তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়।
কারাগারে খায়রুল হক: মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে শুনানি

- আপডেট সময় ১২:৪২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে

জুলাই আন্দোলনের সময় যুবদলের এক কর্মীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হককে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হককে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদনের শুনানি হয়েছে মোবাইল ফোন সেটের বাতি জ্বালিয়ে।
জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে শুনানির এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে শুনানি শেষ করতে হয়।
এদিন রাত পৌনে ৮টার দিকে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে রাখা হয় মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেওয়া সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ি থানার ইন্সপেক্টর খালেদ হাসান।
রাত সোয়া ৮টার দিকে খায়রুল হককে এজলাসে তোলা হয়। ৮টা ১৬ মিনিটে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহ এজলাসে ওঠেন।
শুনানি চলাকালে ৮টা ৩২ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়৷ তখন মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে বাকি সময় শুনানি হয়।
শুনানিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, “হাসিনার কৃতদাস ছিলেন। হাসিনার নির্দেশে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন। সেই অবিচারের ফলে তিনি আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন। হাসিনার বিরুদ্ধে যত মামলা তাকেও ততগুলো মামলায় অভিযুক্ত হোক সেই প্রত্যাশা করছি।”
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার বলেন, “তিনি সাবেক কলঙ্কিত প্রধান বিচারপতি। তার কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর হাজার হাজার মানুষ নির্যাতন, গুম, হত্যার শিকার হয়েছে। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষকে জীবন দিতে হয়। তার কারণে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার হতে বাধ্য হয়েছেন।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, “তিনি হত্যা মামলার আসামি৷ তিনি এই হত্যাকাণ্ডের উসকানিদাতা। এই মামলায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।”
এ কথা শোনার পর খায়রুল হককে হাসতে দেখা যায়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, “এমন একজন লোক কীভাবে প্রধান বিচারপতি হয় সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি প্রধান বিচারপতি জায়গাটা কলঙ্কিত করেছেন। তিনি ছোট থেকেই অনেক পাপী ছিলেন। উনার যে পাপ, শতবছর বাঁচলে কিছুটা পূরণ হবে।”
শুনানি শেষে বিচারক বলেন, “আপনাদের কথায় অনেক কিছুই উঠে এসেছে। আপনারা বলছেন, আগে আপনারা বিচারকদের সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু কিছু কারণে আপনারা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে সরে এসেছেন।
“মানুষের শ্রদ্ধা তার কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কর্মের মধ্য দিয়েই ঘৃণা বা ভালবাসা তৈরি হয়। এ ঘটনার (এবিএম খায়রুল হক) মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনি যদি শ্রদ্ধা করেন সেটাও আমার কর্মের কারণে, আবার ঘৃণা করলেও সেটাও কর্মের জন্যেও।”
পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দেশের ঊনবিংশতম প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তখন স্পষ্ট করা হয়নি।
পরে জানানো হয়, গত ৬ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে।
যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।
ওই ঘটনায় তার বাবা আলা উদ্দিন যাত্রাবাড়ী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। এখন বিচারপতি খায়রুল হককে সেই মামলায় কারাগারে পাঠানো হল। তার আগে দেশের আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে আসামি হয়ে কারাগারে যেতে হয়নি।
খায়রুল হককে আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ছিলেন সেনাসদস্যরাও।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তার ফাঁসি দাবি করেন তারা।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায়।
খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৩ অগাস্ট আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। এরপর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম