জন বোল্টনের মেরিল্যান্ডের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোসহ ওয়াশিংটন ডিসি’তে তার কার্যালয়েও হানা দিয়েছেন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এর এজেন্টরা।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা থেকে সমালোচক হওয়া বোল্টনের বাড়িতে এফবিআই অভিযান

- আপডেট সময় ০১:৫১:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বর্তমানে তার ঘোর সমালোচক জন বোল্টনের মেরিল্যান্ডের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ম্যারিল্যান্ডের বেথেসডা শহরতলীতে বোল্টনের বাড়িতে শুক্রবার সকালে এফবিআই কর্মকর্তারা গোপন নথির খোঁজে জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের অংশ হিসাবে এই তল্লাশি চালান বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্মকর্তা।
বিবিসি জানায়, এফবিআই কর্মকর্তাদেরকে বক্স হাতে বোল্টনের বাড়িতে ঢুকতে দেখা গেছে। তবে কিছু সরানো হয়েছে কিনা সেটি স্পষ্ট নয়। বোল্টন কাজ ছাড়ার ৬ বছর পর এই সময়ে কেন তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে সেটিও স্পষ্ট নয়।
কেবল গোপন নথি খুঁজতেই এই অভিযান নাকি অন্য আরও কোনও উদ্দেশ্য আছে সে বিষয়ে এফবিআই সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।
বোল্টনের কেবল বাড়িই নয় তার ওয়াশিংটন ডিসি’র কার্যালয়েও এফবিআই এজেন্টরা হানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে বোল্টনকে আটক করা হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও আনা হয়নি বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
বোল্টনের বাড়িতে তল্লাশির বিষয়ে এক এফবিআই কর্মকর্তা বলেছেন, আদালতের আদেশেই তারা কাজ করছেন। জনগণের নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই। তবে বোল্টনকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
অভিযানের সময় এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন… এফবিআই মিশনে আছে।”
তার এ পোস্ট রিটুইট করেন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি। তিনি লেখেন, “আমেরিকার নিরাপত্তা কোনোভাবেই সমঝোতার বিষয় নয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবেই।”
এফবিআইয়ের উপপরিচালক ড্যান বংগিনো এক্স-এ পোস্ট করেন, “জনগণের আস্থা বিনষ্টকারী দুর্নীতি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”
প্রথমে নিউ ইয়র্ক পোস্ট এই অভিযানের খবর প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল বোল্টনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন জন বোল্টন।
ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সির আমলে তার কাজ নাটকীয়ভাবে শেষ হয়েছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প হঠাৎই ঘোষণা দেন যে, তার অনুরোধে বোল্টন পদত্রাগ করেছেন।
পরে বোল্টনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক দ্রুতই অবনতির দিকে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনে বোল্টন তার কর্মকালীন সময় নিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কিন্তু ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন বইটির প্রকাশনা স্থগিত রাখতে মামলা করে। মামলার আবেদনে বলা হয়, জন বোল্টনের কাছে মার্কিন সরকারের অতি সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে।
তবে মামলার পরও বইটি প্রকাশ বন্ধের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বইটিতে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মারাত্মক সব দাবি ছিল। এর জেরে ২০২০ সালে বোল্টনের ‘জেলে যাওয়া উচিত’ বলে একটি টুইট করেছিলেন ট্রাম্প।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বোল্টনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে। তবে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বোল্টন তখন থেকেই ট্রাম্পের ঘোর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকযুদ্ধেও জড়িয়েছেন জন বোল্টন।
গত ১৩ আগস্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক নিয়ে সমালোচনা করেন বোল্টন। তিনি বলেন, বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রে হলেও পুতিন আগেই জয় পেয়েছেন।
এর জবাবে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “পুতিনের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ভীষণ অন্যায় করছে গণমাধ্যম। তারা সবসময় ব্যর্থ আর নির্বোধদের উদ্ধৃতি দিচ্ছে, যেমন জন বোল্টন। তিনি বলেছেন, বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রে হলেও পুতিন জিতে গেছে। এসব কী? আমরা তো সবকিছুতেই জিতছি।”
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৭ আগস্ট আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেন, “এই যুদ্ধ এখনই শেষ করা সম্ভব। কিন্তু নির্বোধ কিছু লোক, যেমন জন বোল্টন ও অন্যরা, এটিকে আরও কঠিন করে তুলছে।”
এ বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর বোল্টনের ওপর থেকে সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেন। ইরানের পক্ষ থেকে তাকে হত্যার হুমকি থাকায় সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তার আওতায় ছিলেন বোল্টন।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম