ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক, ছক্কা ছাড়া যেন কথা নেই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের, এ বছর স্রেফ ৬ টি-টোয়েন্টিতে খেলেই তাদের ছক্কা ৭৭টি!
ছক্কার ডানায় উড়ছে অস্ট্রেলিয়া

- আপডেট সময় ০১:৪৩:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
ম্যাচের পরিস্থিতি কিংবা উইকেটের আচরণ যেমনই হোক, অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা যেমন সেসব পাত্তাই দিচ্ছেন না। ছক্কা ছাড়া কথাই নেই তাদের! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছক্কার তাড়না এমনিতে ব্যাটসম্যানদেরথাকে সবসময়ই। সেটিকেই এখন যেন অন্য উচ্চতায় তুলে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সেই ছক্কা অভিযাত্রীদের একজন টিম ডেভিড বললেন, ছক্কার উৎসবে মেতে উঠেই এখন টি-টোয়েন্টির জগতে রাজত্ব করতে চান তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই যেমন বারবার দেখা গেছে এই চিত্র। ডারউইনে রোববার ম্যাচের প্রথম বলটিই ছক্কায় উড়িয়ে দেন মিচেল মার্শ।
পরের দুই ওভারে দুটি উইকেটের পতন হয়। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিন ক্রিজে গিয়েই দুটি চার একটি ছক্কায় পাল্টা জবাব দেন। পরের ওভারে উইকেট পড়ে যায় আরও একটি। প্রথম চার ওভারের মধ্যেই নেই তিন উইকেট। তবু নতুন ব্যাটসম্যান টিম ডেভিড গিয়েই ছক্কা মেরে দেন দ্বিতীয় বলে।
বিপর্যয়ের মধ্যেই তিন ছক্কা ও চারটি চারে ১৩ বলে ৩৫ করে আউট হয়ে যান গ্রিন। ৭৫ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে ছক্কার স্রোতেই এগিয়ে নেন ডেভিড। আরেকপাশে নিয়মিত উইকেট পতনের তোয়াক্কা না করে ৮ ছক্কায় তিনি করেন ৫২ বলে ৮৩।
মোট ১৩টি ছক্কা আসে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারাতেই চলছে তারা। গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও গড়ে প্রতি ম্যাচ প্রায় ১৩টি করেই ছক্কা ছিল অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসে!
সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ছক্কা ছি ১৭টি, পরের ম্যাচে ১২টি, তৃতীয় ম্যাচে ১৬টি। পরের দুই ম্যাচে ছিল ১১টি ও ৮টি। সিরিজের ৫ ম্যাচে মোট ছক্কা ছিল ৬৪টি।
এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে এ বছর ৬ ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার ছক্কা ৭৭টি! ম্যাচপ্রতি ছক্কা ১২.৮৩টি করে।
এই ছয় ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া জিতেছে। সবমিলিয়ে টানা ৯টি টি-টোয়েন্টি জিতে তারা গড়েছে নিজেদের রেকর্ড।
শীর্ষ ক্রিকেট দেশগুলোর মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ছক্কা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে ১৩০ ছক্কা মেরেছে তারা ১২ ম্যাচে। মানে ম্যাচপ্রতি ১০.৮৩টি করে। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে গড়ে দুটি করে কম।
পাকিস্তান ১০৮টি ছক্কা মেরেছে ১৪ ইনিংসে, ম্যাচপ্রতি ৭,৭১টি ছক্কা।
বাংলাদেশ প্রথমবার এক পঞ্জিকাবর্ষে ছক্কার সেঞ্চুরি করেছে। তবে তাদের ১০০ ছক্কা এসেছে ১২ ম্যাচে, ইনিংসপ্রতি ৮.৩৩টি ছক্কা। বাংলাদেশের জন্য এটিই উল্লেখযোগ্য উন্নতি, তবে এখনও অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায় ঢের পিছিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার এই ছক্কার স্রোততে তীব্র করেছে টিম ডেভিডের ব্যাটের জোয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি ১১ ছক্কায়। পরের ম্যাচে ৩০ রানের ইনিংসেই তার ছক্কা ৪টি। এবার ৮ ছক্কায় ৮৩।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ-সেরা হয়ে বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান বললেন, তারা এখন এই ধরনকে আলিঙ্গন করেই এগিয়ে যেতে চান।
“বেশ অনেকদিন ধরেই একটা দল হয়ে খেলছি আমরা, কোচদের কাছ থেকে তাই খুব বেশি নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না। তারা ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা রাখেন। আমরা নিজেদে সামর্থ্যে আস্থা রাখি মাঠে নেমে পরিস্থিতির দাবি মেটানোর। আমরা মাঠে নেমে স্বতস্ফূর্থ সিদ্ধান্ত নেই, কারণ এটিই টি-টোয়েন্টির ধরন।”
“সাম্প্রতিক সময়ে আপনারা যদি আমাদের ছেলেদের ব্যাট করতে দেখে থাকেন, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই যখন তারা ব্যাটিংয়ে নামে, দলের জন্যই খেলে তারা। সবটুকু নিয়েই জ্বলে ওঠার মতো ব্যাপার এটি। আমাদের দলের কাছ থেকে সামনেও এরকম দেখতে পাবেন। আমাদের মনে হয়, এভাবেই আমরা সেরাটা খেলি।”
ডেভিড নিজে যদি এমন ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলের দুয়ারও খুলে যেতে পারে। ২০২৩ সালে চারটি ওয়ানডে খেলেই থমকে আছে এই সংস্করণে তার ক্যারিয়ার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার গড় ৬০.৭৬, স্ট্রাইক রেট ১২০.০৬। তবে গত দুই বছরে ৫০ ওভারের ক্রিকেট তিনি খেলেননি।
২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান জানালেন, আপাতত তার ভাবনায় শুধুই টি-টোয়েন্টি।
“এটা (ওয়ানডে) আপাতত আমার পরিকল্পনায় নেই। সত্যি বলতে, এখন আমি শুধু আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে চাই এবং সেই পর্যন্ত এই সংস্করণেই টুর্নামেন্টগুলো খেলতে চাই।”
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ মঙ্গলবার।
স্পোর্টস ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম