সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। কেউ বা কলা অনুষদের সামনে, কেউ বা বিজ্ঞান অনুষদের দিকে।
ডাকসু নির্বাচন: প্রচার উৎসবে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের তীর

- আপডেট সময় ১২:৫৫:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের আশেপাশে লাগানো ব্যানার বুধবার সরিয়ে ফেলে ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে উৎসবমুখর প্রচার-প্রচারণার মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা।
বুধবার ভোটের প্রচারের দ্বিতীয় দিনে চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ছাত্রদল; অন্যদিকে ছাত্রদলের নাম না বলেই ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা ‘একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব’ করছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেছেন, “সব প্যানেলের প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে। প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। আচরণবিধি ঘোষণার পর কেউ মানছে না।”
বিকালে সিনেট ভবনে চিফ রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে অভিযোগপত্র নিয়ে যান ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও অন্য প্রার্থীরা।
ভোটকেন্দ্র সংখ্যা কম হওয়ায় ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা, বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ বন্ধ করা, কুয়েত মৈত্রী হলের রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ‘হিজাবফোবিয়ার’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে ছাত্রদল।
অভিযোগ দিয়ে বেরিয়ে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, “আমাদের দরকার ছিল প্রচার প্রচারণা করার, শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়ার কিন্তু দিনের বড় একটি অংশ কেটে যাচ্ছে এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্টের অভিযোগ দিতে দিতে, কিন্তু কোনো প্রতিকার আমরা দেখছি না।”
এদিকে ডাকসু নির্বাচনের ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন’ করে স্থাপন করা ব্যানার এবং পিভিসি বোর্ড সরিয়ে নিয়েছে আচরণবিধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। টিএসসি থেকে প্রার্থীদের ব্যানার সরানোর নেতৃত্ব দেন টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম রব্বানী।
টিএসসি, সামাজিক বিজ্ঞান চত্বর, চারুকলা, হলপাড়া এবং কার্জন হলের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মঙ্গলবার সকালেই প্রার্থীদের পরিচয় সংবলিত পিভিসি বোর্ড বসিয়ে দিয়েছিল ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।
স্বতন্ত্র জামালুদ্দীন খালিদ ও এনসিপির বহিষ্কৃত নেতা মাহিন সরকারের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’, উমামা ফাতেমার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলকেও দুয়েকটি করে ব্যানার টানাতে দেখা গেছে।
পিভিসি বোর্ড এবং ব্যানার টানিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার কথা তুলে ধরে তা সেগুলো সরিয়ে নিতে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয়।
চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিনের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আচরণবিধির ধারা-৭(ক) অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার জন্য কেবলমাত্র সাদা কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপানো ও বিলি করা যাবে। পিভিসি, কাপড় বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছাপানো বা লেখা ব্যানার, ফেস্টুন ও বোর্ড টাঙানো যাবে না।”
তবে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ দাবি করেছেন, তারা কোনো প্রকার আচরণবিধি ‘লঙ্ঘন করেননি’। বরং তারা আচরণবিধি মেনেই নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আচরণবিধি অনুযায়ী আমরা কোন বিধি লঙ্ঘন করিনি। আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, কোন দেয়াল, স্থাপনা ও গাছে পেরেক লাগিয়ে কোন প্রচারণা চালানো যাবে না।
“সেক্ষেত্রে আমরা ব্যানার টাঙ্গিয়েছি সুতা ও পাইপ ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে প্রশাসন আমাদের সাথে কথা না বলে আমাদের ব্যানার তুলে নিয়েছে। আমরা দেখছি, প্রশাসন একটা দলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। তাদের জন্য সময় বাড়িয়েছে, তাদের জন্য নিয়ম পরিবর্তন করছে।”
চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগের কথা তুলে ধরে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের জন্য কেন্দ্র মাত্র আটটি। একজন ভোটারকে ভোট দিতে হবে ৪১টি। প্রায় সাত পৃষ্ঠার ব্যালটে একটা ভোট দিতে প্রতিটা ভোটারের প্রায় আট থেকে ১০ মিনিট সময় লেগে যাবে।
“এটুকু লাগবে স্বাভাবিক, মানে বেশি লাগবে না। সেখানে ঘণ্টায় মাত্র আটটা ভোট দেওয়া যাবে। তো, যদি আপনি এখানে ২০টা বুথ হলে ঘণ্টায় ১৬০টা ভোট পড়বে। যদি সেখানে আপনি পুরো আট ঘণ্টার হিসাব করেন, ১ হাজার ২৮০টা ভোট পড়বে।”
ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর একই দাবি জানিয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ’ থেকে ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুল কাদেরও।
তিনি বলেছেন, “আমরা এতদিন দাবি জানানোর পর পাঁচটি ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়িয়ে আটটি করেছে। কিন্তু সেখানে শামসুন্নাহার ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব এসে ভোট দেওয়া সম্ভব না। তারা এরকম হলের ভোট দিতে আসবে না। কারণ এতো দূরে এসে মেয়েদের ভোট দেওয়া বেশ কষ্টকর।”
দ্বিতীয় দিনে প্রচারের ব্যস্ততা
সরজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। কেউ বা কলা অনুষদের সামনে, কেউ বা বিজ্ঞান অনুষদের দিকে, মাঠে সরব ছাত্র সরব সব প্যানেল।
এদিন সকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়।
আর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে প্রচারণা চালিয়েছে বাম ধারার সাত সংগঠনের প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের ইশতেহার তুলে দিতে দেখা যায়।
এছাড়া, বেলা ১২টার দিকে বিজ্ঞান অনুষদে প্রচার চালায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল। তারা বিজ্ঞান অনুষদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালায়।
আর, টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ। সন্ধ্যায়ও তাদের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালাতে দেখা গেছে।
সন্ধ্যার পর কুয়েত মৈত্রী এবং ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম