আলোচনা, প্রদর্শনী, বই প্রকাশ ও গবেষণাসহ নানা আয়োজনে জন্মশতবর্ষের উদযাপন চলবে দুই বছর।
জন্মশতবর্ষে সুলতান: উদযাপনের মহাযজ্ঞ

- আপডেট সময় ১২:৫৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩৫ বার পড়া হয়েছে
চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষের উদযাপন চলবে দুই বছর ধরে; থাকছে আলোচনা, প্রদর্শনী, বই প্রকাশ ও গবেষণাসহ নানা আয়োজন।
উদযাপনের যাত্রায় শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ে হয়েছে ‘শিল্পী সুলতানের উত্তরাধিকার: কল্পনা, সৌন্দর্য ও সহজ মানুষের উত্থানের রাজনীতি’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান।
সুলতানের জীবনযাপন আর শিল্প ভাবনার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “অ্যাডভেঞ্চার, থ্রিল, শহর থেকে শহরে, নগর থেকে নগরে, হঠাৎ নিখোঁজ, হঠাৎ আবির্ভূত, হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া- এইসব ব্যাপারগুলোর মধ্য দিয়ে সুলতানের জীবন আমাদের কাছে অত্যন্ত রহস্য, বিভ্রম, ধোঁয়াশা বা কৌতূহল দিয়ে আচ্ছন্ন।
“আমরা যারা সুলতানকে জানতে চাইছি, বুঝতে চাইছি বা ভালোবাসতে চাইছি। সুলতান ইতিহাসের মধ্যে এক পৌরাণিক ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছেন। ফলে তার জীবন স্বয়ং কৌতূহল তৈরি করতে সক্ষম।”
এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ অগাস্ট নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামে মেছের আলী ও মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মশতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুলতানের জন্মশতবর্ষ তো ছিল গত বছর। কিন্তু গত অগাস্টে অভ্যুত্থানের কারণে আমরা পরিকল্পনা করেও করতে পারিনি। তখন তো তেমন পরিবেশও ছিল না।
“অন্তত পাঁচটি বক্তৃতা অনুষ্ঠান করার চিন্তা আছে আমাদের। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকেও আহ্বান জানাব, তারা আমাদের লোগো ব্যবহার করে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে। নিউ ইয়র্ক এবং জাপানেও স্থানীয়রা অনুষ্ঠান করবে।”
শনিবার সন্ধ্যার আয়োজনের শুরুতেই নাসির আলী মামুন নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।
শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান, শিল্পী ফরিদা জামান, মইনুদ্দীন, শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা, কথাশিল্পী হাসনাত আব্দুল হাই, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, গবেষক বদরুদ্দীন উমর, শাহমান মৈশানসহ অনেকে সুলতানকে নিয়ে বক্তব্য দেন।
মূল প্রবন্ধে শাহমান মৈশান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যিনি শিল্পী হয়ে ওঠেন একবার, প্রতিষ্ঠার ধারণাটা তার কাছে গৌণ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সমাজের মধ্যে, একটা রাষ্ট্রের মধ্যে কিছু সিঁড়ি বেয়ে কিছু ধাপ ডিঙানো এবং সেই ধাপ ডিঙানোর মাধ্যমে কিছু সামাজিক, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং ইত্যাদি ইত্যাদি।
“এস এম সুলতান এমন একজন শিল্পী, যিনি আসলে সিঁড়িযুক্ত সমাজকেই মানেন নাই। সুলতান এমন সমাজ কল্পনা করেছেন, যে এমন মানুষ কবে হবে বা এমন সমাজ কবে হবে যে সমাজে সিঁড়ি বা ধাপ বা প্রতিষ্ঠার ধারণাগুলোই থাকবে না। সুলতান এমন একটা কল্পভুবনে বাস করেছেন, যে কল্পভুবন তার কাছে সত্য ছিল। কিন্তু আমাদের কাছে শিল্পীর কল্পনা মাত্র।”
জন্মশতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমি তো শিল্প সমালোচক নয়। ফলে উনার শিল্পকর্ম নিয়ে তাত্ত্বিক কোনো বিশ্লেষণ করব না। তবে আমার সঙ্গে উনার দেখা হয়েছিল। উনার ভিন্ন ধারার জীবনাচারের কথা দেখা হওয়ার আগেই জেনেছিলাম।
“সুলতান তার ছবিতে মানুষকে পেশীবহুলভাবে দেখিয়েছেন৷ স্বশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন তিনি। নিজস্ব একটা জগৎ তৈরি করেছেন৷”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “প্রতিভাবান মানুষ গৎবাঁধা ছকে চলতে পারেন না। সুলতানও সেই ছকের মানুষ ছিলেন না। সুলতানের পড়াশোনা ছিল। এ ধরনের মানুষ নিজে থেকেই পড়েন। সুলতান সেই স্বশিক্ষিতদের একজন।”
অধ্যাপক আবুল মনসুর, শিল্পী মুস্তফা জামান, শিল্পী বিমানেশ চন্দ্র বিশ্বাসও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। নাসির আলী মামুনের সম্পাদনায় ‘সুলতান খনন’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে ।
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম