প্রাণে বাঁচা একমাত্র যাত্রী রমেশ বলছেন, এখনও তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না কীভাবে বেঁচে ফিরলেন।
উড়োজাহাজের ১১এ আসন কি তাহলে সবচেয়ে নিরাপদ?

- আপডেট সময় ০৯:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / ৮ বার পড়া হয়েছে
ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৪২ আরোহীর মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন মাত্র একজন, যিনি উড়োজাহাজটির ১১এ নম্বর আসনে ছিলেন।
ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় তার বেঁচে ফেরার ঘটনা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। উড়োজাহাজের ১১এ আসন সবচেয়ে নিরাপদ কিনা, সে কথাও বলছেন কেউ কেউ।
হাসপাতালে ভর্তি বিশ্বাস কুমার রমেশের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার গল্প তার মুখ থেকেই শোনার চেষ্টা করছে সংবাদমাধ্যমগুলো। যদিও রমেশ নিজেই বলেছেন, তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না কীভাবে বেঁচে ফিরলেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনি হেঁটে বের হয়ে এসেছেন।
আর উড়োজাহাজের ১১এ আসন নিরাপদ কিনা, সেই প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর উত্তরে সোজাসুজি কিছু বলা যায় না।
কারণ, উড়োজাহাজগুলোর আসন বিন্যাসে অনেক ভিন্নতা থাকে। দুর্ঘটনার ঘটনাগুলোও একটা থেকে আরেকটা আলাদা। আর দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার বিষয়টি নির্ভর করে জটিল নানা সমীকরণের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন’ এর পরিচালক মিচেল ফক্স রয়টার্সকে বলেন, “প্রতিটি দুর্ঘটনা আলাদা। আসনের অবস্থানের ওপর বেঁচে থাকার সম্ভাবনার ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব।”
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা রমেশ বলছেন, লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এয়ার ইনডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারে তার ১১এ আসনটি জরুরি বহির্গমন গেইটের কাছে ছিল। বৃহস্পতিবার উড়োজাহাজটির দুর্ঘটনার পর তিনি ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
বহির্গমন গেইটের কাছে বসলে অবশ্যই তা দুর্ঘটনার সময় কারও বের হয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু সেটি সবসময় ১১এ আসন হবে না, কারণ উড়োজাহাজের কয়েকডজন আসনের বিন্যাসে ভিন্নতা থাকতে পারে।
সিডনিভিত্তিক অ্যাভল অ্যাভিয়েশন কনসাল্টিংয়ের চেয়ারম্যান রন বার্টস বলেন, “এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেহেতু সেই যাত্রী জরুরি বহির্গমন গেইটের কাছে ছিলেন, সেহেতু আসনটি স্পষ্টত সেদিনের জন্য সবথেকে নিরাপদ আসন ছিল।
“কিন্তু আসনটি সবসময় ১১এ হবে না; কেবল বোয়িং ৭৮৭ এর আসন বিন্যাসের বেলায় সেটি হবে ১১এ নম্বর আসন।”
১৯৭১ সাল থেকে সংঘটিত দুর্ঘটনার ওপর ২০০৭ সালের পপুলার মেকানিক্সের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উড়োজাহাজের পেছনের দিকের যাত্রীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, উড়োজাহাজের ডানার অংশটি আরও স্থিতিশীলতার সুযোগ তৈরি করে।
রন বার্টসের মতে, রমেশের মত বহির্গমন গেইটের কাছে বসলে কেউ দুর্ঘটনার পর সবার আগে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। তবে দুর্ঘটনার পর কোনো কোনো বহির্গমন গেইট কাজ করে না। দুর্ঘটনার পর এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজটির বিপরীত অংশ ভবনের দেয়ালের কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ওড়ার মাঝপথে একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের একটি প্যানেল ভেঙে ফাঁক তৈরি হয় এবং পাশের আসনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৌভাগ্যবশত সেসময় সেখানে কেউ বসে ছিল না এবং ওই ঘটনায় কোনো প্রাণহানিও হয়নি।
করিডোরের পাশে বসলে সেটি কাউকে দ্রুত বের হয়ে আসার সুযোগ দিতে পারে। কিন্তু তাতে মাথার ওপরে ব্যাগপত্র পড়ার ঝুঁকিও বেশি। আর উড়োজাহাজে এ বিষয়টিই বেশি ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড়োজাহাজের যাত্রা শুরুর আগে সচেতনতা ও নিরাপত্তামূলক নির্দেশনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া বেঁচে ফেরার সম্ভবত সবথেকে ভালো উপায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে জাপান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এয়ারবাস এ৩৫০ ও কোস্ট গার্ড উড়োজাহাজের সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার পরিস্থিতিতে ব্যাগ ফেলে যাওয়াসহ কেবিন ক্রুদের সেসময়ের পরামর্শ এয়ারবাস এ৩৫০ এর ৩৭৯ যাত্রীর প্রাণে বাঁচতে ভূমিকা রাখে।
ক্রুরা যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলো দিয়ে থাকেন। যেমন- কীভাবে দ্রুত সিটবেল্ট ভালোভাবে বাঁধতে হবে, দুর্ঘটনার পরিস্থিতিতে কীভাবে বসতে হবে এবং উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে।
সাধারণ কৌশল হল উড়োজাহাজের বহির্গমন গেইট ও নিজের আসনের মাঝের আসন সারিগুলো গুণে রাখা। কারণ কেবিন যদি ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং কিছু দেখা না যায়, তখন বের হয়ে আসার জন্য এটি কাজে লাগেবে।
‘ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশন’ এর পরিচালক মিচেল ফক্স বলছেন, দুর্ঘটনা সত্ত্বেও উড়োজাহাজের নকশা যাত্রীদের হেঁটে বের হয়ে আসার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। যেমন উড়োজাহাজের মেঝেতে আলোকসজ্জা করা, আগুন শনাক্ত ও নিভিয়ে ফেলার প্রযুক্তি ব্যবহার, কম দাহ্য উপকরণ দিয়ে কেবিন তৈরি এবং জরুরি বহির্গমনের পথ উন্নত করা।
তিনি বলেন, “উড়োজাহাজের কেবিন নকশায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা মাটিতে বা মাটির কাছাকাছি দুর্ঘটনার সময় বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।”