০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে ৪০ বছর ধরে ইরানের মানুষ এক ধরনের জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে, মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

ইসরায়েল এগিয়ে প্রযুক্তিতে, ‘সহ্যশক্তিতে’ ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০১:০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

 

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, তাতে এখনও কোনো পক্ষ নমনীয়তার আভাস দেয়নি। ফলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

আর দীর্ঘায়িত হলে শক্তিতে কে কোথায় এগিয়ে থাকবে, সেই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তাদের অর্থনীতিও মজবুত। তবে যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে সেই মজবুত অর্থনীতিও নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে ইরানের শক্তির জায়গা হিসেবে বিশ্লেষকরা দেশটির ‘ক্ষতি সইবার’ ক্ষমতাকে সামনে আনছেন।

তারা বলছেন, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে গত চার দশক ইরানের মানুষ যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধ নিয়ে তাদের ‘প্রস্তুতিটা আলাদা’।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, “এই যুদ্ধে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বটা ইসরায়েলের। তবে ইরানের অন্যান্য বহু শক্তি রয়েছে।”

বিষয়টি সহজ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ইরানের আকাশপথ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলছে। তবে মনে রাখতে হবে, আয়তনের দিক থেকে ইসরায়েলের চেয়ে ইরান ৭০ গুণ বড়।

“ইরানের মানুষ অনেক ক্ষয়ক্ষতি সইতে পারেন। আবার এমন অস্ত্রও তাদের রয়েছে, যা ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম।”

তেহরানসহ ইরানের কয়েকটি শহরে ১৩ জুন ভোরে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকেও হত্যা করে।

এরপর থেকেই আকাশপথে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত নুর নিউজ বলছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের ৪৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মানুষ।

ইসরায়েল বলছে, তেহরানের হামলায় তাদের ২৫ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকশ।

অধ্যাপক সেলুম মনে করেন, “এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। তাই এই যুদ্ধে হয় তাদের স্পষ্ট বিজয় অর্জন করতে হবে, নয়ত খুব দ্রুত কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করে ফেলতে হবে।”

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, “আমরা এখন এই সংঘাতের একটি সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। কারণ, কোনো পক্ষ এটিকে এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ না বললেও অস্ত্রের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের হামাস। ওই হামলায় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াইশ জনকে।

হামাসের ওই হামলার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক সেলুম বলেন, সেদিনই স্পষ্ট হয় যে, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরাস্ত করা অসম্ভব নয়। আর ইরানিরা এখন সেই কৌশলই খাটাচ্ছে।

“এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা ইসরায়েলের স্বার্থে হবে না। ইসরায়েল এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালাতে পারবে না। কারণ বেশির ভাগ ইসরায়েলি এখন বাঙ্কারে; তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অন্যদিকে ইরাকের সঙ্গে জড়ানোর পর থেকে ইরান অন্তত ৪০ বছর ধরে ‘জরুরি অবস্থার’ মধ্যে রয়েছে। লেবানন ও সিরিয়াতে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

“নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যাওয়া ইরানের অর্থনীতিও ইসরায়েল থেকে অনেকটা আলাদা। সব কিছু মিলিয়ে ইরানের প্রস্তুতিটা আলাদা। তাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ভিন্নধর্মী দুটি দেশ একে অপরের গলা চেপে ধরেছে।”

 

ইসরায়েলে ইরানের হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নয় দিনের এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইসরায়েলের অর্থনীতি হয়ত ভেঙে পড়বে না, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন , ইসরায়েল ও আমেরিকার ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা শুধু মুখ্য কারণ নয়—মূল লক্ষ্য হলো ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’, অর্থাৎ ক্ষমতা পরিবর্তন। খামেনির ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ অথবা বিকল্প হিসেবে তার ‘অপসারণ’ বা ‘হত্যা’—এই হলো তাদের চাওয়া।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কাউন্সেলের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক পরিচালক আহমেদ হিলাল বলেন, “ইসরায়েলের আর্থিক মজুদ ও সুরক্ষা বলয় বেশ শক্তিশালী।

“তাই বলে কি তারা ভুগছে না? অবশ্যই ভুগছে। দেশটির ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাদের অর্থনীতিটাই এমন, যা যুদ্ধ মাথায় রেখেই সব হিসাবনিকাশ করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত যেখানে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।

“তাদের ঋণের পরিমাণ, অর্থাৎ ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং তাদের অর্থনীতি আঘাত পেয়েছে, তবে এটি এখনও কোনো সংকটে পড়েনি।”

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে ৪০ বছর ধরে ইরানের মানুষ এক ধরনের জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে, মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

ইসরায়েল এগিয়ে প্রযুক্তিতে, ‘সহ্যশক্তিতে’ ইরান

আপডেট সময় ০১:০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

 

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, তাতে এখনও কোনো পক্ষ নমনীয়তার আভাস দেয়নি। ফলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

আর দীর্ঘায়িত হলে শক্তিতে কে কোথায় এগিয়ে থাকবে, সেই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তাদের অর্থনীতিও মজবুত। তবে যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে সেই মজবুত অর্থনীতিও নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে ইরানের শক্তির জায়গা হিসেবে বিশ্লেষকরা দেশটির ‘ক্ষতি সইবার’ ক্ষমতাকে সামনে আনছেন।

তারা বলছেন, ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে গত চার দশক ইরানের মানুষ যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধ নিয়ে তাদের ‘প্রস্তুতিটা আলাদা’।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, “এই যুদ্ধে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বটা ইসরায়েলের। তবে ইরানের অন্যান্য বহু শক্তি রয়েছে।”

বিষয়টি সহজ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল ইরানের আকাশপথ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলছে। তবে মনে রাখতে হবে, আয়তনের দিক থেকে ইসরায়েলের চেয়ে ইরান ৭০ গুণ বড়।

“ইরানের মানুষ অনেক ক্ষয়ক্ষতি সইতে পারেন। আবার এমন অস্ত্রও তাদের রয়েছে, যা ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম।”

তেহরানসহ ইরানের কয়েকটি শহরে ১৩ জুন ভোরে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকেও হত্যা করে।

এরপর থেকেই আকাশপথে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত নুর নিউজ বলছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের ৪৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মানুষ।

ইসরায়েল বলছে, তেহরানের হামলায় তাদের ২৫ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকশ।

অধ্যাপক সেলুম মনে করেন, “এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। তাই এই যুদ্ধে হয় তাদের স্পষ্ট বিজয় অর্জন করতে হবে, নয়ত খুব দ্রুত কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করে ফেলতে হবে।”

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, “আমরা এখন এই সংঘাতের একটি সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। কারণ, কোনো পক্ষ এটিকে এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ না বললেও অস্ত্রের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের হামাস। ওই হামলায় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াইশ জনকে।

হামাসের ওই হামলার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক সেলুম বলেন, সেদিনই স্পষ্ট হয় যে, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরাস্ত করা অসম্ভব নয়। আর ইরানিরা এখন সেই কৌশলই খাটাচ্ছে।

“এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা ইসরায়েলের স্বার্থে হবে না। ইসরায়েল এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালাতে পারবে না। কারণ বেশির ভাগ ইসরায়েলি এখন বাঙ্কারে; তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অন্যদিকে ইরাকের সঙ্গে জড়ানোর পর থেকে ইরান অন্তত ৪০ বছর ধরে ‘জরুরি অবস্থার’ মধ্যে রয়েছে। লেবানন ও সিরিয়াতে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী সক্রিয় রয়েছে।

“নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যাওয়া ইরানের অর্থনীতিও ইসরায়েল থেকে অনেকটা আলাদা। সব কিছু মিলিয়ে ইরানের প্রস্তুতিটা আলাদা। তাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, ভিন্নধর্মী দুটি দেশ একে অপরের গলা চেপে ধরেছে।”

 

ইসরায়েলে ইরানের হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: রয়টার্স।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নয় দিনের এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইসরায়েলের অর্থনীতি হয়ত ভেঙে পড়বে না, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন , ইসরায়েল ও আমেরিকার ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা শুধু মুখ্য কারণ নয়—মূল লক্ষ্য হলো ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’, অর্থাৎ ক্ষমতা পরিবর্তন। খামেনির ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ অথবা বিকল্প হিসেবে তার ‘অপসারণ’ বা ‘হত্যা’—এই হলো তাদের চাওয়া।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কাউন্সেলের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক পরিচালক আহমেদ হিলাল বলেন, “ইসরায়েলের আর্থিক মজুদ ও সুরক্ষা বলয় বেশ শক্তিশালী।

“তাই বলে কি তারা ভুগছে না? অবশ্যই ভুগছে। দেশটির ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাদের অর্থনীতিটাই এমন, যা যুদ্ধ মাথায় রেখেই সব হিসাবনিকাশ করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত যেখানে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।

“তাদের ঋণের পরিমাণ, অর্থাৎ ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং তাদের অর্থনীতি আঘাত পেয়েছে, তবে এটি এখনও কোনো সংকটে পড়েনি।”

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম