০৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ইন্টারনেট শাটডাউন সরকারের নতুন অস্ত্র

মিজানুর রহমান খান
  • আপডেট সময় ১২:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
  • / ২০২ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে সরকার নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ প্রয়োগ করছে। রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, গুম-খুন, মামলা, গ্রেফতার নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করছে সরকার। তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে আন্দোলন আজ চূড়ান্ত ফয়সালার পর্বে। তা দমনে এখন নতুন অস্ত্র হিসাবে ইন্টারনেট শাটডাউন প্রয়োগ করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, চেকপোস্ট বসিয়ে কিংবা মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ডিভাইস মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ। সড়কে সাধারণ মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করে তাদের মোবাইল তল্লাশির নামে গণহয়রানি করছে। ডিজিটাল অধিকারকে লঙ্ঘন করে কারেও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার বাধাগ্রস্ত করা, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বা গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ মানবাধিকারের ভয়ংকর লঙ্ঘন। জনগণের টাকায় ইসরাইলের তৈরি প্রযুক্তি এনে সরকার জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা মানে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাইরের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নত না বলেই হ্যাক হচ্ছে, তথ্য চলে যাচ্ছে। সরকারের অযোগ্যতা এবং অদক্ষতার কারণে প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ঘটেছে।

আন্দোলন-সংগ্রামের তথ্যের অবাধ প্রবাহকে সরকার ভয় পায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ কারণে গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) করেছে। এ আইনে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নন, মুক্তমনা অনেক সাংবাদিক ও স্বাধীন নাগরিকরাও শিকার হয়েছেন মিথ্যা মামলার। এ আইন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। অবিলম্বে গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করা হবে।

ইন্টারনেট শাটডাউনসহ সব ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপির মিডিয়া সেল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, আতিকুর রহমান রুমন, শাম্মী আক্তার, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, আলী মাহমুদ, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১২ জুলাই একদফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকার ইন্টারনেট সুবিধা বিচ্ছিন্ন/বিঘ্নিত করা হয়েছিল। অথচ সেদিন ওই সময়েই সরকারি দলের সমাবেশস্থলের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল স্বাভাবিক। ইন্টারনেট শাটডাউনের এটিই প্রথম ঘটনা নয়। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলোয়ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেশে ও প্রবাসের নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার লংঘন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ আগ্রহী মহলকে করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘এক্সেস-নাও’-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেট শাটডাউনের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। এর আগে চারটি দেশে (ভারতে ৮৪ বার, ইউক্রেনে ২২ বার, ইরানে ১৮ বার ও মিয়ানমারে ৭ বার) বর্তমান বিদ্রোহ অথবা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করেছে, যা তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণ বলে তারা দাবি করেছে। আমাদের প্রশ্ন-পঞ্চম স্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি কোনো যুদ্ধ চলছে? কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে ৬ বার ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে।

ইন্টারনেট শাটডাউন গুম-খুনের মতোই একটা অপরাধ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি গুমের শিকার হলে কেবল একজন হারিয়ে যান। কিন্তু কোনো স্থানে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হলে তার শিকার হয় দেশ-বিদেশের লাখো কোটি মানুষ। মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনই অনলাইন থেকে তার অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও অপরাধ। ক্রমাগতভাবে এই অপরাধ করে যাচ্ছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, ইসরাইলি প্রযুক্তি পেগাসাস তৈরি করা হয়েছিল জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে। সরকার জনগণের টাকায় সেই প্রযুক্তি কিনে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করছে। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মতো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতোমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। আবার বিরোধী রাজনীতিকদের আইডি হ্যাক করে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বারা নির্যাতন করা হচ্ছে। তার নিজের ফোন একবার গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে নেয় এবং পাসওয়ার্ড চেয়ে ফোন খুলে ক্লোন করে সব তথ্য নিয়ে যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে নিপীড়ন, জনগণের ওপর নজরদারি, ফোন কল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ব্ল্যাকমেইল করা ও কন্টেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালানোসহ নানান অপরাধ করে চলেছে সরকার। সরকার কথায় কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশের কৃতিত্ব দাবি করলেও অন্য দেশের তুলনায় সেবার অবস্থা শোচনীয়।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবা আজ শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা আর্থিক লেনদেন, শেয়ার, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, ডেটা, আউটসোর্সিং, বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মসংস্থান ও চাকরির সাক্ষাৎকারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়ে জীবনজীবিকার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। সাইবার জগতে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানানো এবং দাবি আদায়ের জন্য জড়ো হওয়ার মাধ্যম হিসাবেও ইন্টারনেট এখন গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য, যা সভা-সমাবেশ করা ও সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার হিসাবে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭ দ্বারা স্বীকৃত। ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধের মতো ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবেই ব্যক্তির নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ডিজিটাল সেবাকে বিএনপি বৈশ্বিক মানে উন্নীত করবে। রাষ্ট্র মেরামতে ঘোষিত রূপরেখার ৩০নং দফায় তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

ইন্টারনেট শাটডাউন সরকারের নতুন অস্ত্র

আপডেট সময় ১২:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে সরকার নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ প্রয়োগ করছে। রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, গুম-খুন, মামলা, গ্রেফতার নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করছে সরকার। তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে আন্দোলন আজ চূড়ান্ত ফয়সালার পর্বে। তা দমনে এখন নতুন অস্ত্র হিসাবে ইন্টারনেট শাটডাউন প্রয়োগ করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, চেকপোস্ট বসিয়ে কিংবা মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ডিভাইস মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ। সড়কে সাধারণ মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করে তাদের মোবাইল তল্লাশির নামে গণহয়রানি করছে। ডিজিটাল অধিকারকে লঙ্ঘন করে কারেও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার বাধাগ্রস্ত করা, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বা গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ মানবাধিকারের ভয়ংকর লঙ্ঘন। জনগণের টাকায় ইসরাইলের তৈরি প্রযুক্তি এনে সরকার জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা মানে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাইরের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নত না বলেই হ্যাক হচ্ছে, তথ্য চলে যাচ্ছে। সরকারের অযোগ্যতা এবং অদক্ষতার কারণে প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ঘটেছে।

আন্দোলন-সংগ্রামের তথ্যের অবাধ প্রবাহকে সরকার ভয় পায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ কারণে গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) করেছে। এ আইনে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নন, মুক্তমনা অনেক সাংবাদিক ও স্বাধীন নাগরিকরাও শিকার হয়েছেন মিথ্যা মামলার। এ আইন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। অবিলম্বে গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করা হবে।

ইন্টারনেট শাটডাউনসহ সব ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপির মিডিয়া সেল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, আতিকুর রহমান রুমন, শাম্মী আক্তার, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, আলী মাহমুদ, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১২ জুলাই একদফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকার ইন্টারনেট সুবিধা বিচ্ছিন্ন/বিঘ্নিত করা হয়েছিল। অথচ সেদিন ওই সময়েই সরকারি দলের সমাবেশস্থলের ইন্টারনেট সংযোগ ছিল স্বাভাবিক। ইন্টারনেট শাটডাউনের এটিই প্রথম ঘটনা নয়। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলোয়ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেশে ও প্রবাসের নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার লংঘন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ আগ্রহী মহলকে করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘এক্সেস-নাও’-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেট শাটডাউনের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। এর আগে চারটি দেশে (ভারতে ৮৪ বার, ইউক্রেনে ২২ বার, ইরানে ১৮ বার ও মিয়ানমারে ৭ বার) বর্তমান বিদ্রোহ অথবা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করেছে, যা তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণ বলে তারা দাবি করেছে। আমাদের প্রশ্ন-পঞ্চম স্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি কোনো যুদ্ধ চলছে? কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে ৬ বার ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে।

ইন্টারনেট শাটডাউন গুম-খুনের মতোই একটা অপরাধ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো ব্যক্তি গুমের শিকার হলে কেবল একজন হারিয়ে যান। কিন্তু কোনো স্থানে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হলে তার শিকার হয় দেশ-বিদেশের লাখো কোটি মানুষ। মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনই অনলাইন থেকে তার অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও অপরাধ। ক্রমাগতভাবে এই অপরাধ করে যাচ্ছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, ইসরাইলি প্রযুক্তি পেগাসাস তৈরি করা হয়েছিল জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে। সরকার জনগণের টাকায় সেই প্রযুক্তি কিনে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করছে। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মতো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতোমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। আবার বিরোধী রাজনীতিকদের আইডি হ্যাক করে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বারা নির্যাতন করা হচ্ছে। তার নিজের ফোন একবার গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে নেয় এবং পাসওয়ার্ড চেয়ে ফোন খুলে ক্লোন করে সব তথ্য নিয়ে যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে নিপীড়ন, জনগণের ওপর নজরদারি, ফোন কল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ব্ল্যাকমেইল করা ও কন্টেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালানোসহ নানান অপরাধ করে চলেছে সরকার। সরকার কথায় কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশের কৃতিত্ব দাবি করলেও অন্য দেশের তুলনায় সেবার অবস্থা শোচনীয়।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবা আজ শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা আর্থিক লেনদেন, শেয়ার, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, ডেটা, আউটসোর্সিং, বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মসংস্থান ও চাকরির সাক্ষাৎকারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়ে জীবনজীবিকার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। সাইবার জগতে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানানো এবং দাবি আদায়ের জন্য জড়ো হওয়ার মাধ্যম হিসাবেও ইন্টারনেট এখন গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য, যা সভা-সমাবেশ করা ও সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার হিসাবে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭ দ্বারা স্বীকৃত। ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধের মতো ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবেই ব্যক্তির নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ডিজিটাল সেবাকে বিএনপি বৈশ্বিক মানে উন্নীত করবে। রাষ্ট্র মেরামতে ঘোষিত রূপরেখার ৩০নং দফায় তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।