০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
“চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে,”

জাকসু: অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলে ষড়যন্ত্র দেখছে `সম্প্রীতির ঐক্য’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করার প্রতিবাদ জানিয়েছে `সম্প্রীতির ঐক্য’।

ভোটের পাঁচ দিন আগে এসে এমন সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ, নিয়মবহির্ভূত ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন প্যানেলটির প্রার্থীরা।

শনিবার নির্বাচন কমিশন একটি প্রজ্ঞাপনে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের ঘোষণা দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, “গত বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১১ অগাস্ট অমর্ত্য যখন মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করেন, তখন একাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর দেখতে পায়, তিনি স্নাতক ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি।

“স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা ৪০৮ নম্বর কোর্সে তিনি দুইবার অকৃতকার্য হয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিল তাকে বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত ধরা হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

নির্বাচনী গঠনতন্ত্রের ৪ নাম্বার ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ছয় (চার+দুই) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে দুই (এক+এক) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সেসব শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

গঠনতন্ত্রের ৮ নাম্বার ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যেকোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট দিতে পারবে।

এদিকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদে রাত ৯ টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’।

সেখানে অভিযোগ করা হয়, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর এসে একজনের প্রার্থিতা বাতিল করার ঘটনা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও প্রশাসনের অনীহা স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

প্যানেলের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “প্রথম ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৭ অগাস্ট এবং হালনাগাদ করা হয় ২৯ অগাস্ট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম থাকলেও ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটি শুধু প্রার্থী নয়, ভোটারদের সঙ্গেও প্রতারণা।”

এর আগে অমর্ত্য রায়কে ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি গ্রাফিতি মোছার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে তিনি শুধু ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান, তবে ক্লাস ও ল্যাব পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পাননি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাসে ফেরেন।

 

অমর্ত্য রায়। ফাইল ফটোঅমর্ত্য রায়। ফাইল ফটো

 

প্যানেলের অভিযোগ, বহিষ্কারের সময়ে কিছু কোর্সে অংশ নিতে না পারায় অমর্ত্যের একাডেমিক ক্ষতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনায় না এনে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্যের’ অভিযোগ, “যেসব শিক্ষক ওই সময় আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলেন, তাদের একজন বর্তমানে উপ-উপাচার্য, একজন নির্বাচন কমিশনের সদস্য এবং আন্দোলনে যুক্ত থাকা এক শিক্ষার্থী বর্তমানে ভিপি পদে অমর্ত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে এ সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও ষড়যন্ত্রমূলক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী প্রাপ্তি দে তাপস্বী বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে অমর্ত্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই অন্যায্য বহিষ্কারাদেশের ফলে তার শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা না করেই প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এটা স্পষ্টত জাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র।”

প্রাপ্তি আরও বলেন, “আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সারাদেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্রের হিসাব নেবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করারও ঘোষণা দেন তারা।

 

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে,”

জাকসু: অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলে ষড়যন্ত্র দেখছে `সম্প্রীতির ঐক্য’

আপডেট সময় ১২:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করার প্রতিবাদ জানিয়েছে `সম্প্রীতির ঐক্য’।

ভোটের পাঁচ দিন আগে এসে এমন সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ, নিয়মবহির্ভূত ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন প্যানেলটির প্রার্থীরা।

শনিবার নির্বাচন কমিশন একটি প্রজ্ঞাপনে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের ঘোষণা দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, “গত বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১১ অগাস্ট অমর্ত্য যখন মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করেন, তখন একাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর দেখতে পায়, তিনি স্নাতক ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি।

“স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা ৪০৮ নম্বর কোর্সে তিনি দুইবার অকৃতকার্য হয়েছেন। একাডেমিক কাউন্সিল তাকে বিশেষ বিবেচনায় বিশেষ পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত ধরা হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

নির্বাচনী গঠনতন্ত্রের ৪ নাম্বার ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

যে সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ছয় (চার+দুই) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে দুই (এক+এক) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সেসব শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

গঠনতন্ত্রের ৮ নাম্বার ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যেকোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট দিতে পারবে।

এদিকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদে রাত ৯ টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’।

সেখানে অভিযোগ করা হয়, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর এসে একজনের প্রার্থিতা বাতিল করার ঘটনা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও প্রশাসনের অনীহা স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

প্যানেলের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “প্রথম ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৭ অগাস্ট এবং হালনাগাদ করা হয় ২৯ অগাস্ট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম থাকলেও ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এটি শুধু প্রার্থী নয়, ভোটারদের সঙ্গেও প্রতারণা।”

এর আগে অমর্ত্য রায়কে ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি গ্রাফিতি মোছার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে তিনি শুধু ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান, তবে ক্লাস ও ল্যাব পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পাননি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাসে ফেরেন।

 

অমর্ত্য রায়। ফাইল ফটোঅমর্ত্য রায়। ফাইল ফটো

 

প্যানেলের অভিযোগ, বহিষ্কারের সময়ে কিছু কোর্সে অংশ নিতে না পারায় অমর্ত্যের একাডেমিক ক্ষতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনায় না এনে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্যের’ অভিযোগ, “যেসব শিক্ষক ওই সময় আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিলেন, তাদের একজন বর্তমানে উপ-উপাচার্য, একজন নির্বাচন কমিশনের সদস্য এবং আন্দোলনে যুক্ত থাকা এক শিক্ষার্থী বর্তমানে ভিপি পদে অমর্ত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে এ সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও ষড়যন্ত্রমূলক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী প্রাপ্তি দে তাপস্বী বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে অমর্ত্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই অন্যায্য বহিষ্কারাদেশের ফলে তার শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা না করেই প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এটা স্পষ্টত জাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র।”

প্রাপ্তি আরও বলেন, “আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সারাদেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্রের হিসাব নেবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করারও ঘোষণা দেন তারা।

 

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম