“আলোচনা অংশ নেওয়া মানেই পরিকল্পনায় সমর্থন নয়,’ বলছেন ব্লেয়ারের মুখপাত্র।
গাজা নিয়ে ‘ট্রাম্প রিভিয়েরা’ পরিকল্পনায় টনি ব্লেয়ারের প্রতিষ্ঠান

- আপডেট সময় ০২:১২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
যুদ্ধ পরবর্তী গাজাকে দুবাইয়ের মত জাঁকালো প্রমোদ নগরে রূপান্তরের পরিকল্পনায় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করেছিল বলে সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট (টিবিআই) ইসরায়েলি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে একটি প্রকল্পে কাজ করেছিল, যেখানে ইলন মাস্কের নামে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরির কথাও আলোচনায় ছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধ চলছে ২০ মাস ধরে।
এ বছরের শুরুতে ডনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি একটি বিতর্কিত ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিলেন, যাতে আকাশচুম্বী ভবন, দাড়িওয়ালা বেলি ড্যান্সার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বর্ণমূর্তি দেখানো হয়।
রিভিয়েরা একটি ইতালীয় শব্দ, যার সাধারণ অর্থ তটরেখা। ভূমধ্যসাগর উপকূলের ইতালি, ফ্রান্স ও স্পোনের রিভিয়েরা মনোরম সৈকত, আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য আর বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত।
গাজায় তেমনই এক প্রমোদ নগরী গড়ার পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, যেখানে টিবিআই কর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য আসছে।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, টিবিআই কর্মীরা ‘গ্রেট ট্রাস্ট’ প্রকল্পে ভূমিকা রেখেছেন, যেখানে বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) সাবেক কর্মীরাও কাজ করেন।
এক টিবিআই কর্মীর লেখা নথিতে ‘গাজা রিভিয়েরা’ নিয়ে ধারণা ছিল, যেখানে কৃত্রিম দ্বীপের কথাও বলা হয়। ট্রাম্পের শেয়ার করা ভিডিওতেও একই ধরনের ধারণা দেখা যায়।
এ পরিকল্পনার খবর প্রথম দিয়েছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। পত্রিকাটি জানিয়েছিল, নথির তথ্য অনুযায়ী, ক্রিপ্টোকারেন্সি ভিত্তিক বাণিজ্য উদ্যোগ এবং ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে, যেখানে কর হার কম থাকবে।

নথিতে বলা হয়, যে গাজায় যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে, সেই গাজাকে পুনর্গঠনের সুযোগ এসেছে; এমন সুযোগ হয়ত এক শতাব্দীতে একবার আসে।
গাজা একটি ‘নিরাপদ, আধুনিক, সমৃদ্ধ সমাজ’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলেও ওই নথিতে ধারণা দেওয়া হয়।
টিবিআই কর্মীরা বাজেট তৈরির জন্য ১২ সদস্যের একটি মেসেজিং গ্রুপে অংশ নেন এবং ‘গাজার অর্থনৈতিক নকশা’ তৈরি করতেও ভূমিকা রাখেন।
ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া টিবিআইয়ের এ পরিকল্পনায় গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনিকে অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। তবে এ প্রকল্পের চূড়ান্ত উপস্থাপনা তৈরির কাজ বা ‘সমর্থনে’ টিবিআই ছিল না বলে লিখেছে টেলিগ্রাফ।
পত্রিকাটি ৬ জুলাই লিখেছিল, তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের আগের সপ্তাহে এ তথ্য প্রকাশ্যে আসে যে- গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনে কত খরচ পড়বে তার মডেল আগেই তৈরি করেছে বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি)।
এ তথ্য প্রকাশের পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কারণ সংস্থাটি গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন তৈরিতে সম্পৃক্ত ছিল, যা গঠনে সমর্থন ছিল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের। পরে বিসিজি এ প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।
টনি ব্লেয়ারের একজন মুখপাত্র বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ পরিকল্পনা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলেননি বা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মুখপাত্র বলেন, “যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পরিকল্পনা নিয়ে টিবিআই বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু এই পরিকল্পনার মূল প্রণেতা টিবিআই নয়।
“টিবিআই কর্মীরা দুটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, যেমনটা তারা ‘গাজা পরিকল্পনার’ অন্যান্য অনেকের সঙ্গেও করেছে। আলোচনা অংশ নেওয়া মানেই (পরিকল্পনা) সমর্থন নয়।
“টিবিআইয়ের যে নথির কথা বলা হচ্ছে, তা ছিল একটি অভ্যন্তরীণ নথি, যেখানে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রস্তাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে…কিন্তু এটা বিসিজিকে দেওয়া হয়নি।”
বিসিজি’র এক মুখপাত্র বলেন, “সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পুনর্গঠনে বিসিজির ভূমিকা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। দুজন সাবেক সহযোগী এই কাজ শুরু করেছিলেন, যদিও এ কাজ না করতে প্রধান সহযোগীকে স্পষ্টতই নিষেধ করা হয়েছিল।
“এটি বিসিজির কোনো প্রকল্প নয়। বিসিজির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বা অনুমোদন ছাড়াই গোপনে তা পরিকল্পনা ও পরিচালিত হয়েছিল। আমরা এই কাজকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছি। বিসিজি এ কাজের জন্য কোনো পয়সাও পায়নি।”
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম