“যদি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না,” বলেন আখতার।
‘জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের আগে ভোটের তারিখ নয়: এনসিপি

- আপডেট সময় ১১:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
‘জাতীয় সনদ’ ও জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের আগে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিপক্ষে মত দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
তারা বলেছে, অবশ্যই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।
আর জামায়াতে ইসলামী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন আনুপাতিক হারে চায়।
রোববার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।
এদিন ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের ১৯তম দিনের বৈঠক।
এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “অন্তর্বতী সরকার যদি একটি দলের সাথে আলোচনা করে বা এক দলের সাথে কথাবার্তা বলে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করে, তাহলে বাংলাদেশের বাকি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
“অবশ্যই জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের পরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে যায়-এরকম সুপারিশগুলোতে একমত হতে পারে, তাহলে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব।”
আখতার বলেন, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে বলে এনসিপি মনে করে।
দলটির সদস্য সচিব বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে-এরকম একটা সময়সীমা অনেক আগেই বলেছেন। আমরা মনে করি এই সময়সীমার মধ্যেই বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান পর্যায়ের উন্নীত করা সম্ভব। একই সাথে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সে সময়কালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন হতে পারে।”
জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ ঘোষণার বিরোধিতার কথা তুলে ধরে আখতার হোসেন বলেন, “যদি সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা না করে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, সেটা যে গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটা বলার অবকাশ রাখে না।”
যৌথ ঘোষণায় সকল প্রস্তুতি শেষ হওয়া সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানানো হয়েছিল।
এছাড়া, শনিবার ১৩টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।
এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, সেই নির্বাচন যেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে, যারা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যারা বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন-এই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়াই যদি সরকার নির্বাচনের মত বিষয়কে খোলাসা করতে শুরু করে, এটাকে যদি সুনির্দিষ্ট করতে শুরু করে তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনা করব।”

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ‘খবর জানে না’ জামায়াত
প্রধান উপদেষ্টা চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন-এমন খবর জামায়াতের কাছে নেই বলে দাবি করেছেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
মোস্তফা জামাল হায়দার সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে জামায়াতের মন্তব্য জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “এমন খবর আমাদের কাছে নেই। আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রধান উপদেষ্টা এটা বলেননি।
“আমরা আশা করছি এবং কমিশনও চেষ্টা করছে, মোটামুটি এই পয়েন্টে একমত যে আগামী ৩১ শে জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ (জাতীয় সনদ) ঘোষণা করা হবে।”
নারী আসনে যেভাবে ভোট চায় বিএনপি
জাতীয় সংসদে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন ঠিক রেখে, ৩০০ আসনের ভিত্তিতে প্রথমে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “বিদ্যমান ৫০টি নারী আসন ঠিক রাখার পক্ষে আমরা। যেহেতু সংবিধান সংশোধন হচ্ছে না সংসদ ছাড়া। আসন্ন নির্বাচনে এ বিধান মৌখিকভাবে, ৩০০ আসনের ভিত্তিতে ৫ শতাংশ আসনে অর্থাৎ ১৫টি আসনে রাজনীতিক দলগুলো নারীদের সরাসরি নির্বাচনের মনোনয়ন দেবে।
“সংবিধান যখন সংশোধন হবে, সংশোধিত সংবিধানের ভিত্তিতে পরবর্তীতে যখন নির্বাচন হবে তখনকার জন্য প্রস্তাব করেছি, ৩০০ আসনের ভিত্তিতে ১০ শতাংশ আসনে অর্থাৎ ৩০টি আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা। প্রত্যেক দল যেন সেই বিধান রাখে।”
সালাহউদ্দিন বলেন, “বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি থাকলে সরাসরি ভোটে ৩০ আসনসহ নারী আসন ৮০টিতে উন্নীত হবে। এইভাবে যদি সমাজের অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়, নারী সমাজের অগ্রগতি লক্ষ করা যায় এবং জাতীয় ভিত্তিতে যদি জনমত আসে তখনকার বিবেচনায় পরবর্তী সংসদ হয়তো এই সরাসরি নির্বাচনের বিধানটা আরো সম্প্রসারিত করতে পারে। এই প্রস্তাব রেখেছি আমরা।”
নারী আসন আনুপাতিক হারে চায় জামায়াত
নারীদের জন্য সংসদে ১০০ আসন রাখার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে দাবি করে জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “সংসদে নারী প্রতিনিধিদের ব্যাপারে কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে, এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকবে কমপক্ষে। অর্থাৎ ৩০০ আসন পুরুষ, ১০০ আসন নারী, ৪০০ আসনের সংসদের ব্যাপারে অধিকাংশ দলই ঐকমত্য পোষণ করেছে।”
তবে নারী আসনের নির্বাচন প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতের বক্তব্য এ ব্যাপারে খুবই পরিষ্কার, ১০০ আসনের নারী প্রতিনিধি থাকতে পারে। তবে আমরা বলেছি, ৩০০ আসনের ভোটের আনুপাতিক হারে নারী আসন নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ পিআর পদ্ধতিতে ১০০ আসনে নারী সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছি।”
এদিনের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয় এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি, সংসদে নারী আসন ও সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব বিষয়ে আলোচনা চলছে।

ঐকমত্যের যাত্রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রোববারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাসদ মার্কসবাদীসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোর মধ্যে ৩৩টি তাদের মতামত দিয়েছে।
এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ করে ঐকমত্য কমিশন।
কোরবানির ঈদের আগে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়। এরপর ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করে কমিশন, যা এখনো চলছে।
এই আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, তা যুক্ত করে জাতীয় সনদ তৈরি হবে, রাজনৈতিক দলগেুলো তাতে স্বাক্ষর করবে।
এর অর্থ হল, জাতীয় সনদে যেসব সংস্কারের কথা লেখা থাকবে, সেসব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, সনদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা সেভাবে সংস্কার এগিয়ে নেবে।
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম