ভোট গণনা শেষ হতে সারা রাত লেগে যেতে পারে। ফলাফল সকালের পর ঘোষণা হতে পারে, বলছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
জাকসুর ভোট গণনা চলছে

- আপডেট সময় ০১:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের ভোট শেষে সিনেট ভবনে গণনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের ভোট শেষ চলছে গণনা।
প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ২১টি হলে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বড় ধরনের কোনো গোলযোগ ছাড়াই বিকাল ৫টায় শেষ হয়; এতে ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ।
হলের ভোটকেন্দ্র থেকে বাক্সগুলো সিনেট ভবনে আনা হয়। পরে রাত ১০টার কিছু পরে শুরু হয় ভোট গণনা।
সবার আগে কাজী নজরুল ইসলাম এবং এম এইচ হলের ব্যালট বাক্স খুলে শুরু হয় গণনা।
কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, একসঙ্গে দুটি করে হলের ভোট গণনা করা হবে। প্রথমে হল সংসদের, এরপর কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা হবে।
জাকসু ভোটের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বরাতে খবরে এসেছে, ভোট গণনা শেষ হতে সারা রাত লেগে যেতে পারে; আর ফলাফল সকালের পর ঘোষণা হতে পারে।
এর আগে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জন করেন।
কয়েকটি হলে ভোটারের দীর্ঘ লাইন থাকায় নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোটগ্রহণ করা হয়। সবশেষ রাত সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর হলগুলো থেকে ব্যালট বাক্স কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সিনেট ভবনে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকেই গণনা শেষ করে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে সিনেট ভবন ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের গেইটগুলোতে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের দেখা গেছে।
সিনেট ভবনে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, রাত ১০টার পরে ভোট গণনা হয়। প্রথমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের ব্যালট বাক্স খুলে ভোট গণনা শুরু হয়। দুটি হল করে প্রথমে হল সংসদের ভোট গণনা হবে, তারপর কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণণা হবে।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন।
বর্জনের ঘোষণা যাদের
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী। এ সময় তার পাশে প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ সাদি হাসানও ছিলেন।
বৈশাখী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভোটকেন্দ্র মনিটর করার জন্য জামায়াত নেতার কোম্পানি ঘিরে টেলিকাস্টসহ ভিডিও ক্যামেরা সাপ্লাই দিয়ে সিসি টিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
“আমাদের বিজয় ব্যাহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের সত্যিকার প্রতিফলণ ঘটছে না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।”
এর পর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানায় ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুরাদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই অনাস্থার কথা জানান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও ছাত্রশিবিরকে ভোট জালিয়াতিতে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেল।
একই অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেলের প্রার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ঘোষণা দিয়েছেন ভোট বর্জনের।
এছাড়া নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক।
তারা হলেন, গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা। বিকালে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান তারা।
ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা অসংগতি ও অনিয়মের কথা বলছিলেন। কিন্তু ভোট কারচুপির সরাসরি অভিযোগ কারও ছিল না। তারা কেন্দ্রে ভোটের চেয়ে ব্যালট বেশি যাওয়া, প্রতিপক্ষের আচরণবিধি ভঙ্গ করা, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করা, পোলিং এজেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডোপটেস্টের ফলাফল না আসা, নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করার নানা অভিযোগ আসছিল।
কার কী প্যানেল
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলে আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং মো. শাকিল আলীর জিএস পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ছাত্রদল লড়ছে শেখ সাদী হাসান এবং তানজিলা হোসেন বৈশাখীর নেতৃত্বে।
ইসলামী ছাত্রশিবির ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে লড়বে। তাদের ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস মাজহারুল ইসলাম।
বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ লড়বে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়ামের নেতৃত্বে।
‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি লড়বেন। এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্যদে’ জিএস পদে জাহিদুল ইসলাম ঈমন, এজিএস-নারী পদে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস লড়াই করছেন।
ভোটারের তথ্য
জাকসুতে এবার মোট ভোটার ১১,৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬১১৫, ছাত্রী ৫৭২৮। একজন ভোটার ভোট দেবেন ৪০টি করে; কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি, হল সংসদে ১৫টি পদে।
এবার জাকসু ভোটের মোট প্রার্থী ১৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ১৩২ জন, নারী প্রার্থী ৪৬ জন। এখানে পদের সংখ্যা ২৫টি।
মোট ২১টি হল সংসদে পদের সংখ্যা ৩১৫টি। প্রতি হলে পদ সংখ্যা ১৫টি। মোট ৪৪৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ ছাত্র হলের প্রার্থী সংখ্যা ৩১৬ জন এবং ১০ ছাত্রী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৩১ জন।
নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম