শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।
গান ও গল্পে সাবিনা ইয়াসমিনকে সম্মাননা

- আপডেট সময় ১২:৫১:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে
গান আর গল্পে মধুর এক সন্ধ্যা উপহার দিলেন কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন; সুরের মুর্ছনা ছড়ালেন মিলনায়তনজুড়ে। আরও একবার তার কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ করলেন সবাইকে। তাকে সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানটি যে কারণে হয়ে উঠল ভিন্ন কিছু, পেল ভিন্ন মাত্রা।
রোববার এমন মধুর এক সন্ধ্যায় তাকে সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানটি এজন্য শুধু তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। তার সম্মানে গানও গাইলেন আমন্ত্রিত শিল্পীরা।
রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, নকীব খান, খুরশীদ আলম, ফেরদৌস আরা, পার্থ বড়ুয়া, আগুন একত্রিত হয়ে গাইলেন ‘সে যে কেন এল না’।
দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সংগীতের কিংবদন্তী এই শিল্পী ৭১ বছর পূর্ণ করেন। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এদিন আয়োজন করে ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ আয়োজনে শিল্পী নিজেও গান পরিবেশন করেন।
অভিনেতা আফজাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে রোববার প্রয়াত লেখক, গবেষক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এরপর দেখানো হয় পাঁচ মিনিট দৈর্ঘের সাবিনা ইয়াসমিনের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র।
এতে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেওয়া শিল্পীকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন নকীব খান, ফুয়াদ নাসের, পার্থ বড়ুয়া, সংগীতশিল্পী আগুন, রফিকুল আলম থেকে সাবিনা ইয়াসমিনের গানের তবলা বাদক থেকে ভায়োলিন বাদক দলের সদস্যসহ অনেকে।
১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী এই শিল্পী শুনিয়েছেন তার সংগীতের যাত্রা শুরুর গল্প।
এরপর ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করতে মঞ্চে আসেন একগুচ্ছ নৃত্যশিল্পী।
স্বাগত বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “চব্বিশ পরবর্তী সময়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আমাদের সংস্কৃতির যে ঐশ্বর্য আছে সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করব। সেই উদ্যোগ থেকেই সংগীতের কিংবদন্তীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
“প্রথমে কথা ছিল সাবিনা ইয়াসমিনকে সম্মাননা দেওয়া হবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু আমি যখন এই অনুষ্ঠানের কথা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জানাই তখন তিনি সিদ্ধান্ত দেন সাবিনা ইয়াসমিনকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার। স্যার বলেছেন এই সম্মাননায় ওনার সাক্ষর থাকলে উনি (মুহাম্মদ ইউনূস) নিজেও সম্মানিত হবেন৷ তাই উনাকে (সাবিনা ইয়াসমিন) রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হবে।”
এরপর শিল্পীকে সম্মাননা তুলে দেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, নকীব খান, খুরশীদ আলম, ফেরদৌস আরা, পার্থ বড়ুয়া, আগুন, অভিনেত্রী নূতন এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে।
সম্মাননা গ্রহণ করে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আমি অনেক অনেক আনন্দিত এই সম্মাননা পেয়ে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের থেকে শুরু করে এই অনুষ্ঠানের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।”
সংগীতে অবদানের জন্য এর আগে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী।
সাবিনা ইয়াসমিন এ পর্যন্ত ১৬ হাজারের মত গান রেকর্ড করেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই চলচ্চিত্রের গান৷
সম্মাননা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাবিনা ইয়াসমিন শুরু করেন দেশের গান দিয়ে, গাইলেন ও দেশ তোমার জন্য’। একে একে গেয়ে শোনালেন ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’, ‘তুমি ফুলকে বলো চলে যেতে’, ‘কত সাধনায় এমন ভাগ্য পেলে’ গান।
এরপর সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে সংগীতশিল্পী আগুন গেয়ে শোনালেন ‘পৃথিবীতে সুর বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার নাম ভালোবাসা’।
আবার একক গানে ফিরলেন সাবিনা ইয়াসমিন। গাইলেন ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এই গান’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি আছি থাকব, ভালোবেসে মরব’, ইশারায় শিষ দিয়ে আমাকে ডেকোনা’ গান।
‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ দিয়ে যখন অনুষ্ঠান শেষ করলেন এই কিংবদন্তী তখন সবাই তার গানের ভবনেই যেন ডুবে ছিলেন।
বিনোদন ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম