এটা তাদের পতনযাত্রা: ওবায়দুল কাদের

- আপডেট সময় ০২:৪৩:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
- / ১৩০ বার পড়া হয়েছে
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন গেট থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ির ৩২ নম্বর বাসভবন পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথটাই যেন পরিণত হয়েছিল অবিচ্ছিন্ন এক মিছিলে। মঙ্গলবার শান্তি শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামিয়ে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সুবিশাল এই শোভযাত্রা ঘিরে পুরো এলাকায় আনন্দমুখর ও নির্বাচনী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দলের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হাজার হাজার মানুষের গগণবিদারী স্লোগানে সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রাজপথে মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশে যত শয়তানের দল আছে, তাদের ঠিকানা বিএনপি মন্তব্য করে বলেছেন, বিএনপি যতই মারামারি, পাল্টাপাল্টি, হুমকি দিক না কেন, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বে না আওয়ামী লীগ। বিএনপির পদযাত্রাকে ‘পরাজয় যাত্রা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির ‘পতন যাত্রা’ শুরু হয়েছে। ওদের সব দল, সব জোট, আন্দোলন ভুয়া। এই ভুয়া আন্দোলনের পরাজয় অনিবার্য। তাদের বিজয় যাত্রা বিফলে যাবে। আর বিএনপির ওপর ভর করে কোনো লাভ নেই, বিএনপি ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না।
বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সব জেলা ও মহানগরীতে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ ও শোভযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে খোলা ট্রাকের মঞ্চে সমাবেশ শেষে সুবিশাল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড হয়ে ধানম-ির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
টানা দু’দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার সাতরাস্তা মোড়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শেষে শোভযাত্রা বের করবে।
একই সঙ্গে আজ রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত সব জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ ও শোভযাত্রা বের করবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ শেষে ঢাকায় সাতরাস্তা মোড় থেকে মহাখালী পর্যন্ত সুবিশাল শোভযাত্রা বের করবে আওয়ামী লীগ। এখানেও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজমসহ মহানগর নেতারা। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাদ্য-বাজনার তালে তালে হাতি-ঘোড়া, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিশাল বিশাল ছবি, রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা আর পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেসওয়েসহ সরকারের গত ১৪ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ছবি নিয়ে বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানার নিয়ে সুবিশাল এই গণশোভাযাত্রায় নেতাদের কণ্ঠে ছিল আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থেকেই অপশক্তিদের সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা এবং জনগণের ভোটে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয় নিশ্চিত করার শপথ।
একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যয়ের পাশাপাশি লাখো মানুষের কণ্ঠে ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’- এই স্লোগানে স্লোগানে মুখর ছিল রাজধানী বিভিন্ন রাজপথ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের রাস্তায় এত মানুষের স্থান সংকুলান হবে না- এটা আঁচ করতে পেরে মঞ্চের চতুর্দিকে প্রায় এক কিলোমিটার পথেই শত শত মাইক টাঙিয়ে দেয় আয়োজকরা। শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশটিও রীতিমতো বিশাল জনসভায় রূপ নেয়। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে দুটি খোলা ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ বানানো হয়। বিকেল সাড়ে তিনটায় শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু তার আগেই চতুর্দিকে অসংখ্য মিছিলের স্রোত নামে। দুপুর ১টার পর থেকে নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে বাদ্য বাজনায় পিকআপ, মিনি ট্রাক, ঘোড়ার গাড়িসহ উৎসবমুখর পরিবেশে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশে যোগ দেয়।
বিকেল পাঁচটার সামান্য আগে শোভাযাত্রা শুরুর আগে একদিকে পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্যভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ-কাঁটাবন পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মিছিলের ¯্রােতে হোটেল শেরাটন, কাটাবন, শাহবাগের চতুর্দিকেও শুধু মানুষ আর মানুষ। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শোভযাত্রার অগ্রভাগ যখন বঙ্গবন্ধুর ধানম-ির ৩২ নম্বর বাসভবন পৌঁছায়, তখনো পশ্চাৎভাগ শাহবাগ মোড় পার হতে পারেনি। বিকেল পাঁচটায় শোভযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হতে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা বেজে যায়। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে আসা বিশাল বিশাল মিছিল নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ে। মানুষের ¯্রােতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চারিদিকে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
সমাবেশে নেতারা যা বলেন ॥ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের শত উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে গোলামাল করবেন না। আমি সবাইকে বলছি, আমাদের ধৈর্য ধরার সময়। আমরা বিজয়ী হব, আমরা কেন গোলমাল করব? আমরা বিজয়ী হব, পরিবেশ যত শান্ত থাকবে, আমাদের তত সুবিধা। কাজেই পরিবেশ যাতে অশান্ত না হয়। কারও উস্কানিতে আপনারা সাড়া দেবেন না। চুপচাপ নিজেদের প্রোগ্রাম চালিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) গায়ে পরে ঝগড়া বাঁধাতে চাইবে। ভরা কলসি নড়ে না। নড়ে খালি কলসি। বিএনপির কলসি খালি হয়ে গেছে। তাই ওই কলসি নড়ছে। আমাদের শেখ হাসিনার কলসি উন্নয়নের কলসি। ভরা কলসি, এই কলসি নড়ে না। আপনারা কেন নড়বেন? কেউই নড়বেন না। কাউকে কিছু বলবেন না। কেউ অন্যায় করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। আমরা আমাদের পার্টির কর্মীদের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কর্মী বানাতে চাই। পাল্টাপাল্টির দরকার নাই। আমাদের ওপর আক্রমণ হলে ওই পরিস্থিতিই বলে দেবে, আমরা কি করব? তখন কার কি কর্তব্য বলা হবে। তবে নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। বিশৃঙ্খলা তারাই করতে চায় যারা ইলেকশনে হেরে যাবে। হারু পার্টি গোলমাল করবে। আমরা জেতা পার্টি কেন গোলমাল করব?
বিএনপির আন্দোলনকে ভুয়া আখ্যায়িত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভুয়া। ওদের সব কথা ভুয়া। ওদের জোট ভুয়া। ওদের আন্দোলন ভুয়া। এই ভুয়া আন্দোলনের পরাজয় অনিবার্য। বিজয় যাত্রা তাদের বিফলে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে বিএনপি কী পেয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের (বিএনপি) কি দিয়ে গেছে? তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে গেছে? শেখ হাসিনার পদত্যাগ দিয়ে গেছে? তাদের কাছে দাবি করেছিলেন, কিন্তু কি দিয়ে গেছে? আমেরিকা কি দিয়ে গেছে? বিএনপি ভেবেছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগ আমেরিকানরা চাইবে। তারা এলো, চলে গেল, দিয়ে গেল বিএনপিকে একটা ঘোড়ার ডিম, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ের প্রতিনিধিরাও দিল ঘোড়ার ডিম।
পবিত্র সংবিধান থেকে আওয়ামী লীগ এক চুলও নড়বে না স্পষ্ট জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুলরা আজ কী বলেছেন? তাদের পদযাত্রা নাকি গণযাত্রা, বিজয়যাত্রা। আসলে তাদের পদযাত্রা পরাজয় যাত্রা, এটি তাদের পতন যাত্রা। তত্ত্বাবধায়ক হবে না। পার্লামেন্টের বিলুপ্তি হবে না। শেখ হাসিনা পদত্যাগ কররার প্রশ্নই ওঠে না। দুনিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিএনপিকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, বিএনপির কথায় কি শেখ হাসিনা সরে যাবেন? যতই মিথ্যাচার করেন, বিষোদগার করেন, কোনো লাভ হবে না। আমরা আমেরিকানদের বলেছি, ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বলেছি, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে আমরা শান্তি চাই, নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের পরে আমরা শান্তি চাই।
তত্ত্বাবধায়ক কেউ চায় না, চায় বিএনপি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কারণ এরা মনে করছে ২০০১ আর ২০০৬ সাল; এই দুই সময়ের মতো তাদের দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আসবে। ওই সরকার দিয়ে ইলেকশনে করে তারা জিতে যাবে। বিএনপির সেই আশার গুঁড়েবালি। তারা যা চেয়েছে কোনোদিনও হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক আদালত মেরে ফেলেছে। আমরা কিছু করিনি। তত্ত্বাবধায়ক আমরা বাতিল করিনি। বাতিল করেছে দেশের উচ্চ আদালত। ওরা তো আদালত মানে না, আইন মানে না, বিচার মানে না। নিজের পক্ষে না হলে কিছুই মানে না। বিএনপি মার্কা তত্ত্বাবধায়ক আমরা চাই না। বিএনপি মার্কা নির্বাচনকালীন সরকার আমরা মানি না।
বিএনপিকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দফা আমাদেরও এক একটা আছে। আমাদের দফা বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধানে যা লেখা আছে সেটাই আমরা নির্বাচনে প্রয়োগ করব। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই বাংলাদেশে নির্বাচন করবে। এর বাইরে এক চুলও আমরা নড়ব না। যত কিছুই করেন। মারামারি-পাল্টাপাল্টি, যতই হুমকি দেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি-মানুষের পার্টি, বঙ্গবন্ধুর পার্টি। শেখ হাসিনার পার্টি, এই পার্টি কারো কাছে মাথা নত করে না।
আবারও খেলা হবে স্লোগান তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে যত শয়তানের দল আছে, বাংলাদেশের সব শয়তানের দলের আসল ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। ৩৬টা দল মিলিত হয়েছে, কয়দিন থাকবে? আগে ছিল ৫৪। নামতে নামতে এখন ৩৬! কয়দিন বলে ৩৭ আবার বলে ৩৬। দফা একটা, আবার বলে ৩২টা। তাদের দফার ঠিক নাই, ঐক্যের ঠিক নেই। আজ এক ঐক্য, কাল আরেক ঐক্য গড়ে উঠবে।
রাষ্ট্র মেরামত বিএনপিকে করতে হবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি বিদ্যুতের নামে জনগণকে খাম্বা দিয়েছে। এটা হলো তাদের মেরামত। তাই বলব বিএনপির বিএনপির ওপর ভর করবেন না। বিএনপি ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। এসময় তিনি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, একদিনে একশ’টি সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধন করাসহ উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মির্জা ফখরুল নির্বাচনের সময় জনগণের সামনে কী নিয়ে দাঁড়াবেন? কী আছে তাদের আমলের অর্জন?
তিনি বলেন, আগামী মাসে আরও একশ’ সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। সামনের কয় মাস উদ্বোধন আর উদ্বোধন। ওই যে গাজীপুরের রাস্তা, ওই রাস্তাও এর মধ্যে উদ্বোধন হয়ে যাবে। যেখানে বাস র্যাপিড ট্রানজিট। তারপরও তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা সতর্ক থাকবেন। আপনারা ধৈর্য ধরবেন। আওয়ামী লীগের কর্মীদের বলব, তারা (বিএনপি) বুঝে গেছে আগামী ইলেকশনে জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপির মির্জা ফখরুলরা বুঝে গেছে গতবারের মতো এবারও হারবে। এখন ফখরুলরা বলে কি আওয়ামী লীগ ৩০টার বেশি সিট পাবে না! কয়েকদিন আগে বলেছে ১০টা। যাক ফখরুল সাহেব ধন্যবাদ। ২০টা এর মধ্যে বেড়ে গেছে। এখন বলে ৩০টা। আমাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই ৩০টা (আসন) আপনাদের দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে পাবলিক দেখাইয়া দিছে ৩০ সিট বিএনপির আর বাকি সিট শেখ হাসিনার। তাই এই দল ভুয়া। ওদের সব কথা ভুয়া। ওদের জোট ভুয়া। ওদের আন্দোলন ভুয়া। এই ভুয়া আন্দোলনের পরাজয় অনিবার্য। বিজয় যাত্রা তাদের বিফলে গেছে।
শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে, বিশেষ করে বৃদ্ধদের সঙ্গে আমাদের তরুণরা যেভাবে মিছিলে নামছে, বিএনপির কোনো উপায় নেই। এই তরুণরা প্রথমবার তারা ভোটার হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে এবারে ভোট দেবে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিএনপি নাকি ডিজিটাল করবে। বিএনপির সেই ৩০ সালের স্বপ্ন ডিপ ফ্রিজে আবদ্ধ হয়ে আছে। এখন আর বলে না। জানে যে করতে পারবে না। তাদের ২০৩০ সালের স্বপ্ন ভুয়া। এই দলের সব স্বপ্ন ভুয়া। হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কত জল-বিএনপির অবস্থা হয়েছে তাই মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। আবার তারা দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করেছে, কারণ এটাই তাদের চরিত্র। তবে বিএনপি যদি আগামী নির্বাচন বানচাল করার কোনো চেষ্টা করে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে- তবে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকেই অপশক্তিদের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করা হবে।
সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে, সেই নির্বাচনে বিজয়ী নতুন সরকারের হাতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হস্তান্তর করবে- এটাই সাংবিধানিক পথ। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন ও নির্বাচনে পরাজিত করতে হবে।
অপর সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপিসহ তাদের সহযোগীরা আবারও দেশে আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের সেই সুযোগ আর দেবে না, আগুনসন্ত্রাসীদের রাজপথেই দাঁতভাঙা জবাব দেবে। এরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করছে। এই অপশক্তি কোনোদিনই সফল হবে না। আগামী নির্বাচন, আন্দোলন সবক্ষেত্রেই পরাজিত হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির আন্দোলন জনস্বার্থে নয়, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী, লুটেরা, জঙ্গি, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এই পাকিস্তানি আইএসআইয়ের এজেন্টদের বিরুদ্ধে জনগণ আজ ফুঁসে উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের শান্তি সমাবেশ চলতেই থাকবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি ২০১৪, ১৫ ও ১৮ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তারা (বিএনপি) আবারও সেই পুরনো চরিত্রে ফিরে এসেছে। এজন্য আমাদেরকে শান্তি সমাবেশ করতে হচ্ছে।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত আবারও ষড়যন্ত্র করছে। আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকেই ওরা প্রত্যাখ্যাত হবে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আবারও উন্নয়নের সরকার কায়েম করব।