০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।

কেএম নুরুল হুদাকে ‘হেনস্তা’ করা মুজাম্মেল হক স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০১:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

ছবি : মুজাম্মেল হক ঢালী।

 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে হেনস্তায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, সাদা পাঞ্জাবি পরা যে ব্যক্তি নুরুল হুদাকে জুতা দিয়ে মারছিলেন বলে ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত; নাম মুজাম্মেল হক ঢালী।

তবে মুজাম্মেল বলছেন, তিনি সেখানে ছিলেন না, তাকে ফাঁসানোর জন্য ‘এআই’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানানো হয়েছে।

জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলার আসামি হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরই কথিত ছাত্র-জনতা রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার উত্তরার বাসায় চড়াও হয়।

তারা সাবেক সিইসির শরীরে ডিম ছুঁড়ে মারেন। তাকে ফ্ল্যাট থেকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় নীচে নামিয়ে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। পরে সেই জুতা দিয়ে তাকে মারধরও করেন একজন।

সেখানে পুলিশের পোশাক করা সদস্যদেরও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি হামলাকারীদের অনেকে ফেইসবুকে লাইভ করেন, সেসব লাইভে তাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে হেনস্থা করতে দেখা যায়।

এই ঘটনায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে বিবৃতি এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও। এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ ঘটনার নেপথ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনের থাকার কথা বলছেন।

 

ঢাকার উত্তরা থেকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে।

 

তবে ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষের আগে নাম প্রকাশ করতে চাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক সিইসিকে জুতা মারতে যাকে দেখা গেছে, তার নাম মুজাম্মেল হক ঢালী, তিনিও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত।

ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না, তিনি ছিলেন গুলশানে। ঘটনার পর তাকে সেখান থেকে কয়েকজন ফোন করলে তিনি তাদের আইন হাতে তুলে নিতে নিষেধ করেন।

বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ বলেন, “আমি যেটা শুনেছি, উত্তেজিত জনগণ সাবেক সিইসিকে আটক করেছে উত্তরাতে। সেখানে আমাদের কিছু নেতাকর্মী ছিল, তারা আমাকে বলেছে, ‘ভাই আমরা এখানে আসছি, কিছু উত্তেজিত জনতা নুরুল হুদাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করতেছে’।

“আমি বললাম, ‘দেখ, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। উনার শাস্তি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে। তোমরা থানায় যোগাযোগ করে পুলিশের কাছে ওনাকে দিয়ে দাও। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়।’ এরকম একটা বিষয় ছিল সেখানে।”

সাদা পাঞ্জাবী পরা মুজাম্মেল হক ঢালী নামের যে ব্যক্তি নুরুল হুদাকে গেঞ্জির কলার ধরে জুতা দিয়ে মারছিলেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে। তাকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে শেখ ফরিদ বলেন, “আমি মুজাম্মেল হক ঢালীকে চিনি, সে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল করে। এখন আমি মুজাম্মেলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি তাকে বলেছি, ‘তুমি কেন আইন হাতে তুলে নিতে গেলে’।

“জবাবে সে বলেছে, ‘এটা ভাই আমাকে ফাঁসানোর জন্য এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটা ভিডিও এডিটিং করে আমাকে ওখানে দেখানো হয়েছে’।”

শেখ ফরিদ বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে একটা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির প্রতিবেদনটা কাল পেলে আমাদের দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে নেব।”

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি জিডি হয়েছে। এই জিডির ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ ধরে আমরা তদন্ত করছি। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

“আমরা কী অবস্থায় তাকে (নুরুল হুদাকে) পেলাম, কারা তাকে ধরল, এসব বিষয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সোমবার রাতে এ ঘটনায় একজনকে আটকের কথা ছড়ায়। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি বলে জানিয়েছেন উত্তরার উপকমিশনার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

এ ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।

কেএম নুরুল হুদাকে ‘হেনস্তা’ করা মুজাম্মেল হক স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত

আপডেট সময় ০১:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে হেনস্তায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, সাদা পাঞ্জাবি পরা যে ব্যক্তি নুরুল হুদাকে জুতা দিয়ে মারছিলেন বলে ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত; নাম মুজাম্মেল হক ঢালী।

তবে মুজাম্মেল বলছেন, তিনি সেখানে ছিলেন না, তাকে ফাঁসানোর জন্য ‘এআই’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানানো হয়েছে।

জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা মামলার আসামি হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরই কথিত ছাত্র-জনতা রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার উত্তরার বাসায় চড়াও হয়।

তারা সাবেক সিইসির শরীরে ডিম ছুঁড়ে মারেন। তাকে ফ্ল্যাট থেকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় নীচে নামিয়ে তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। পরে সেই জুতা দিয়ে তাকে মারধরও করেন একজন।

সেখানে পুলিশের পোশাক করা সদস্যদেরও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি হামলাকারীদের অনেকে ফেইসবুকে লাইভ করেন, সেসব লাইভে তাকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে হেনস্থা করতে দেখা যায়।

এই ঘটনায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে বিবৃতি এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও। এ ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ ঘটনার নেপথ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেনের থাকার কথা বলছেন।

 

ঢাকার উত্তরা থেকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে।

 

তবে ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষের আগে নাম প্রকাশ করতে চাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক সিইসিকে জুতা মারতে যাকে দেখা গেছে, তার নাম মুজাম্মেল হক ঢালী, তিনিও স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত।

ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না, তিনি ছিলেন গুলশানে। ঘটনার পর তাকে সেখান থেকে কয়েকজন ফোন করলে তিনি তাদের আইন হাতে তুলে নিতে নিষেধ করেন।

বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ বলেন, “আমি যেটা শুনেছি, উত্তেজিত জনগণ সাবেক সিইসিকে আটক করেছে উত্তরাতে। সেখানে আমাদের কিছু নেতাকর্মী ছিল, তারা আমাকে বলেছে, ‘ভাই আমরা এখানে আসছি, কিছু উত্তেজিত জনতা নুরুল হুদাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করতেছে’।

“আমি বললাম, ‘দেখ, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। উনার শাস্তি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে। তোমরা থানায় যোগাযোগ করে পুলিশের কাছে ওনাকে দিয়ে দাও। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়।’ এরকম একটা বিষয় ছিল সেখানে।”

সাদা পাঞ্জাবী পরা মুজাম্মেল হক ঢালী নামের যে ব্যক্তি নুরুল হুদাকে গেঞ্জির কলার ধরে জুতা দিয়ে মারছিলেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে। তাকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে শেখ ফরিদ বলেন, “আমি মুজাম্মেল হক ঢালীকে চিনি, সে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল করে। এখন আমি মুজাম্মেলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি তাকে বলেছি, ‘তুমি কেন আইন হাতে তুলে নিতে গেলে’।

“জবাবে সে বলেছে, ‘এটা ভাই আমাকে ফাঁসানোর জন্য এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে একটা ভিডিও এডিটিং করে আমাকে ওখানে দেখানো হয়েছে’।”

শেখ ফরিদ বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে একটা তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির প্রতিবেদনটা কাল পেলে আমাদের দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে নেব।”

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি জিডি হয়েছে। এই জিডির ভিত্তিতে ভিডিও ফুটেজ ধরে আমরা তদন্ত করছি। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

“আমরা কী অবস্থায় তাকে (নুরুল হুদাকে) পেলাম, কারা তাকে ধরল, এসব বিষয়ে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সোমবার রাতে এ ঘটনায় একজনকে আটকের কথা ছড়ায়। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি বলে জানিয়েছেন উত্তরার উপকমিশনার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম