কেউ যদি নিজের পরিচয় আড়াল করে বা গুপ্ত থাকার কৌশল নিয়ে রাজনীতি করে, কর্তৃপক্ষ সেটা কী করে জানবে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী আছে?
ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য ও ‘গুপ্ত’ রাজনীতির তর্ক

- আপডেট সময় ০২:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পরে জানা গেল ওই আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা নেতাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি করতেন পরিচয় লুকিয়ে। অর্থাৎ ‘গুপ্ত’ রাজনীতি করতেন। যেহেতু আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করা কঠিন ছিল, সে কারণে এটাকে তারা ‘কৌশল’ হিসেবে দাবি করে থাকে। সেই সময় শিবিরের কেউ কেউ ছাত্রলীগের ভেতরে গুপ্ত থাকার কৌশলও নিয়েছিলেন। এবার সেই গুপ্ত রাজনীতির প্রসঙ্গটি নতুন করে উঠে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের ইস্যুতে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ঘোষণা দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সব ধরনের প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে গত বছরের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। শুক্রবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদও।
প্রশ্ন হলো, গুপ্ত রাজনীতি বলতে কর্তৃপক্ষ কাদেরকে বুঝিয়েছে, শিবিরকে না অন্য কোনো দলকে। ক্যাম্পাসে শিবির ছাড়া আর কেউ কি গুপ্ত রাজনীতি করে? আওয়ামী লীগের আমলে ক্যাম্পাসে শিবির ‘গুপ্ত’ ছিল এবং আওয়ামী লীগের পতনের পরে এখন সেখানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কি ‘গুপ্ত’ রাজনীতি করছে?
কেউ যদি নিজের পরিচয় আড়াল করে বা গুপ্ত থাকার কৌশল নিয়ে রাজনীতি করে, কর্তৃপক্ষ সেটা কী করে জানবে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী আছে? ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকে যে শিবিরের লোকজন বছরের পর বছর রাজনীতি করল, অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন না হলে সেটি কি কোনোদিন জানা যেত বা যারা পরিচয় গোপন করে রাজনীতি করেছেন তারা কোনোদিন আসল পরিচয় নিয়ে হাজির হতেন? তারা যে ছাত্রলীগের ভেতরে থেকে এভাবে রাজনীতি করে গেলেন, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো বটেই, ছাত্রলীগ নিজেও টের পায়নি। সুতরাং এখনও যদি কোনো দল বা সংগঠন গুপ্ত প্রক্রিয়ায় আবাসিক হলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেটি প্রতিহত করা কিংবা নজরদারির সক্ষমতা কি কর্তৃপক্ষের আছে?
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসুর প্রশ্ন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ থাকলে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে কোন যুক্তিতে? তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিপদ দেখলেই তাৎক্ষণিক একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়, যা আখেরে কোনো সমাধান নয়।
অন্যদের বাধা দিলেও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ‘দেদারসে’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আব্দুল কাদের। এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, শৃঙ্খলা কমিটি কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধির নামে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন জারি রেখেছেন।
কাদেরের অভিযোগ, হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা অনলাইন ভোটাভুটিতে কারচুপি করে এসব প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন। বু
ঝতে অসুবিধে হচ্ছে না গুপ্ত রাজনীতিটা আসলে ছাত্রশিবিরই চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার পালাবদলে বদলায় শুধু ছদ্মবেশ; কর্তৃপক্ষের ঘোষণা কি বাস্তবে কোনো পরিবর্তন আনে, নাকি শুধু নতুনভাবে পুরনো খেলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়?
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইস্যু নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না—এই বিতর্কের কারণে সৃষ্ট সংঘাতের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমও দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে। পরে কর্তৃপক্ষ জানায়, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধই থাকবে। গত বছরের ৮ অগাস্ট কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি আদেশ জারি করা হয়। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, কুয়েটে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে জানানো হয়। তবে এ ঘটনায় খুলনা প্রেস ক্লাবে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ‘কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক-বাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মী এবং ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত।’ অর্থাৎ কুয়েটেও শিবিরের বিরুদ্ধে ‘গুপ্ত রাজনীতির’ অভিযোগ এনেছিল ছাত্রদল। প্রশ্ন হলো, সেখানে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও এখনও কেউ ‘গুপ্ত’ রাজনীতি করছে কি না, সেটি কি কর্তৃপক্ষ জানে?
বাস্তবতা হলো, ছাত্ররাজনীতি শব্দটা এখনও অসংখ্য মানুষের কাছে একটা নেতিবাচক ব্যাপার। যে অভিভাবক ছাত্ররাজনীতির পক্ষে, তিনিও হয়তো ক্যাম্পাসে নিজের সন্তানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার বিরোধী। এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে কী হয়, সেটি একসময় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবিরের তাণ্ডবে যেমন দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতন। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে সহিংসতার দায় ছাত্রদল এবং জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠনও এড়াতে পারে না। অর্থাৎ, যখনই যে দল সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তাদের ছাত্র সংগঠনই মূলত ক্যাম্পাসের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যাদের আধিপত্য বিস্তারের প্রধান টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে একটি নির্দলীয় সরকার। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সরকারের অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার হিসেবে পরিচিত জামায়াত-শিবিরের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো—বিগত সরকারের আমলে যাদেরকে পরিচয় লুকিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে। এই আমলে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। মূলত সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রদলের কমিটি গঠনই নিয়েই সাম্প্রতিক সংকটের সূত্রপাত।
তবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নয়, পুরো ক্যাম্পাসে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে সরকার মনোনীত শিক্ষাবিদ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। ৯ অগাস্ট সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আবাসিক হল শুধু নয়, পুরো ক্যাম্পাসে গুপ্ত, লুপ্ত, সুপ্ত, বিলুপ্ত সকল প্রকার দলীয় ছাত্র কিংবা শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। অথচ আমরা কী দেখছি? রঙের আবরণে দলীয় শিক্ষক রাজনীতি পুরোদমে চলছে। আমরা চাই ক্যাম্পাস হবে মুক্তচিন্তার চারণ ভূমি।’ তিনি মনে করেন, ছাত্ররা দলীয় রাজনীতি পরিহার করলে হলে টর্চার সেল থাকবে না। হল পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন হবে না। কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ছাত্ররাই পার্ট-টাইম চাকরি হিসেবে আবাসিক হলগুলো পরিচালনা করতে পারেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অগাস্টের শেষদিকে একটি জাতীয় দৈনিক তাদের নিজস্ব জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে জানিয়েছিল, জরিপে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত। একই সময়ে ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
প্রশ্ন হলো, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কীভাবে? এর একটি জবাব হতে পারে কার্যকর ছাত্র সংসদ। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাব না থাকে তাহলে প্রকৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে উঠতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ তারাই নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপ না থাকলে ক্যাম্পাসে হানাহানি ও রক্তারক্তির অবসান হবে।
প্রতিটি ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকে। সেসব সংগঠনও বড় প্ল্যাটফর্ম। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অন্যায় করলে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারে। এমনকী রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়েও চাইলে তারা প্রতিবাদ করতে পারে এবং সেখানে কেন্দ্রীয় রাজনীতির ইন্ধন বা প্রভাব না থাকলেও আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে।
মনে রাখা দরকার, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের মানে বিরাজনীতিকরণ নয় বা শিক্ষার্থীদের রাজনীতিশূন্য করা নয়। সংগঠিত ছাত্রসমাজ ও দাবি আদায়ে তাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ এবং বর্তমানের দলের লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি এক কথা নয়। বরং ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে, সেটি হতে হবে দলীয় লেজুড়বৃত্তিমুক্ত। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যদি মূল দলের অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হন, তাহলে সেই রাজনীতি খুন, রক্ত ও প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু দেবে না।
রাজনীতি করার অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকেরই রয়েছে। সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর তো বটেই। সেই কাজটি তিনি ক্যাম্পাসের বাইরেও করতে পারেন। ক্যাম্পাসে রাজনীতির নামে যে দুর্বৃত্তায়ন ফুলেফেঁপে উঠেছে, তা থেকে শিক্ষার্থীরাও মুক্তি চান। মনে রাখা দরকার, রাজনীতি না করলেই যে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি-সচেতন হবেন না, তা নয়। রাজনীতি-সচেতনতা আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আলাদা জিনিস। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদেরকে প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ না করে, যদি ছাত্রদের মধ্যে ভোগবাদিতা প্রবল হতে থাকে, যদি মেধাবীদের রাজনীতিতে আসার মতো পরিবেশ তৈরি না হয়, তাহলে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধের দাবি আরো প্রবল হবে।
সুতরাং, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয়, বরং ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধ বা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। সেটি হোক প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ থাকা ও থাকতে পারা বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা উপাচার্যসহ বড় বড় পদে যারা থাকেন, তারাও জাহেরে কিংবা বাতেনে কোনো না কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত এবং ওই দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেন। যদি তাই হয়, তাহলে তারা আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধের কথা বলে গোপনে তাদের আদর্শের দলকে ক্যাম্পাসে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন কি না, সেটি কে দেখবে?
পরিশেষে, আবাসিক হল এমনকি পুরো ক্যাম্পাসেই দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অন্যান্য স্পেসগুলো উন্মুক্ত রাখতে হবে। ক্যাম্পাসের তো বটেই, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিষয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে এমনকি বাইরেও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করার অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে শিক্ষার্থীদের যেন চাকরিনির্ভর পড়ালেখাসর্বস্ব একটি মেরুদণ্ডহীন প্রাণীতে পরিণত করা না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমীন আল রশীদ -সাংবাদিক , কলামিস্ট