“বৃষ্টির জন্য কয়দিন দাম বাড়তি ছিল মানলাম। এখন কী সমস্যা?”
চড়া সবজির বাজারে ক্রেতার ‘মন খারাপ’

- আপডেট সময় ১১:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
জুমার নামাজের পরপর রাজধানীর মহাখালী এলাকার সাততলা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোবারক হোসেন। কিন্তু, সবজির দাম নিয়ে তার মন খারাপ। অন্যদিনের তুলনায় পরিমাণেও কম কিনলেন।
তিনি বলেন, “সব সবজি ৮০ থিকা ১০০ টাকা। ইচ্ছা কইরাই হাফ কেজি কইরা কিনলাম। মনডা খারাপ। সবজির দাম তো কইমা যাওয়ার কথা। বৃষ্টির জন্য কয়দিন দাম বাড়তি ছিল মানলাম। এখন কী সমস্যা?”
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী ও সাততলা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহান্তে দুই-একটি সবজির দাম কমলেও গেল কয়েক সপ্তাহের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ শাক-সবজি।
বিক্রেতাদের কেউ-কেউ বলছেন, এই সময়টা গ্রীস্ম ও শীতকালীন সবজির মাঝামাঝি মৌসুম। যে কারণে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম, তাতে দাম বেড়েছে।
কেউ আবার বলছেন, কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টিতে সবজির উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হয়েছে। এছাড়া, উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় বন্যার কারণেও সবজির বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, বিক্রেতারা নানা যুক্তি দেখালেও, ক্রেতারা সবজির দাম নিয়ে ‘নাখোশ’।
শুক্রবার যেমন ছিল সবজির দরদাম
গেল এক মাসের বেশি সময় ধরে সবজির বাজার চড়া। বাজারে আলু, কুমড়ো ও কাঁচা পেঁপে ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই ৮০ থেকে ১০০ টাকা বা তারও বেশি।
শুক্রবার মহাখালীর কাঁচাবাজারে চিকন লম্বা আকৃতির প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর বড় গোল আকৃতির বেগুনের দাম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত চাইছেন বিক্রেতারা।
অন্যান্য সবজির দামও চড়া। আগের সপ্তাহের মতো করলা ও ঢেঁড়সের কেজি পড়ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। পটল ৮০ থেকে ১০০, ধুন্দল ৮০, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর বাইরে ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ ও কাঁচামরিচ প্রকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে আকৃতিভেদে একেকটি লাউ ৫০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটোর কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি শসা ১০০ ও হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে মাঝারি আকারের লেবুর হালি মিলছে ২০ টাকাতেই। আর বড় আকারের লেবু ৫০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আকারভেদে একেকটি চাল কুমড়ার দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। ধনেপাতার কেজি পড়ছে ৪০০ টাকা।
অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০, মুলা ৬০ ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি আলু মিলছে আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
‘দাম বেশি, কেনা কমিয়ে দিয়েছি’
মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “আগে সবজির দাম ভালোই কম ছিল। এখন দাম বেড়ে গেছে, তাই বাধ্য হয়ে কেনাও কমিয়ে দিয়েছি। বরবটি কিনতে গেলাম। দাম শুনে হাফ কেজি নিয়েছি মেয়ে পছন্দ করে বলে। নাহয়, নিতাম না।”
সাততলা বাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন পোশাক কারখানার কর্মী সালমা আক্তার। সবজির দাম শুনে শাক কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
“সবজির যা দাম। পেঁপে কিনছি দুইদিন আগে। এখন আর খাইতে ইচ্ছে করতাছে না। যে বেতন পাই, অন্য সবজি কিনলে টানাহেঁচড়া খাইতে হবে মাস চালাইতে গিয়া। তাই শাক কিনলাম আরকি।”
এই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা আবদুর রহমান বলেন, “সবজির দাম অনেকদিন ধরেই বাড়তি। কাঁচকলা কিনলাম এক হালি। অন্য সবজিতে তো হাতই দেওয়া যায় না। দামের জন্য কেনা কমিয়ে দিয়েছি।”
যা বলছেন বিক্রেতারা
সবজির দাম নিয়ে জানতে চাইলে মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মেহরাজ হোসেন বলেন, সবজির দাম গেল সপ্তাহের মতোই আছে। আমরা বেশি দামে কিনেছি। তাই বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে।
এই বাজারের আরেক বিক্রেতা ওসমান হোসেনও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, “আমি কমে কিনতে পারলেই তো কাস্টমাররে কমে দিমু। এখন দাম চড়া।”
তবে, সাততলা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, “সবজির দাম কৃষক পর্যায়েই একটু বেশি। এর মধ্যে হাত ঘুরে-ঘুরে আসায় দাম আরও বেড়ে যায়।
“গেল কয়েকদিনের বৃষ্টি আর উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে সবজি ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কাওরান বাজারের বিক্রেতাদের কাছে শুনেছি।”
তিনি বলেন, “আরেকটা জিনিস হল মৌসুম। মাসখানেক পর ধীরে-ধীরে শীতকালীন সবজি বাজারে ঢুকতে শুরু করবে। তখন দামটা কমে আসবে বলে আশা করি।”
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম