০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
ট্রাম্পের কথাবার্তা সত্যিকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি, নাকি সেটা আরেকটি ‘ট্রাম্পীয় মরীচিকা’, সেটা সময়ই বলে দেবে।

চিরস্থায়ী যুদ্ধের দেশে ট্রাম্পের ‘চিরশান্তি’ টিকবে?

মিজানুর রহমান খান - বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:৪৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

নেদারল্যান্ডসে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: রয়টার্স

 

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ‘চোরাবালির’ গল্প কি ফুরালো?

এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে–ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার যে আখ্যান, তার চরম সংকটময় অধ্যায় থেকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীর বেশে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে তেহরান যে ‘সীমিত’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাকে ট্রাম্প সম্ভবত ইরানের নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই ধরে নিয়েছেন।

ট্রুথ সোশালে তিনি লিখেছেন, “অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়।”

ট্রাম্পের এ উচ্ছ্বাসে বোঝা যায়, তিনি চলমান সংঘাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার ইতি দেখতে পাচ্ছেন; অন্তত এ মুহূর্তের জন্য।

এমন উচ্ছ্বাসের পরেই তিনি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিরতি প্রায়ই নাজুক ও ক্ষণস্থায়ী প্রমাণিত হয়।

এবারও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগ মুহূর্তে এসেও ইরান ও ইসরায়েল একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে।

কিন্তু ইরানে মার্কিন বোমা হামলার ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ ও চুক্তি সইয়ের দক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জাহির করতে চাইছেন।

সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এই যুদ্ধবিরতি চিরস্থায়ী হবে।”

সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ইসরায়েল ও ইরান আর কখনো একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি চালাবে না।

 

ছবি: রয়টার্স

 

অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যকে দেখেন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ‘সমাধিক্ষেত্র’ হিসেবে। সেই জায়গা থেকে দেখলে ট্রাম্প সাহসী পদক্ষেপই নিয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের এসব কথাবার্তা সত্যিকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি, নাকি তা আরেকটি ‘ট্রাম্পীয় মরীচিকা’, সময়ই বলে দেবে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল অভিযোগ তোলে, ইরান চুক্তি ভঙ্গ করেছে। কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা। যদিও তেহরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করতে পেরেছে? নাকি এটি তার আরেকটি ‘ধ্রুপদী বিভ্রম’?

এই সংঘাতের একটি অসমাপ্ত দিকও রয়েছে। সেটা হল, ইরানের হাতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ থাকার কথা বলা হচ্ছে, যা দ্রুত বোমায় রূপান্তর করা সম্ভব।

ফলে আরও বড় একটি সংকট সামনে অপেক্ষা করছে কিনা, সেই প্রশ্নের সুরাহাও এখনো হয়নি।

সিএনএন বলছে, অল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটলে তা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ও উত্তরাধিকারকে আকার আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিষয়টি তার পররাষ্ট্রনীতিকেও চাঙ্গা করে তুলতে পারে, যা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঘিরে ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

কিন্তু রক্তমাখা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোয় ভূমিকা রাখতে পারলে ইতিহাস কি ট্রাম্পকে ‘বিশৃঙ্খলার কর্তার’ পরিবর্তে ‘শান্তির দূত’ ভাবতে শুরু করবে?

প্রশ্ন হল, ইসরায়েলের জন্য কী অপেক্ষা করছে? ইরানে হামলা বন্ধের ব্যাপারে ট্রাম্প কি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাস ধরে রাখতে পারবেন?

কিংবা না খেয়ে মরতে থাকা গাজার হাজার হাজার মানুষের জন্য ইসরায়েল কি শেষমেশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেবে?

আবার তেহরানের ধর্মীয় শাসকদের এই ‘অপমান’ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নেটওয়ার্কের ভাঙন কি কোনো রাজনৈতিক বসন্তের জন্ম দেবে, যা ইরানের অনেক মানুষ আশা করে বসে আছে?

 

 

ট্রাম্পের ‘বিজয়’

সিএনএন লিখেছে, এ যুদ্ধবিরতিকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের মেয়াদকালের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ও সামরিক সাফল্য হিসেবে দাবি করতে পারেন।

ট্রাম্প বাজি ধরেছিলেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাবেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের চোরাবালিতে ডুবতে দেবেন না।

ট্রাম্পের এ বাজিকে অবশ্য অনেক সমালোচক ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক প্রমাণিত হয়েছেন।

যদিও ইরানে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে শুরুর দিকে ট্রাম্প কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে জড়ানোকে শুরুতে তিনি পরিকল্পিত ফাঁদও ভেবেছিলেন। কিন্তু তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনেন এবং ‘তুলনামূলক কম খরচে’ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘মারাত্মকভাবে দুর্বল’ করে দেন।

ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তা ‘সফল’ হয়।

ভাগ্যও হয়ত কিছুটা সহায় ছিল, কিন্তু ট্রাম্প বি-টু বোমারু বিমান দিয়ে হামলার সিদ্ধান্ত ক্ষেত্রে কৌশলগত ‘সক্ষমতা ও দূরদৃষ্টি’ দেখিয়েছেন।

এখন যদি সংঘাতের মাত্রা কমে আসে, তাহলে মার্কিন রাজনীতিতে, অন্তত রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের সমর্থন বেড়ে যাবে। এছাড়া ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ শিবিরে তার যুদ্ধবিরোধী ভাবমূর্তি যতটা ক্ষুণ্ন হয়েছিল, সেটাও তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ও এ সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে এসেছে।

যেমন— এটা বোঝা গেল যে তিনি পূর্বসূরিদের মতো যুদ্ধবাজ কোনো প্রেসিডেন্ট নন; আবার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অন্ধ অনুসারীও নন।

 

 

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের চারপাশে একটি নির্ভরযোগ্য পরামর্শক দলও গড়ে উঠেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন, সিআইএ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ এবং প্রেসিডেনশিয়াল দূত স্টিভ উইটকফ।

তবে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ভবিষ্যৎ এখনও কিছুটা অনিশ্চিত।

আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে ট্রাম্পের। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে সামরিক শক্তি ব্যবহারে যে পিছপা হবেন না, সে বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান এ সংকট ট্রাম্পের নেতৃত্বের আরও কিছু উদ্বেগজনক দিকও সামনে এনেছে।

যেমন— তিনি দেশকে কোনো ধরনের আভাস না দিয়েই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে তিনি আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেননি।

এটি ছিল কংগ্রেসের প্রতি তার অবজ্ঞার সবশেষ নজির।

আবার তিনি কোন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরানে হামলা চালালেন, তা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সামনে তুলে ধরেননি।

তিনি মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়নও উপেক্ষা করেছেন, যেখানে বলা ছিল, তেহরান এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদেরও অবজ্ঞা করেছেন এবং তাদের শান্তি প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করেছেন।

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের এমন মনোভাবে এটাই ফুটে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের মিত্রদের থেকে সরে গিয়ে শুধু নিজের স্বার্থের পেছনে ছুটেছে।

 

ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কী হবে?

চলমান এ সংঘাত ঘিরে যে জটিল প্রশ্নটি সামনে এসেছে, সেটির উত্তর এখনও মেলেনি।

যদিও শনিবার মধ্যরাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা ‘ধ্বংস করা’ এবং বিশ্বের ‘সন্ত্রাসবাদের এক নম্বর পৃষ্ঠপোষকের‘ পারমাণবিক বোমার হুমকি বন্ধ করে দেওয়া।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন হামলায় ইরানের ইস্পাহান, নাতাঞ্জ ও ফোরদোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেটার ভিত্তিতে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করার সময় এখনও হয়নি।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা— আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি রোববার সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়ামের ৪০০ কেজির একটি মজুত ‘রক্ষা’ করতে সক্ষম হয়েছে, যা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি।

ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তার কৌশল ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনবে, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা চুক্তির একটি বিকল্প তৈরি করা যাবে।

ওবামার চুক্তিটি ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই বাতিল করে দিয়েছিলেন।

 

ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে যাওয়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: রয়টার্স।

 

সিএনএন আরো বলছে, ইরানের সামরিক নেতারা এবারের সংঘাত থেকে নতুন একটা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তা হল— ইসলামি বিপ্লবকে বাঁচাতে হলে তাদের একমাত্র পথ একটি পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলা।

আবার ইরানের তরফে এখনও এমন বার্তাও আসেনি যে, তারা নতুন চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পথ থেকে সরে দাঁড়াবে।

আর্মড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কেলসে ডাবেনপোর্ট বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে দেখলে ইরানে ট্রাম্পের হামলা ছিল বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের আরও কাছে নিয়ে যেতে পারে।

“এ হামলায় ফোরদোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ গোপন কোনো স্থানে সরিয়ে ফেলার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল এবং সম্ভবত সেটিই তারা করেছে।”

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কাজ করা জোসেফ সিরিনসিওন বলেন, “ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান বা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে বোমা মেরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তারা তাদের স্থাপনাগুলো আবার গড়ে তুলতে পারে।”

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এই গোপন ইউরেনিয়াম যদি নতুন সেন্ট্রিফিউজে ঢোকানো হয়, তাহলে তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে দশটি বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে।

“আর এটাই আমার কাছে বড় উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েল খুঁজে পাওয়ার আগেই তারা কি সেই অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করবে?”

যদি এসব আশঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন এবং রিপাবলিকানদের প্রশংসা ভবিষ্যতে গভীর রাজনৈতিক গাফিলতি এবং আরও বড় একটি বৈশ্বিক সংকট হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।

 

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: রয়টার্স

 

পরিবর্তিত মধ্যপ্রাচ্য

কাতারে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে সোমবার ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা সহজেই প্রতিহত করে দেয়।

এ ঘটনা কিংবা ইরানের আকাশসীমা ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়াকে তেহরানের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক— যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুতিদের একসময় তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির রক্ষাকবচ ভাবা হত।

কিন্তু গত ২০ মাসে ইসরায়েলি হামলায় এরা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানও এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ইসরায়েল একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর সৌদি আরব ও কাতারের মতো মার্কিন মিত্ররা নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্বের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে।

ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

দেশটির ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া আগে থেকেই জটিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ক্ষমতা হস্তান্তর আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে ইসরায়েলেও। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে নেতানিয়াহুর অনীহা এবং ইরানে হামলা চালানোকে ইসরায়েলের অনেকেই তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।

তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

এ সংঘাতের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু সম্পর্কও নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে। ট্রাম্প কখনোই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। সেক্ষেত্রে তিনি চাইলে ইরানে মার্কিন হামলার ‘প্রতিদান’ হিসেবে ফিলিস্তিন বিষয়ে একটা চুক্তি করতে নেতানিয়াহুকে চাপে ফেলতেও পারেন।

 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের কথাবার্তা সত্যিকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি, নাকি সেটা আরেকটি ‘ট্রাম্পীয় মরীচিকা’, সেটা সময়ই বলে দেবে।

চিরস্থায়ী যুদ্ধের দেশে ট্রাম্পের ‘চিরশান্তি’ টিকবে?

আপডেট সময় ১১:৪৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

 

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ‘চোরাবালির’ গল্প কি ফুরালো?

এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে–ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার যে আখ্যান, তার চরম সংকটময় অধ্যায় থেকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীর বেশে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে তেহরান যে ‘সীমিত’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাকে ট্রাম্প সম্ভবত ইরানের নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই ধরে নিয়েছেন।

ট্রুথ সোশালে তিনি লিখেছেন, “অভিনন্দন বিশ্ব, এখন শান্তির সময়।”

ট্রাম্পের এ উচ্ছ্বাসে বোঝা যায়, তিনি চলমান সংঘাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার ইতি দেখতে পাচ্ছেন; অন্তত এ মুহূর্তের জন্য।

এমন উচ্ছ্বাসের পরেই তিনি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিরতি প্রায়ই নাজুক ও ক্ষণস্থায়ী প্রমাণিত হয়।

এবারও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগ মুহূর্তে এসেও ইরান ও ইসরায়েল একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে।

কিন্তু ইরানে মার্কিন বোমা হামলার ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির দূত’ ও চুক্তি সইয়ের দক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জাহির করতে চাইছেন।

সোমবার রাতে এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এই যুদ্ধবিরতি চিরস্থায়ী হবে।”

সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ইসরায়েল ও ইরান আর কখনো একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি চালাবে না।

 

ছবি: রয়টার্স

 

অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যকে দেখেন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ‘সমাধিক্ষেত্র’ হিসেবে। সেই জায়গা থেকে দেখলে ট্রাম্প সাহসী পদক্ষেপই নিয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের এসব কথাবার্তা সত্যিকারের কূটনৈতিক অগ্রগতি, নাকি তা আরেকটি ‘ট্রাম্পীয় মরীচিকা’, সময়ই বলে দেবে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল অভিযোগ তোলে, ইরান চুক্তি ভঙ্গ করেছে। কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা। যদিও তেহরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করতে পেরেছে? নাকি এটি তার আরেকটি ‘ধ্রুপদী বিভ্রম’?

এই সংঘাতের একটি অসমাপ্ত দিকও রয়েছে। সেটা হল, ইরানের হাতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ থাকার কথা বলা হচ্ছে, যা দ্রুত বোমায় রূপান্তর করা সম্ভব।

ফলে আরও বড় একটি সংকট সামনে অপেক্ষা করছে কিনা, সেই প্রশ্নের সুরাহাও এখনো হয়নি।

সিএনএন বলছে, অল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটলে তা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ও উত্তরাধিকারকে আকার আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিষয়টি তার পররাষ্ট্রনীতিকেও চাঙ্গা করে তুলতে পারে, যা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঘিরে ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

কিন্তু রক্তমাখা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোয় ভূমিকা রাখতে পারলে ইতিহাস কি ট্রাম্পকে ‘বিশৃঙ্খলার কর্তার’ পরিবর্তে ‘শান্তির দূত’ ভাবতে শুরু করবে?

প্রশ্ন হল, ইসরায়েলের জন্য কী অপেক্ষা করছে? ইরানে হামলা বন্ধের ব্যাপারে ট্রাম্প কি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাস ধরে রাখতে পারবেন?

কিংবা না খেয়ে মরতে থাকা গাজার হাজার হাজার মানুষের জন্য ইসরায়েল কি শেষমেশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেবে?

আবার তেহরানের ধর্মীয় শাসকদের এই ‘অপমান’ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নেটওয়ার্কের ভাঙন কি কোনো রাজনৈতিক বসন্তের জন্ম দেবে, যা ইরানের অনেক মানুষ আশা করে বসে আছে?

 

 

ট্রাম্পের ‘বিজয়’

সিএনএন লিখেছে, এ যুদ্ধবিরতিকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের মেয়াদকালের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ও সামরিক সাফল্য হিসেবে দাবি করতে পারেন।

ট্রাম্প বাজি ধরেছিলেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাবেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের চোরাবালিতে ডুবতে দেবেন না।

ট্রাম্পের এ বাজিকে অবশ্য অনেক সমালোচক ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক প্রমাণিত হয়েছেন।

যদিও ইরানে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে শুরুর দিকে ট্রাম্প কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে জড়ানোকে শুরুতে তিনি পরিকল্পিত ফাঁদও ভেবেছিলেন। কিন্তু তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনেন এবং ‘তুলনামূলক কম খরচে’ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘মারাত্মকভাবে দুর্বল’ করে দেন।

ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তা ‘সফল’ হয়।

ভাগ্যও হয়ত কিছুটা সহায় ছিল, কিন্তু ট্রাম্প বি-টু বোমারু বিমান দিয়ে হামলার সিদ্ধান্ত ক্ষেত্রে কৌশলগত ‘সক্ষমতা ও দূরদৃষ্টি’ দেখিয়েছেন।

এখন যদি সংঘাতের মাত্রা কমে আসে, তাহলে মার্কিন রাজনীতিতে, অন্তত রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের সমর্থন বেড়ে যাবে। এছাড়া ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ শিবিরে তার যুদ্ধবিরোধী ভাবমূর্তি যতটা ক্ষুণ্ন হয়েছিল, সেটাও তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ও এ সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে এসেছে।

যেমন— এটা বোঝা গেল যে তিনি পূর্বসূরিদের মতো যুদ্ধবাজ কোনো প্রেসিডেন্ট নন; আবার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অন্ধ অনুসারীও নন।

 

 

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের চারপাশে একটি নির্ভরযোগ্য পরামর্শক দলও গড়ে উঠেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন, সিআইএ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ এবং প্রেসিডেনশিয়াল দূত স্টিভ উইটকফ।

তবে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ভবিষ্যৎ এখনও কিছুটা অনিশ্চিত।

আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে ট্রাম্পের। কিন্তু প্রয়োজন পড়লে সামরিক শক্তি ব্যবহারে যে পিছপা হবেন না, সে বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান এ সংকট ট্রাম্পের নেতৃত্বের আরও কিছু উদ্বেগজনক দিকও সামনে এনেছে।

যেমন— তিনি দেশকে কোনো ধরনের আভাস না দিয়েই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে তিনি আলোচনার প্রয়োজনবোধ করেননি।

এটি ছিল কংগ্রেসের প্রতি তার অবজ্ঞার সবশেষ নজির।

আবার তিনি কোন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরানে হামলা চালালেন, তা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সামনে তুলে ধরেননি।

তিনি মার্কিন গোয়েন্দাদের মূল্যায়নও উপেক্ষা করেছেন, যেখানে বলা ছিল, তেহরান এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদেরও অবজ্ঞা করেছেন এবং তাদের শান্তি প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করেছেন।

সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের এমন মনোভাবে এটাই ফুটে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের মিত্রদের থেকে সরে গিয়ে শুধু নিজের স্বার্থের পেছনে ছুটেছে।

 

ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কী হবে?

চলমান এ সংঘাত ঘিরে যে জটিল প্রশ্নটি সামনে এসেছে, সেটির উত্তর এখনও মেলেনি।

যদিও শনিবার মধ্যরাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানে হামলা চালানোর উদ্দেশ্য ছিল তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা ‘ধ্বংস করা’ এবং বিশ্বের ‘সন্ত্রাসবাদের এক নম্বর পৃষ্ঠপোষকের‘ পারমাণবিক বোমার হুমকি বন্ধ করে দেওয়া।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন হামলায় ইরানের ইস্পাহান, নাতাঞ্জ ও ফোরদোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেটার ভিত্তিতে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করার সময় এখনও হয়নি।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা— আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি রোববার সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়ামের ৪০০ কেজির একটি মজুত ‘রক্ষা’ করতে সক্ষম হয়েছে, যা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি।

ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, তার কৌশল ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনবে, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা চুক্তির একটি বিকল্প তৈরি করা যাবে।

ওবামার চুক্তিটি ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই বাতিল করে দিয়েছিলেন।

 

ইসরায়েলের দিকে ধেয়ে যাওয়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: রয়টার্স।

 

সিএনএন আরো বলছে, ইরানের সামরিক নেতারা এবারের সংঘাত থেকে নতুন একটা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তা হল— ইসলামি বিপ্লবকে বাঁচাতে হলে তাদের একমাত্র পথ একটি পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলা।

আবার ইরানের তরফে এখনও এমন বার্তাও আসেনি যে, তারা নতুন চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পথ থেকে সরে দাঁড়াবে।

আর্মড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কেলসে ডাবেনপোর্ট বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে দেখলে ইরানে ট্রাম্পের হামলা ছিল বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের আরও কাছে নিয়ে যেতে পারে।

“এ হামলায় ফোরদোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ গোপন কোনো স্থানে সরিয়ে ফেলার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল এবং সম্ভবত সেটিই তারা করেছে।”

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কাজ করা জোসেফ সিরিনসিওন বলেন, “ইরানের পারমাণবিক জ্ঞান বা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে বোমা মেরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তারা তাদের স্থাপনাগুলো আবার গড়ে তুলতে পারে।”

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এই গোপন ইউরেনিয়াম যদি নতুন সেন্ট্রিফিউজে ঢোকানো হয়, তাহলে তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে দশটি বোমা বানিয়ে ফেলতে পারে।

“আর এটাই আমার কাছে বড় উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েল খুঁজে পাওয়ার আগেই তারা কি সেই অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করবে?”

যদি এসব আশঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্পের বিজয় উদযাপন এবং রিপাবলিকানদের প্রশংসা ভবিষ্যতে গভীর রাজনৈতিক গাফিলতি এবং আরও বড় একটি বৈশ্বিক সংকট হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।

 

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: রয়টার্স

 

পরিবর্তিত মধ্যপ্রাচ্য

কাতারে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে সোমবার ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা সহজেই প্রতিহত করে দেয়।

এ ঘটনা কিংবা ইরানের আকাশসীমা ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়াকে তেহরানের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক— যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুতিদের একসময় তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির রক্ষাকবচ ভাবা হত।

কিন্তু গত ২০ মাসে ইসরায়েলি হামলায় এরা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানও এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ইসরায়েল একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর সৌদি আরব ও কাতারের মতো মার্কিন মিত্ররা নতুন এক মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্বের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে।

ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

দেশটির ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া আগে থেকেই জটিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ক্ষমতা হস্তান্তর আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে ইসরায়েলেও। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে নেতানিয়াহুর অনীহা এবং ইরানে হামলা চালানোকে ইসরায়েলের অনেকেই তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।

তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

এ সংঘাতের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু সম্পর্কও নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে। ট্রাম্প কখনোই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। সেক্ষেত্রে তিনি চাইলে ইরানে মার্কিন হামলার ‘প্রতিদান’ হিসেবে ফিলিস্তিন বিষয়ে একটা চুক্তি করতে নেতানিয়াহুকে চাপে ফেলতেও পারেন।

 

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম