২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ বার স্টারশিপ উৎক্ষেপণ করেছে স্পেসএক্স। প্রতিটি ফ্লাইট থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা।
এ পর্যন্ত কতবার বিস্ফোরিত হল স্পেসএক্সের স্টারশিপ?

- আপডেট সময় ০১:৪৯:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে
স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেটের প্রযুক্তির কথা ২০১৯ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন ধনকুবের ও মহাকাশ কোম্পানিটির প্রধান ইলন মাস্ক। স্টারশিপ দুই স্তরের রকেট, যার একটি সুপার হেভি বুস্টার ও আরেকটি স্টারশিপ ক্রাফট।
স্পেসএক্সের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণ প্রযুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্টারশিপ। এর পে-লোড বা ওজন বহনের সক্ষমতা একশ থেকে দেড়শ টনের মধ্যে, যা ভবিষ্যতে একসঙ্গে একশ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রহযাত্রায় পাঠাতে পারবে। এ প্রযুক্তি মহাকাশযাত্রায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট বিজিআর।
পুরোপুরি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এ রকেটটিকে স্পেসএক্স এমনভাবে তৈরি করেছে যেন মিশন শেষ হওয়ার পর পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় এটিকে ‘চপস্টিকের’ মতো ধরার মাধ্যমে দ্রুত পুনরায় যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা যায়। ফলে রকেটটির বড় ধরনের মেরামত বা সংস্কারের প্রয়োজন নেই।
এত বড় প্রযুক্তির অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। এর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ২০২৫ সালের ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত ১০টি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ শেষ করেছে স্টারশিপ। তবে স্পেসএক্স এখনও নির্ধারণ করেনি রকেটটির কতগুলো টেস্ট ফ্লাইট করবে তারা।
প্রতিটি রকেট উৎক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্টারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা। কিছু উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হলেও সেগুলো সার্বিকভাবে প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। কারণ, নিজেদের প্ল্যাটফর্ম উন্নয়নের পুরো প্রক্রিয়াতেই ব্যর্থতাকে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়েছে স্পেসএক্স। তাদের দর্শন হচ্ছে, ‘দ্রুত ব্যর্থ হও, দ্রুত শেখো’।
যখনই কোনো স্টারশিপ বিস্ফোরণে ধ্বংস হয় তখন স্পেসএক্স সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী রকেট সংস্করণকে আরও উন্নত করে তোলে। ফলে স্বাভাবিকাবেই প্রশ্ন আসে এখন পর্যন্ত কতবার ‘ভয়াবহ ধ্বংসের’ মুখে পড়েছে স্টারশিপ?
চলুন দেখে নেওয়া যাক এখন পর্যন্ত কতগুলো ব্যর্থ উৎক্ষেপণের মুখে পড়েছে রকেটটি—
এ পর্যন্ত ১০টি মিশন চালিয়েছে স্পেসএক্স
২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ বার স্টারশিপ উৎক্ষেপণ করেছে স্পেসএক্স। প্রতিটি ফ্লাইট থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। তবে এর মধ্যে ৬টি মিশনে স্টারশিপ ‘ভয়াবহভাবে ধ্বংস’ হয়েছে।
স্টারশিপের প্রথম ফ্লাইট উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরই শেষ হয়ে যায়। কারণ উড্ডয়নের সময় বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন চালু হয়নি রকেটটির। প্রয়োজনীয় শক্তি না পাওয়ার কারণে থ্রাস্ট বা গতি শক্তি পায়নি রকেটটি। ফলে স্টারশিপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে থাকে। এরপর এর ভেতরে থাকা স্বয়ংক্রিয় ধ্বংস ব্যবস্থাটি সক্রিয় হয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় স্টারশিপ।
২০২৩ সালের নভেম্বরে অর্থাৎ একই বছরে স্টারশিপ ফ্লাইট টেস্ট ২ উৎক্ষেপণ করে স্পেসএক্স। এ উৎক্ষেপণ সফল ছিল ও এর সব ইঞ্জিন ঠিকভাবে কাজও করেছে। এ উৎক্ষেপণে স্টারশিপ ধাপে ধাপে আলাদা হয় এবং ৯৩ মাইল উচ্চতায় পৌঁছায়। তবে এরপর যানটির পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়।

স্পেসএক্স বলেছে, স্টারশিপের উপরের ধাপ পুড়ে যাওয়ার সময় তরল অক্সিজেন নির্গত হওয়ার কারণে আগুন লেগেছিল।
এরপর ২০২৪ সালের শুরুতে স্টারশিপ ফ্লাইট টেস্ট ৩ পরীক্ষা চালায় স্পেসএক্স। আগের বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে এ ফ্লাইটটি পরিচালনা করে কোম্পানিটি।
এ ফ্লাইটে সব ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করে স্টারশিপ এবং পরিকল্পিত কক্ষপথের গতি নিয়েই চলছিল রকেটটি। তবে শেষ পর্যন্ত ‘গৌরবময় অগ্নিকুণ্ডের’ মধ্যদিয়ে শেষ হয় এর যাত্রা। ফ্লাইট চলাকালে কয়েকটি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করার পর রকেটটির পুনরায় প্রবেশ শুরু হয় ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে।
তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘূর্ণন বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় প্রবেশটি স্বাভাবিকভাবে হয়নি। স্পেসএক্স বলেছে, রকেটের বিভিন্ন ভাল্ভ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যানটি নিজের ঘূর্ণন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধ্বংস হয় স্টারশিপ।
পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে ছয়টি স্টারশিপ
এরপর বেশ কিছু সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে স্পেসএক্স। যার মধ্যে ফ্লাইট টেস্ট ৫ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এ রকেট উৎক্ষেপণের কারণে আশপাশের কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ সফলতার ধারাবাহিকতা বদলে যায় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্লাইট টেস্ট ৭-এর সময়।
এ ফ্লাইটে উৎক্ষেপণ ও সুপার হেভি বুস্টার রকেট থেকে সফলভাবে আলাদা হয়ে গেলেও স্টারশিপের পেছনে ইঞ্জিনের কাছাকাছি এক অংশে প্রপেল্যান্ট বা জ্বালানির লিক ঘটে।
এ লিক থেকে একাধিক জায়গায় আগুন ধরে যায়, যা ফ্লাইট চলাকালীন রকেটটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণ হয় ও শেষ পর্যন্ত স্টারশিপ ধ্বংস হয়ে যায়।
এরপর নিজেদের স্টারশিপে কিছু পরিবর্তন আনে কোম্পানিটি এবং ২০২৫ সালের মার্চে ফ্লাইট টেস্ট ৮ পরিচালনা করে। এ ফ্লাইটে উৎক্ষেপণ ও সুপার হেভি বুস্টার সফলভাবে আলাদা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই রকেটটির পেছনের অংশে বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে স্টারশিপের একাধিক ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত স্টারশিপ ধ্বংস হয়।
রকেটটি সর্বশেষ ব্যর্থতার মুখোমুখি হয় ২০২৫ সালের মে মাসে ফ্লাইট টেস্ট ৯-এর সময়। এ ফ্লাইটে সুপার হেভি বুস্টার ও স্টারশিপ উভয়ই ধ্বংস হয়ে যায়। এতে জ্বালানির লিক দেখা দেওয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে থাকে এবং পুনরায় প্রবেশের সময় ধ্বংস হয় স্টারশিপ।
এখন পর্যন্ত স্টারশিপ প্রকল্পে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার সংখ্যাই বেশি। তবে এর থেকেও ইঙ্গিত মেলে, কতটা কঠিন এক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে স্পেসএক্স। কারণ মহাকাশে পৌঁছানো কখনই সহজ কাজ নয়।
এখনও হাল ছাড়েনি স্পেসএক্স। ভবিষ্যতে আরও অনেক উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির। এখনও তারাদের দিকে হাত বাড়িয়ে চলছে মাস্কের স্পেসএক্স।
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম