ভোটের হিসাবে ‘গরমিলের’ একাধিক অভিযোগ সামনে আসায় পুরো ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের অনেকে বিষয়টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ মানতে নারাজ।
জাকসু নির্বাচন: ভোটের হিসাবে ‘গরমিল’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই

- আপডেট সময় ০৯:৪৩:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
অনিয়মের নানা অভিযোগ আর বর্জনের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট নেওয়ার পর তা গুনতে হয়েছে হাতে। একে ‘নির্ভুলের চেষ্টা’ বলা হলেও গণনা শেষ করতে লেগে গেছে দুদিন। তাতেও অব্যবস্থাপনা আর গরমিলের অভিযোগ পিছু ছাড়েনি।
ভোটের হিসাবে ‘গরমিলের’ একাধিক অভিযোগ সামনে আসায় পুরো ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খোদ কর্তৃপক্ষ একটি হলের ভোটের হিসাবে ‘তারতম্যের’ বিষয়টি ‘স্বীকারও’ করেছে, যার ফলে পাল্টে গেছে এক পদে বিজয়ীর নাম।
তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য না করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘আপত্তি থাকলে’ লিখিত অভিযোগ করতে বলেছেন জাকসুর সভাপতি তথা উপাচার্যের কাছে।
দীর্ঘ তেত্রিশ বছর পর নানা ‘নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে’ জাকসু নির্বাচন হয়েছে। এত দিন পর ভোটের কারণে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আর আগ্রহের কমতি ছিল না। কিন্তু উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে ফল ঘোষণার দীর্ঘসূত্রিতা আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগে।
ভোট গণনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলা টানা কর্মযজ্ঞের বিষয়ে হাতে গণনা ‘নির্ভুলের চেষ্টা’ বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ‘ভুলের কবলেই পড়েছে’ ফল। শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের অনেকে বিষয়টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, এটি ‘সুস্পষ্ট কারচুপি এবং অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ’।

প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট শেষে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ভোট গণনা শুরু হয় সেদিন রাত ১০টা থেকে। আর ফল ঘোষণা করা হয় শনিবার সন্ধ্যায়।
ভোটগ্রহণে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার অভিযোগের পর অধিকাংশ প্যানেলের বর্জন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোট গণনার কাজের মধ্যে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষকের মৃত্যুর মত ঘটনা লেখা থাকবে এ নির্বাচনের আমলনামায়।
তবে মূল বিপত্তি ঘটেছে ‘অভিযোগ থেকে মুখ রক্ষার জন্য’ ওএমআর মেশিনের বদলে হাতে ভোট গুনতে গিয়ে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনার অভিযোগ উঠলে নির্বাচন কমিশন ভোট গণনার কাজটি মেশিনের বদলে হাতে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। ফল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্জন ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হওয়া এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার তিন দিনেও আলোচনা-সমালোচনা চলেছে।
ফল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে শহীদ রফিক-জব্বার হল, জাহানারা ইমাম হল ও মওলানা ভাসানী হল সংসদ নির্বাচনে ভোটের হিসাবে ‘গরমিলের’ অভিযোগ উঠেছে।
জাকসুর ভোট বর্জনের করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
এর মধ্যে রফিক-জব্বার হলের ক্ষেত্রে বাংলা সংখ্যা চারকে ইংরেজির আট ভেবে যোগ করায় ভোটসংখ্যায় তারতম্য এবং এক জয়ী প্রার্থী পাল্টে যাওয়ার ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
জাহানারা ইমাম হলেও ভোটসংখ্যায় তারতম্যের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেননি হলের নির্বাচনি কর্মকর্তা।
আর মওলানা ভাসানী হলের এক ভোটার ভোট দেওয়ার পরেও তার প্রার্থীর নামের পাশে ‘শূন্য ভোট’ দেখানোয় নিজের ভোটের ‘হিসাব চেয়েছেন’। যদিও এমনটি হওয়ার ‘সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে বিষয়টিকে ‘ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছেন ওই হলের নির্বাচনি কর্মকর্তা।
শহীদ রফিক-জব্বার হল
নির্বাচনের ঘোষিত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শহীদ রফিক-জব্বার হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে চার প্রার্থী মিলে ৫১৩ ভোট পেয়েছেন। অথচ হলে মোট ভোট পড়েছে ৪৬৯টি। অর্থাৎ ফলে ৪৪ ভোট গরমিল হয়েছে।
ডাইনিং অ্যান্ড ক্যান্টিন সম্পাদক পদে ১৩২ ভোট পাওয়া আশরাফুল ইসলামকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফর রহমান রিফাত ও মো. ইউসুফ আহমেদ ইমন ১২৯ ভোট করে এবং মো. আবু সায়েম ১২৩ ভোট পান।

জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে বাম-প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার জয় বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “গণনায় ভুল হয়েছে। বাংলার ৪ সংখ্যাকে ইংরেজি ৮ হিসেবে ধরা হয়েছিল। আমরা এর জন্য অনুতপ্ত।”
তার কথায়, “দুই বাক্সে ভোট ছিল। একটিতে ৫০, অন্যটিতে ৪২। কিন্তু হাতে লেখা থাকায় ৪২ কে ৮২ ভেবে গণনা করা হয়েছে। ফলে আশরাফুলের ভোট ১৩২ দেখানো হলেও প্রকৃত সংখ্যা ৯২।”
ভুল করে গণনা করা বাড়তি ৪০ ভোট বাদ দিলেও ওই হলে মোট ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭৩, যা মোট গ্রহণকৃত ভোটের চেয়ে ৪টি বেশি।
কর্তৃপক্ষের এই ভুল সংশোধন করলে আশরাফুল ইসলাম আর বিজয়ী থাকেন না। ‘গরমিলের’ হিসাব চুকিয়ে তার পরিবর্তে কে বিজয়ী হবেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও সেটি বলা হয়নি।
বিজয়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত কারণে ফল ঘোষণার সময় তিনি হলে উপস্থিত ছিলেন না। পরবর্তীতে হল প্রাধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার জয় বলেন, হাতে লেখা ভোটের সংখ্যায় বিভ্রান্তি থেকে এ ভুল হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফুল বলেন, “জয়-পরাজয় আমার বড় বিষয় নয়। কিন্তু সারা দেশের মানুষ যখন ফলাফল দেখেছে, আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, তখন এসে বলা হল- ‘ফলাফলে ভুল হয়েছে’।
“এত সময় নিয়েও এ ধরনের গুরুতর ভুল অত্যন্ত দুঃখজনক।”
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে মোহাম্মদ আবু সায়েমের ভোট ১২৩ বলা হলেও ওয়েবসাইটে আপলোড করা তথ্যে তার ভোট সংখ্যা ৭৯ রয়েছে। এখানেও ৪৪ ভোটের অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে এটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দাবি করেন ওই হলের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া। সেখানে তিনি ডাইনিং অ্যান্ড ক্যান্টিন সম্পাদক পদে বাড়তি ৮৪ ভোট পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
বিবৃতিতে রিটার্নিং অফিসার বলেন, “রফিক-জব্বার হল সংসদের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সেক্রেটারি পদে যে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, সেখানে মোট ভোটের যোগফল অনিচ্ছাকৃতভাবে ৫১৩ হয়েছে, যদিও মোট ভোট কাস্টিং হয়েছে ৪৬৯ এবং এর মধ্যে ডাইনিং ও ক্যান্টিন সেক্রেটারি পদে তার প্রার্থীর মোট ভোট পড়েছে ৪২৯টি।”
ফল ঘোষণার পর বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে হল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে অধিকতর যাচাই করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যাচাই-বাছাই করে হল কর্তৃপক্ষ দেখতে পান, প্রার্থী আবু সাইম একটি টালি শিটে ৩৫ এবং অন্য টালি শিটে ৪৪ ভোট পান। অন্য একজন প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম একটি টালি শিটে ৫০ এবং অন্য টালি শিটে ৪২ ভোট পান।
“সংখ্যাগুলো লেখা ছিল বাংলায়। ভুলবশত উল্লিখিত প্রার্থীদের ভোট যোগ করার সময় বাংলা ৪৪ এবং ৪২ কে ইংরেজিতে ৮৮ এবং ৮২ ধরে যোগ করার ফলে মোট ভোট বেড়ে ৫১৩ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এখানে বাংলা চার কে ইংরেজিতে ৮ ভেবে যোগ করার কারণে ভুলটা হয়েছে।”
রিটার্নিং অফিসার মাহাবুবুর রহমান বলেন, ভুলটা যখন হয় তখন ছাত্র প্রতিনিধিরা সামনে থাকলেও কারও ‘চোখে পড়েনি’। কিন্তু ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়লে দ্রুত সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
তার ভাষ্য, “ফলাফলের যে পরিবর্তন হয়েছে, তা সকল প্রার্থীকে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে জানানো হয়েছে। তারা অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন ও মেনে নিয়েছেন।”
বিবৃতিতে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এর পরেও কোনো বিষয়ে ‘অস্পষ্টতা বা আপত্তি কিংবা অভিযোগ’ থাকলে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ‘ডকুমেন্টসহ তথ্য দিয়ে’ সহযোগিতা করা হবে।”
রিটার্নিং অফিসারের দাবি অনুযায়ী ‘মেনে নিয়েছেন’ কি না, এ প্রশ্নে আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি তো বাড়ি আসছিলাম। স্যার আমাকে ফোন করে বলেছেন, হিসাবে ভুল করেছেন।
“উনারা ওনাদের জায়গা থেকে বলেছেন। আমি মেনে নিয়েছি। আমি চাই না এটা নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হোক।”
জাহানারা ইমাম হল
জাহানারা ইমাম হলে মোট ভোট পড়েছে ২৪২টি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলে ভোটের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৪৭টি। যা আসল ভোটের তুলনায় পাঁচটি বেশি।
হলের রিটার্নিং অফিসার নাসরিন খাতুন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এ হলে এজিএস পদের প্রার্থী লামিয়া জান্নাত ও সাদিয়া জান্নাত দুজনেই ১১৩ ভোট করে পান। কমিশন দুজনকেই জয়ী ঘোষণা করে ছয় মাস করে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়।
তবে লামিয়া জান্নাতের একটি ভোট কেবল ‘টিক চিহ্ন’ নির্দিষ্ট বক্সের বাইরে চলে যাওয়ায় বাতিল করা হয় বলে এটি নিয়ে আপত্তি করেছেন তিনি।
লামিয়া বলেন, “শুধু টিক চিহ্ন সামান্য বাইরে যাওয়ায় আমার ভোট বাতিল করা হয়েছে। অথচ অন্য হলে একই ক্ষেত্রে ভোট বাতিল করা হয়নি। হাতে ভোট গণনায় এই ভোট বাতিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার নাসরিন খাতুনের ভাষ্য, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গেলে ভোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মওলানা ভাসানী হল
নির্বাচনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করা নীহ্লা অং মারমার মওলানা ভাসানী হলে শূন্য ভোট পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তাকে ভোট দেওয়ার দাবি তোলা একই হলের শিক্ষার্থী রেলং খুমির এখন প্রশ্ন, “আমার একটা ভোটের হিসাব কোথায় গেল?”
নির্বাচিত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেইসবুক পোস্টে রেলং খুমি বলেন, তার ‘কাছের ছোটভাই’ নীহ্লা অং মারমা কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচন করে জেতেনি। শূন্য ভোট পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মওলানা ভাসানী হলের ভোটের ফলের একটি শিট জুড়ে দিয়ে রেলং খুমি লেখেন, “এই হলেই আমার দীর্ঘ ৪ বছর ধরে থাকা। তা ছাড়া এখানে আদিবাসী কমিউনিটির অনেকের হল বরাদ্দ আছে, পাশাপাশি তার (নীহ্লা অং মারমা) অনেক বন্ধু-বান্ধব, জুনিয়র সিনিয়র থাকে। কথা হচ্ছে, কেউ আসলেই তাকে ভোট দেইনি?
“ধরে নিলাম প্রার্থীর বন্ধু-বান্ধব, জুনিয়র-সিনিয়র কেউ তাকে ভোট দেইনি। এটাও ধরে নিচ্ছি আদিবাসী কমিউনিটির কেউ তাকে ভোট দেইনি। কিন্তু আমি একজন হলেও তাকে ভোট দিয়েছি, জেনে শুনেই সাবধানতায় ব্যালট পেপারে টিক চিহ্ন দিয়েছি, যাতে ঘরের বাইরে দাগ পড়ে গিয়ে বাতিল না হয়ে যায়। ফলাফলে অত্যন্ত শূন্যের জায়গায় এক হওয়ার কথা, কারণ আমি তাকেই ভোট দিয়েছি।”
ভোটের ফলে ‘গাফিলতি করে বা কারচুপি’ করা হয়েছে কি না, নির্বাচন কমিশনের প্রতি সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রেলং খুমি বলেন, “নীহ্লা অং মারমা আমার খুব কাছের ছোট ভাই। ফলাফলের রাতে বটতলায় খাওয়া শেষ করে বেরিয়েছি তখন সে আমাকে বলে দাদা, আপনার হলের কেউ আমাকে ভোট দিলেন না?”
নীহ্লার কাছে রেজাল্ট শিট দেখেছেন জানিয়ে রেলং খুমি বলেন, “দেখলাম- ওখানে আসলে শূন্য দেওয়া আছে। কিন্তু এটা কেন? আমি তো ভোট দিয়েছি এবং খুব সচেতনভাবেই দিয়েছি। প্রথমে ভাবলাম ভুল করে ভোট সংখ্যা ওঠেনি, পরে বাকিগুলো যোগ করে দেখি ৪৭৬টিই দেওয়া আছে।
“এখন তার অন্য সহপাঠীরা ভোট দিয়েছে কি না, আমি জানি না। কিন্তু আমি ভোট দিয়েছি। আমার ভোটটি কোথায় গেল একজন ভোটার হিসেবে, জাহাঙ্গীরনগরের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমার জানা উচিত।”
অভিযোগ নিয়ে মওলানা ভাসানী হলের রিটার্নিং অফিসার কাজী মহসিন শুরুতে দাবি করেন, যে প্রক্রিয়ায় ভোট গণনা হয়েছে সেখানে ভুল হওয়া ‘সম্ভব না’।
তিনি বলেন, “যখন ভোট গণনা করা হয়, তখন প্রত্যেক প্রার্থীর যার যার এজেন্টরা উপস্থিত ছিল। সবার সামনেই কাউন্ট করা হয়েছে। ব্যালটগুলো ভাগ করে কাউন্ট করা হয়েছে। ভোটগুলো যোগ করার পরেও একাধিকবার ‘ক্রস চেক’ করা হয়েছে।
“বার বার চেক করার পর ফাইনালাইজ করা হয়েছে। প্রত্যেকের এজেন্টই সামনে বসা ছিল, কাউন্ট শেষে ফাইনাল শিটে এজেন্টদেরও স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। একটু ভুল হলেও ওদের তো সাইন করার কথা না।”
এমন অভিযোগ নির্বাচনকে ‘ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা’ হতে পারে বলেও মনে করেন রিটার্নিং অফিসার কাজী মহসিন।
তবে নীহ্লার দাবি, ভোট গণনার সময় তার কোনো এজেন্ট উপস্থিত ছিল না। সুযোগ থাকলেও ‘ইচ্ছে করেই’ এজেন্ট দেননি।

ওই হল থেকে তার সহপাঠী এবং কমিউনিটির অন্তত ১০-১৫ ভোট ‘পাওয়ার কথা’ দাবি করে তিনি বলেন, “এই ভোটে জয়-পরাজয়ের ফলাফলে হয়ত কোনো প্রভাব পড়ত না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে দাবি করেছে, ‘ভোটে কোনো অনিয়ম বা কারচুপি হয়নি’।
“আমার এই শূন্য ভোটই প্রমাণ করে- সেখানে সুস্পষ্ট কারচুপি হয়েছে। শুধু ভাসানী হল নয়, আরও কয়েকটি হলে নানান রকমের কারচুপি হয়েছে, যেগুলো পর্যায়ক্রমে সামনে আসছে।”
অপরদিকে অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাইবাছাই করে নীহ্লা অং মারমার শূন্যের পরিবর্তে ১৭টি ভোট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মওলানা ভাসানী হলের রিটার্নিং অফিসার কাজী মহসিন।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা যাচাইবাছাই করে দেখতে পেয়েছি, আমরা যে টালি শিট করে দিয়ে এসেছিলাম, ফাইনাল শিটে ভোটের সংখ্যাটি ভুলবশত তোলা হয়নি। আমরা শুধু টালি শিট করে দিয়ে এসেছিলাম, ফাইনাল শিট অন্যরা প্রস্তুত করেছেন।
“নীহ্লা অং মারমা ১৭ ভোট পেয়েছেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। এতক্ষণে ওয়েবসাইটেও সংখ্যাটি আপডেট হয়ে যাওয়ার কথা।”
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
ভোটের এসব অভিযোগের বিষয়ে জাকসু সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, “ভোট গণনায় কোনো ভুল হলে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার দেখবেন। আমাদের কাছে যে ফলাফলের শিট এসেছে, আমরা কেবল তা ঘোষণা করেছি।
“ফলাফল নিয়ে আপত্তি থাকলে জাকসুর সভাপতি তথা উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম