এমন পতনের জন্য ‘পূর্বসুরীদের’ রেখে যাওয়া ‘উত্তরাধিকারকে’ দায়ী করেছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ইসলামী ব্যাংকের মুনাফায় ধস, দীর্ঘদিন বাদে ‘নো ডিভিডেন্ড’

- আপডেট সময় ০১:১৪:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে
আগের ’অনিয়মের’ ঋণের ’প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরায়’ বড় ধরনের নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে গিয়ে মুনাফায় ধস নেমেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির; যেটি এবার বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার ডিএসইতে লভ্যাংশ ঘোষণার এ তথ্য দিয়েছে বেসরকারি খাতের বৃহত্তম ব্যাংকটি। ২০২৩ সালের জন্য ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
সবশেষ ২০২৪ আর্থিক বছরের হিসাবে দেখা গেছে, এক বছরে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির আয় কমেছে প্রায় ৮৩ শতাংশ।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির মুনাফায় এমন পতনের জন্য ‘পূর্বসুরীদের’ রেখে যাওয়া ‘উত্তরাধিকারকে’ দায়ী করেছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে বদলে আসে। আগের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষেও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। পরে পরিবর্তন আসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও।
চলতি অগাস্টের শুরুতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন ওমর ফারুক, যিনি ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের সেপ্টম্বরে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আবার ইসলামী ব্যাংকে ফিরে আসেন।
মুনাফায় ধস নামা প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘সব অনিয়মকে কারপেটের নিচ থেকে তুলে আনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে। এটা পূর্বসূরীদের লিগ্যাসি বলতে পারেন। সব ক্লিন করেছি, কোনো কিছুই বাদ রাখা হয়নি। তাতেই অনেক ঋণকে খেলাপি দেখাতে হয়। এজন্য আমাদের প্রভিশন বেড়ে গেছে, আয় কমে গেছে।’’
নাম প্রকাশ না করে ইসলামী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, অনিয়ম সংক্রান্ত ঋণের ৯০ শতাংশই শনাক্ত করে খেলাপি দেখানো হয়েছে। বাকিটা এ বছর দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে পর্ষদের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, মন্দমানের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে শতভাগ প্রভিশন কেটে রাখতে হয়।
মুনাফা হল কত
২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) আয় কমে হয় ৬৮ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস কমে ৩ টাকা ২৭ পয়সা বা ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯৫ পয়সা।
ডিএসইতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা হচ্ছে ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। এ হিসাবে ব্যাংকটি ২০২৪ সালে মুনাফা করেছে ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৫২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
আগের বছর ২০২৩ সালে মুনাফা করে ৬৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার।
পাঁচ বছর আগেও ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৫৪৮ কোটি টাকা। পরের দুই বছর করোনা মাহমারীর ধাক্কায় মুনাফা সামান্য কমে ৪৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং ৪৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়।
এরপর ২০২২ সালে নিট মুনাফা বেড়ে হয় ৬১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণও কমেছে। ২০২৪ সালে শেয়ার প্রতি সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৪ টাকা ৩৬ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৮৮ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৪ পয়সা।
আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি সম্পদ ছিল ৪৫ টাকা ২৪ পয়সা।
অবশ্য নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়েছে ব্যাংকটির। ২০২৪ সালে শেয়ার প্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ হয় ৫৭ টাকা ৯০ পয়সা। তা আগের বছরে ছিল ঋণাত্বক ১০ টাকা ৬৩ পয়সা।
এ বিষয়ে এমডি ওমর ফারুক বলেন, ‘‘আমাদের নগদ অর্থ সংকট অনেক কেটে গেছে। এটা আমাদের অগ্রগতি। বলতে পারেন, নেগেটিভ থেকে ইউটার্ন। আয় ও সম্পদ কমে গেলেও এই সূচকে আমরা ভালো করেছি।’’
মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম