ইউক্রেইন ও ইউরোপের ‘গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থ’ সুরক্ষিত করতে যে কোনো চুক্তিতে শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি চেয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া

- আপডেট সময় ১২:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে

আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকের পর সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আলাস্কা বৈঠকে ইউক্রেইনের যুদ্ধ বন্ধে কোনো একটি ঘোষণা আসবে, এমন প্রত্যাশা থাকলেও সেরকম কিছু হয়নি।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যম এক্স এ দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেইন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে সমর্থন করি। ইউক্রেইন জোর দেয় যে নেতাদের স্তরে মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে আর এর জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় বিন্যাস উপযুক্ত।
“সোমবার আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এই যুদ্ধ ও হত্যা বন্ধে বিস্তারিত সব কিছু নিয়ে আলোচনার জন্য সাক্ষাৎ করবো।
“এটি গুরুত্বপূর্ণ যে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি পর্বে আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপীয়রাও যুক্ত আছে। ইউক্রেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমেরিকানদের পক্ষ থেকে পাওয়া ইতিবাচক সঙ্কেত নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।”
এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, “আমরা পরিষ্কার যে সাবভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে রক্ষা করার জন্য ইউক্রেইনের অবশ্যই লৌহদৃঢ় নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বিবৃতিতে আমরা স্বাগত জানাই। ইচ্ছুকদের জোট একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনী বা তৃতীয় দেশের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার ওপর কোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ করা উচিত হবে না। ইইউ ও নেটোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার কোনো ভিটো (ক্ষমতা) থাকবে না।
“ইউক্রেইনের ভূখণ্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদেরই থাকবে। অবশ্যই বল প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না।
“লড়াই শেষ করতে এবং একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করতে ইউক্রেইনকে শক্তিশালী রাখার ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু করার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে আমরা নিষেধাজ্ঞা শক্তিশালী করা এবং বিস্তৃত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবো।
“আমরা একটি শান্তির জন্য কাজ করছি যা ইউক্রেইন ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থের সুরক্ষা দেবে, তাই ইউক্রেইন আমাদের অটল সংহতির ওপর নির্ভর করতে পারে।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “ইউক্রেইনে রাশিয়ার অবৈধ যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আমাদের আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাছে নিয়ে এসেছে। হত্যাকাণ্ডের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করা উচিত।
“কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেইনকে বলিষ্ঠ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য আমি ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অকপটতাকে স্বাগত জানাই। এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং আরও বেশি কিছুর জন্য পুতিনের ফিরে আসা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
“এর মধ্যেই তিনি তার বর্বর আক্রমণ বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার যুদ্ধ মেশিনের স্ক্রুগুলোতে টাইট দেওয়া চালিয়ে যাবো। যত দিনই লাগুক ইউক্রেইনের জন্য আমরা অটল সমর্থন দিয়ে যাবো।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এক্স এ বলেছেন, “গত ৩০ বছরের সব শিক্ষা গ্রহণ করাও অপরিহার্য এবং বিশেষ করে রাশিয়ার নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার সুপ্রতিষ্ঠিত প্রবণতা।
“আমাদের স্বার্থ যেন ঐক্য ও দায়িত্বের চেতনায় সংরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ অব্যাহত রাখবো। ফ্রান্স দৃঢ়ভাবে ইউক্রেইনের পাশে থাকা অব্যাহত রাখবে।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, “ইউক্রেইনে শান্তি আলোচনার জন্য অবশেষে আশার ঝলক দেখা দিয়েছে, পশ্চিমা মিত্রদের পাশাপাশি ইতালি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।”
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস এক্স বলেছেন, “আমরা একটি শান্তির জন্য কাজ করছি যা ইউক্রেইন ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থের সুরক্ষা দেবে, তাই ইউক্রেইন আমাদের অটল সংহতির ওপর নির্ভর করতে পারে।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন এক্স এ বলেন, “একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করতে ইইউ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ইউক্রেইন ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থ সুরক্ষিত করতে শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি অপরিহার্য।”
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম