জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে গতি চেয়ে দুদকে আবেদন
- আপডেট সময় ০২:৩৮:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
- / ১১৫ বার পড়া হয়েছে
জমি দখল, বিশ্ব ইজতেমার টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ অসংখ্য পরিবারকে সর্বস্বান্ত করা, চাঁদাবাজি, মানুষ খুন ও করোনাভাইরাস মোকাবিলার তহবিল আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে গতি আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি আবেদন জমা পড়ে। আবেদন করেন জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের মহাসচিব জি কে বাবুল। তিনি জাহাঙ্গীর ও তার পরিজনসহ ঘনিষ্ঠ সহচরদের দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধানসহ তাদের সকলের সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান কাজ গতিশীল করার আবেদন জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায় দুদক। একই দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখনাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকে করা আবেদনে জি কে বাবুল বলেন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ অসংখ্য পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে শত-শত কোটি টাকা লুটপাট আর অন্যের জমি-ফ্যাক্টরি দখলসহ চাঁদাবাজি এবং ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করার মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীর আলম। বিশ্ব ইজতেমার টাকা আত্মসাৎ দিয়ে শুরু হয় জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি আর কুকীর্তি। এরপর সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এবং প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার মাস্টারমাইন্ড খ্যাত জাহাঙ্গীরের নাম বারবার উঠে এসেছে।
আবেদনে তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরের সান্নিধ্যে থেকে এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লা ইটাহাটা এলাকায় প্রাসাদপ্রমোদ বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সিটি করপোরেশনের প্রকল্প তিনবার দেখিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন জাহাঙ্গীর। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে প্রকৌশলী দেলোয়ারকে প্রাণ দিতে হয়।
বিশেষ করে জাহাসীরের দেহরক্ষী আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাহাঙ্গীরের কোথায় কি সম্পদ এবং কতজন অস্ত্রধারী ক্যাডার আছে এবং কি পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক কারবার আছে সেসব বিষয়ে জানা যাবে।অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির শুরু হয় জমি কেনাবেচা ও দালালি করে। একপর্যায়ে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। জাহাঙ্গীরের অর্থ আয়ের বড় খাতগুলো হলো- বিভিন্ন গার্মেন্টেসের ঝুট ও সুতার কারবার এবং জমি কেনাবেচা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরি দখল ও কমিশন বাণিজ্য করা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। যখন যেভাবে ইচ্ছা অ্যাকাউন্ট খুলে করপোরেশনের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অফিস খরচ ও কমিশন দেখানো ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার অর্থ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে ফিন বাংলা অ্যাপারেলস লিমিটেডের এজিএম (অর্থ ও হিসাব) সাইফুল আলম বলেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৫ লাখ ৭ হাজার ২২৬ টাকা ধার্য করা হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
কিন্তু মেয়র জাহাঙ্গীর উন্নয়নকাজের কথা বলে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ অগ্রিম ৫০ লাখ টাকা জমার নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। মেয়র তা নিজ হাতে গ্রহণ করে তার সহকারী মুকুলকে রিসিভ কপি দিতে বলেন। কিন্তু রিসিভ কপি না দিয়ে মুকুল নবায়ন করা ট্রেড লাইসেন্স দেন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরে আর হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা সমন্বয় করেননি মেয়র জাহাঙ্গীর। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করেন মেয়র জাহাঙ্গীর। এই খরচের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে নামে-বেনামে চেকের মাধ্যমে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলার তহবিলও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ৩৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের নামে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৯টি চেকে মোট ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ইস্যু করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর একটি গোপন তদন্ত কমিটি গঠন করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ ও দলীয় পদ ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে ওই কমিটি।