গত বছর জাপানে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬১ জনের জন্ম নেওয়ার তথ্য রেকর্ড হয়েছে। ১৮৯৯ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই এক বছরে সবচেয়ে কম শিশু জন্মের তথ্য।
টানা ১৬ বছর মৃত্যু বেশি জাপানে, জন্মের সঙ্গে গত বছরও ফারাক ১০ লাখ

- আপডেট সময় ০৪:৫৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ৫৮ বার পড়া হয়েছে

জন্মহারের অধোগতি এবং জনসংখ্যায় বৃদ্ধদের আধিপত্য বাড়তে থাকায় সৃষ্ট এ সঙ্কটকে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ আখ্যা দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
জাপানে গত বছর জন্মের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে ১৯৬৮ সালে সরকারি জরিপ শুরুর পর কোনো বছরেই জন্ম-মৃত্যুর এত বড় ব্যবধান দেখা যায়নি।
জন্মহারের অধোগতি এবং জনসংখ্যায় বৃদ্ধদের আধিপত্য বাড়তে থাকায় সৃষ্ট এ সঙ্কটকে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ আখ্যা দিয়ে বিনামূল্যে শিশুযত্ন ও কর্মঘণ্টাকে আরও শিথিল করাসহ পরিবারবান্ধব নীতি নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই জাপানি নারীরা সন্তান জন্মদানে খুব একটা আগ্রহী নন, তাদেরকে উৎসাহিত করতে দেশটির সরকারগুলো এর আগেও নানান পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে সেসব উদ্যোগেও খুব একটা লাভ হয়নি, লিখেছে বিবিসি।
বুধবার জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নতুন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে জন্ম-মৃত্যু হিসাবে নিলে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা ৯ লাখ ৮ হাজার ৫৭৪ জন কমেছে।
গত বছর জাপানে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬১ জনের জন্ম নেওয়ার তথ্য রেকর্ড হয়েছে। ১৮৯৯ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই এক বছরে সবচেয়ে কম শিশু জন্মের তথ্য।
এর বিপরীতে বছরজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের। অর্থ্যাৎ, প্রতিটি শিশুর জন্মের বদলে দুই জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে টানা ১৬ বছর ধরে দেশটিতে জনসংখ্যা কমছে, যার চাপ অনুভূত হচ্ছে দেশটির পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায়।
অন্যদিকে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি জাপানে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬ লাখে পৌঁছায়, যা জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ।
দেশটির সরকার বিদেশি শ্রমিকদের স্বাগত জানাতে ডিজিটাল নোমাড ভিসা ও দক্ষতা বৃদ্ধির নানান উদ্যোগ নিলেও মোটাদাগে রক্ষণশীল দেশটিতে অভিবাসন বিষয়টি নিয়ে এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক আছে।
দেশটিতে ২০২৪ সালের শেষে জনসংখ্যা আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে প্রায় ১২ কোটি ৪৩ লাখে দাঁড়িয়েছে।
দেশটিতে এখন ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী বৃদ্ধের সংখ্যা জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে; মোনাকোর পর জনসংখ্যার বৃদ্ধদের হিস্যায় জাপানই দ্বিতীয়, বলছে বিশ্ব ব্যাংক।
১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের অংশ কমে পৌঁছেছে ৬০ শতাংশের কাছে।
জনসংখ্যা হ্রাসের ধারাবাহিকতায় জাপানে একের পর এক গ্রামও ফাঁকা হয়ে পড়ছে; গত দুই দশকে দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ বাড়ি পরিত্যক্ত হয়েছে বলে গত বছর প্রকাশিত সরকারি তথ্যেই দেখা যাচ্ছে।
এশিয়ার দেশটির সরকার জন্মহার বাড়াতে গৃহায়নে ভর্তুকি থেকে শুরু করে সবেতন পিতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানান প্রণোদনা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। গভীরে প্রোথিত সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বাধার কারণে দেশটির অনেকেই সন্তান জন্মদানে আগ্রহী হন না।
জীবনযাপনের অত্যধিক ব্যয়, স্থবির মজুরি আর কঠোর কর্মসংস্কৃতির কারণে দেশটিতে অনেক তরুণ-তরুণীই বিয়ে বা পরিবার শুরু করা থেকে বিরত থাকে। পুরনো পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতির আধিপত্য বহাল থাকায় জাপানে নবজাতকের প্রাথমিক দেখভালের দায়িত্ব মূলত মা-কেই পালন করতে হয়, এ কারণেও অনেক নারী সন্তান ধারণে আগ্রহী হন না।
দেশটিতে ফার্টিলিটি রেট, অর্থ্যাৎ এক নারী তার জীবদ্দশায় গড়ে যত শিশুর জন্ম দেন, সেই হারও ১৯৭০ এর দশক থেকে কম। এ কারণে এখন যতই ভালো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হোক না কেন, তাতেও ফল মিলতে কয়েক দশক লেগে যাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম