০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
লালমনিরহাট-৩

জাপা চেয়ারম্যানের আসনে দলীয় প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ

মিজানুর রহমান খান, স্পেশাল করেস্পন্ডেন্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
  • / ১১২ বার পড়া হয়েছে

বর্তমান সময়ে লালমনিরহাটে নতুনভাবে রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন, রেললাইন স্থাপন ও আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। রেলের এই উন্নয়নে লালমনিরহাট বুড়িমারী সেকশনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে আয় করছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। মিটারগেজ রেলপথটি ব্রডগেজে রূপান্তর ও ঢাকার সঙ্গে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে স্থানীয়দের।

তবে সার্বিক দিক দিয়ে লালমনিরহাট জেলা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার  নিয়ে ২৬০ দশমিক ৭৫ বর্গ কিলোমিটারের লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনটির বেশ উন্নতি ঘটেছে। জেলা শহরটি নান্দনিকের ছোঁয়ায় বেশ সাজানো। দশ বছর আগের এই জেলা শহরে যে কেউ এখন গিয়ে বলবেন শহরটির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। অনেকেই মন্তব্য করেন,  রাজশাহী সিটি শহরের নান্দনিক আদলে ধীরে ধীরে রূপ নিতে যাচ্ছে জেলা শহর লালমনিরহাট।

তবে জেলা শহরের এই আসনে শহরের ভেতর দিয়ে রয়েছে রেলপথ। শহরের  মূল বিডিআর গেট দিয়ে  আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল মিলে ৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। শহরের বিডিআর গেট এলাকায় রেলক্রসিংয়ের কারণে দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে শহরটি। ক্রসিংয়ের এক পাশে সদর হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশন, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আরেক পাশে জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ সরকারি কলেজ। প্রতিদিন এই লাইনে কয়েকবার ট্রেনের যাতায়াতের কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই ভোগান্তি নিরসনে একটি ফ্লাইওভারের দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, যেভাবে জেলা শহরটিকে সাজানো হয়েছে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ফ্লাইওভারসহ লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিও চালু করা হবে।

লালমনিরহাট-৩ আসনে জনসংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার ৪৭১ জন। এরমধ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৬। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪২ হাজার ৭১৫, নারী ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৫০ ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন।
বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তবে এবার আসনটি পেতে চায় আওয়ামী লীগ। জেলা সদরটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর মনোনয়ন নিশ্চিত।

তবে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, জিএম কাদের আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হিসাবে রয়েছেন জিএম কাদেরের সহধর্মিণী বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জাহিদ হাসান। তবে এই আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে বেশ জোরেশোরে আওয়াজ তুলেছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই  আসনে প্রথম, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় এবং ১১ দিন মেয়াদের ৬ষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, তৃতীয়,  চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম,  নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। একাদশ সংসদে এই আসনে মহাজোটের জাপার প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৮ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  আবু তালেব মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফরের আজিজুল হক। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মইনুদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম।  ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৭ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, লালমনিরহাট-৩। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুল হাবিব।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির  রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার এম ইসহাক। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হোসেন।  ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ভোটারবিহীন এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির  আসাদুল হাবিব দুলুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু। ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ  নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  জাসদের খোরশেদ আলম। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু।

এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেনÑ বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তিনি লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির টানা চারবারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তার রাজনৈতিক জীবনে ১৯৭৯ সালে তিনি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৬ সালে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করে ওই বছরেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান লালমনিরহাটের একজন জনপ্রিয় নেতা। এক সময়ে বিএনপির দখলে থাকা লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় আরও রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য,  জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন অনেকে। এলাকার সচেতন ভোটাররা বলেন, এখানে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপির কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের রিজার্ভ ভোট প্রায় কাছাকাছি হলেও এই আসনে জেলা শহর ও তার আশপাশের এলাকার ব্যাপক উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বেশ জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, এই আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনসমর্থন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষজন চাক্ষুষ উন্নয়ন দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের উন্নয়ন থামিয়ে রাখেননি। আমরা যখনই যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। দশ বছর আগের লালমনিরহাট আর এখনকার লালমনিরহাটের আকাশ জমিন পার্থক্য। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে লালমনিরহাটের অসমাপ্ত সব কাজ সমাপ্ত করা হবে। আগামী নির্বাচনে এই আসনে এবার আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করেছি।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (গোলাম মোহাম্মদ কাদের)। তবে আগামী নির্বাচনে তিনি এই আসনে প্রার্থী না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরিবর্তে এখানে  নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান, এমনটি শোনা যাচ্ছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান বলেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে এ পর্যন্ত সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সংসদ সদস্য জিএম কাদেরই আছেন। তবে কোনো কারণে জিএম কাদের রংপুরের আসনে প্রার্থী হলে এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তিনি (জাহিদ হাসান) পাবেন।

এদিকে, বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে এগিয়ে রাখছেন দলটির তৃণমূল কর্মীরা। এখানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী বলে দলটির নেতাকর্মীরা দাবি করেন। জেলা বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, ভোটের মতো ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।

অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলে, আগামী দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনের দাবিগুলো পূরণ হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। এলাকায় বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
এই আসনে জামায়াতের পক্ষে প্রার্থী থাকবে এমনটা আভাস পাওয়া গেলেও দলটি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেননি। অপরদিকে, এই আসনে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসাবে দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুল ইসলামের নাম উঠে এসেছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

লালমনিরহাট-৩

জাপা চেয়ারম্যানের আসনে দলীয় প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় ১১:০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

বর্তমান সময়ে লালমনিরহাটে নতুনভাবে রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন, রেললাইন স্থাপন ও আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। রেলের এই উন্নয়নে লালমনিরহাট বুড়িমারী সেকশনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে আয় করছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। মিটারগেজ রেলপথটি ব্রডগেজে রূপান্তর ও ঢাকার সঙ্গে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও রয়েছে স্থানীয়দের।

তবে সার্বিক দিক দিয়ে লালমনিরহাট জেলা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার  নিয়ে ২৬০ দশমিক ৭৫ বর্গ কিলোমিটারের লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনটির বেশ উন্নতি ঘটেছে। জেলা শহরটি নান্দনিকের ছোঁয়ায় বেশ সাজানো। দশ বছর আগের এই জেলা শহরে যে কেউ এখন গিয়ে বলবেন শহরটির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। অনেকেই মন্তব্য করেন,  রাজশাহী সিটি শহরের নান্দনিক আদলে ধীরে ধীরে রূপ নিতে যাচ্ছে জেলা শহর লালমনিরহাট।

তবে জেলা শহরের এই আসনে শহরের ভেতর দিয়ে রয়েছে রেলপথ। শহরের  মূল বিডিআর গেট দিয়ে  আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল মিলে ৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। শহরের বিডিআর গেট এলাকায় রেলক্রসিংয়ের কারণে দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে শহরটি। ক্রসিংয়ের এক পাশে সদর হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশন, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আরেক পাশে জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ সরকারি কলেজ। প্রতিদিন এই লাইনে কয়েকবার ট্রেনের যাতায়াতের কারণে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই ভোগান্তি নিরসনে একটি ফ্লাইওভারের দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, যেভাবে জেলা শহরটিকে সাজানো হয়েছে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ফ্লাইওভারসহ লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিও চালু করা হবে।

লালমনিরহাট-৩ আসনে জনসংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার ৪৭১ জন। এরমধ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৬। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪২ হাজার ৭১৫, নারী ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৫০ ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন।
বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তবে এবার আসনটি পেতে চায় আওয়ামী লীগ। জেলা সদরটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤পাদক, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর মনোনয়ন নিশ্চিত।

তবে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, জিএম কাদের আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হিসাবে রয়েছেন জিএম কাদেরের সহধর্মিণী বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জাহিদ হাসান। তবে এই আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেতে বেশ জোরেশোরে আওয়াজ তুলেছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই  আসনে প্রথম, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় এবং ১১ দিন মেয়াদের ৬ষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, তৃতীয়,  চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম,  নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। একাদশ সংসদে এই আসনে মহাজোটের জাপার প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৮ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  আবু তালেব মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফরের আজিজুল হক। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মইনুদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম।  ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৭ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, লালমনিরহাট-৩। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুল হাবিব।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির  রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার এম ইসহাক। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হোসেন।  ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ভোটারবিহীন এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির  আসাদুল হাবিব দুলুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু। ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ  নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  জাসদের খোরশেদ আলম। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু।

এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেনÑ বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তিনি লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির টানা চারবারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তার রাজনৈতিক জীবনে ১৯৭৯ সালে তিনি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৬ সালে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করে ওই বছরেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান লালমনিরহাটের একজন জনপ্রিয় নেতা। এক সময়ে বিএনপির দখলে থাকা লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় আরও রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য,  জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন অনেকে। এলাকার সচেতন ভোটাররা বলেন, এখানে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপির কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের রিজার্ভ ভোট প্রায় কাছাকাছি হলেও এই আসনে জেলা শহর ও তার আশপাশের এলাকার ব্যাপক উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বেশ জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, এই আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনসমর্থন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষজন চাক্ষুষ উন্নয়ন দেখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের উন্নয়ন থামিয়ে রাখেননি। আমরা যখনই যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। দশ বছর আগের লালমনিরহাট আর এখনকার লালমনিরহাটের আকাশ জমিন পার্থক্য। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে লালমনিরহাটের অসমাপ্ত সব কাজ সমাপ্ত করা হবে। আগামী নির্বাচনে এই আসনে এবার আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করেছি।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (গোলাম মোহাম্মদ কাদের)। তবে আগামী নির্বাচনে তিনি এই আসনে প্রার্থী না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরিবর্তে এখানে  নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান, এমনটি শোনা যাচ্ছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান বলেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে এ পর্যন্ত সদর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সংসদ সদস্য জিএম কাদেরই আছেন। তবে কোনো কারণে জিএম কাদের রংপুরের আসনে প্রার্থী হলে এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তিনি (জাহিদ হাসান) পাবেন।

এদিকে, বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে এগিয়ে রাখছেন দলটির তৃণমূল কর্মীরা। এখানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী বলে দলটির নেতাকর্মীরা দাবি করেন। জেলা বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, ভোটের মতো ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।

অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলে, আগামী দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনের দাবিগুলো পূরণ হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। এলাকায় বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
এই আসনে জামায়াতের পক্ষে প্রার্থী থাকবে এমনটা আভাস পাওয়া গেলেও দলটি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেননি। অপরদিকে, এই আসনে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসাবে দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুল ইসলামের নাম উঠে এসেছে।