একজন আমেরিকানও যদি নিহত হন, সেক্ষেত্রে ট্রাম্প হয়ত চাপের মুখে এই যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হবেন।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: সবচেয়ে বাজে পরিণতি কী হতে পারে

- আপডেট সময় ০৬:৪৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েল ও ইরানের লড়াই এখনও দেশ দুটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে হচ্ছে; জাতিসংঘসহ অন্যান্য জায়গা থেকে তাদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কিন্তু তারা যদি শান্তির বাণী না শোনে; যদি যুদ্ধ আরও বেড়ে যায় এবং ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে কী ঘটতে পারে?
এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে বিবিসি, যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের লড়াইয়ের সম্ভাব্য কিছু পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়তে পারে
যুক্তরাষ্ট্র যতই অস্বীকার করুক, ইরান এটাই বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েলের হামলায় ওয়াশিংটনের সায় আছে।
ফলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে। লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় ইরাকে থাকা মার্কিন বিশেষ বাহিনীর ঘাঁটি, উপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটি ও বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন রয়েছে।
হামাস ও হিজবুল্লাহ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও ইরাকে ইরানসমর্থিত মিলিশিয়ারা এখনও সশস্ত্র এবং বেশ সক্রিয়।
এ ধরনের হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এরই মধ্যে নিজেদের কিছু কর্মী সরিয়ে নিয়েছে। সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।
কিন্তু তেল আবিব বা অন্য কোথাও একজন আমেরিকান নাগরিকও যদি নিহত হন, ডনাল্ড ট্রাম্প হয়ত তখন চাপের মুখে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন।
আবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টেনে আনার চেষ্টা করছেন, এমন অভিযোগ বেশ পুরনো।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এমন বোমারু বিমান ও বোমা রয়েছে, যেগুলো ইরানের গভীর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও ধ্বংস করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সেটি হবে বিশাল মাত্রায় উত্তেজনা বাড়ার ইঙ্গিত, যার পরিণতি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি, সেই সঙ্গে ধ্বংসাত্মক।
জড়াতে পারে উপসাগরীয় দেশও
ইরান যদি ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বড় কোনো ক্ষতি করতে না পারে, তাহলে তারা আশপাশে ইসরায়েলের মিত্রদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে।
এ অঞ্চলে লক্ষবস্তু বানানোর জন্য জ্বালানি স্থাপনার পাশাপাশি বহু অবকাঠামো রয়েছে।
এটা মনে রাখা জরুরি, ইরানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। আর ২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলা চালিয়েছিল ইরান-সমর্থিত হুতিরা।
কিছু দেশের সঙ্গে অবশ্য ইরানের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। কিছু দেশ গোপনে ইসরায়েলকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষায় সহায়তা করে।
এখন যদি উপসাগরীয় দেশগুলো হামলার শিকার হয়, তাহলে তারাও ইসরায়েলের মত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুরক্ষা চাইবে।
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংসে ইসরায়েল ব্যর্থ হলে
যদি ইসরায়েলের হামলা ব্যর্থ হয়; যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সুরক্ষিতই থেকে যায়; যদি তাদের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ধ্বংস করা না যায় এবং সেগুলো যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ে চলে যায়, তখন কী হবে?
ধারণা করা হয়, এসব ইউরেনিয়াম খুব গভীরে গোপন খনিতে লুকানো রয়েছে। ইসরায়েল হয়ত কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করতে পেরেছে, কিন্তু ইরানের প্রযুক্তি ও জ্ঞানের ভাণ্ডার ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
আবার এ হামলার মধ্য দিয়ে ইরানের মধ্যে এমন বোধও জন্মাতে পারে যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল, যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলা।
ইরানের নতুন সামরিক নেতৃত্ব আগের চেয়ে বেশি আগ্রাসী হলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে ইসরায়েল তাদের হামলা আরও জোরদার করতে পারে। এতে গোটা অঞ্চল হামলা-পাল্টা হামলার এক চক্রের মধ্যে পড়ে যাবে।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ধাক্কা
জ্বালানি তেলের দাম ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। কারণ ওই পথ দিয়ে বিশ্বজুড়ে তেলের বড় অংশ পরিবহন হয়।
আবার ইয়েমেনের হুতিরা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ তারা ইরানের মিত্র হিসেবে পরিচিত।
অনেক দেশেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে তেলের দাম আরও বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়বে, যা ট্রাম্পের শুল্কের কারণে আগে থেকেই একটা অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে।
এটাও মাথায় রাখতে হবে, তেলের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। কারণ এতে করে ইউক্রেইন যুদ্ধের জন্য তার তহবিলে কোটি কোটি ডলার যোগ হবে।
ইরানে সরকার পতনে ‘শূন্যতা’ তৈরির ঝুঁকি
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটানোর দীর্ঘদিনের যে লক্ষ্য ইসরায়েলের রয়েছে, সেটা যদি এবার সফল হয়ে যায়?
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য হল, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। তবে তিনি শুক্রবার স্পষ্ট করে বলেছেন, তার আরও বড় লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনা।
তার ভাষায়, ইরানের জনগণের ‘স্বাধীনতার পথ পরিষ্কার করা’ই তার লক্ষ্য।
ইরানে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন ঘটলে কিছু দেশের জন্য তা প্রত্যাশিত হতে পারে, বিশেষ করে কিছু ইসরায়েলির কাছে। তবে এই পতনের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
ইরাক ও লিবিয়ায় সরকার পতনের পর কী ঘটেছিল, সেটা এখনও সবার মনে আছে।
তবে সামনে কী হবে, তার ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু।
যেমন— ইরান কীভাবে এবং কতটা কঠোরভাবে ইসরায়েলকে জবাব দেবে?
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, বা আদৌ পারবে কি না?
অবশ্য এই দুটি প্রশ্নের উত্তরও নির্ভর করছে পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতিবিধির ওপর।
শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকেও হত্যা করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা অসংখ্য ছবিতে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তেহরানকে লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন পাঠায় ইরান। এরপর শুক্রবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। তাতে চার ইসরায়েলির মৃত্যু হয়। আহত হয় ৬৩ জন।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগেই তেহরানে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় ইসরায়েলে। এসব হামলায় ৭৮ নাগরিকের মৃত্যুর কথা বলছে তেহরান। আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক।