে বিঘ্নের পেছনে রাশিয়ার দিকেই আঙুল তুলছে ইউরোপ। ইউরোপীয় কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, “হুমকি আর ভয় দেখানো রাশিয়া শত্রুতামূলকভাবে নিয়মিতই করে থাকে।”
“সোমবারের জিপিএস বিভ্রাটের ঘটনা ইউক্রেইনের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনকে আরও জোরালো করবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে।”
ওদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এফটি সংবাদমাধ্যমে বুলগেরিয়ার দাবি “ভুল” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তবে বুলগেরিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেইন আগ্রাসনের পর থেকে জিপিএস জ্যামিংয়ের ঘটনা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।
গত কয়েক বছরে বাল্টিক উপকূলের আশেপাশে হাজার হাজার এ ধরনের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। রুশ অঞ্চল ঘিরে আছে তিনটি বাল্টিক দেশ লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া।
২০২৪ সালের মার্চে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপসকে বহনকারী একটি আরএএফ বিমানেরও জিপিএস ‘স্পুফিং’ হয়েছিল কালিনিনগ্রাদের আকাশে। তবে সেটি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, জিপিএস বিভ্রাট এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝ আকাশে জিপিএস অচল হলে সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগামের বিশেষজ্ঞ কিয়ের গাইলস বিবিসি-কে বলেন, “রাশিয়ার কাছ ঘেঁষে উড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কেউই মস্কোকে এই হস্তক্ষেপ বন্ধে রাজি করাতে ইচ্ছুক নয় বা সক্ষম নয়।”
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম