সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার এক প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ২,৮২৬ কোটি টাকা

- আপডেট সময় ০৬:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৮ বার পড়া হয়েছে

রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা হয়। ছবি: পিআইডি
ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধন করে তা সরবরাহের এক প্রকল্পের ব্যয় ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।
২০১৪ সালে ‘ঢাকা এনভারনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ নামের এ প্রকল্পে যখন নেওয়া হয়, তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
প্রথম সংশোধনে ব্যয় কমিয়ে প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৪৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা; দ্বিতীয় সংশোধনে তা আরো ৪৬ লাখ টাকা কমানো হয়।
তৃতীয় সংশোধনে এসে এক লাফে ব্যয় বাড়ানো হল ২ হাজার ৮২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তাতে প্রকল্পের মোট ব্যায় বেড়ে ১০ হাজার ৯৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা হল।
রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
সেই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন।
একনেক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি তো আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে যে করেই হোক ভূপৃষ্ঠের পানি যেটাকে পরিশোধন করে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু ঢাকার আশপাশে তো পরিশোধ করার শোধনযোগ্য পানি নাই কোনো নদীতে। এটা বোধহয় মেঘনা নদী থেকে, দুই তিনটা জায়গা থেকে পরিশোধনাগার করে ওখান থেকে এগুলো পাইপলাইনে আনার প্রকল্প।”
উপদেষ্টা বলেন, “প্রকল্পটা অনেকদিন ধরে চলছে। শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন আবার আরও সাত-আট বছরের জন্য বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ।”
তবে এর খরচ বাড়া নিয়ে প্রশ্ন আছে মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হবে।

“এটা খুবই একটা প্রয়োজনীয় প্রকল্প। কিন্তু প্রশ্ন হল, এতবার সংশোধন করতে হচ্ছে, এত সময় ক্ষেপণ হচ্ছে এবং আমাদের ধারণা, ওয়াসার এ প্রকল্পে খুব সম্ভবত অনিয়ম হয়েছে। পরিকল্পনার তো অভাব হয়েছেই। তা না হলে এতদিন কেন সময় লাগবে।
“এবং এখানে সমন্বয়হীনতা আছে কিনা সেটা দেখার জন্য আমরা এটা অনুমোদন করেছি, কিন্তু এটাকে আমাদের আইএমইডি থেকে একটা কেইস স্টাডি হিসাবে গ্রহণ করা হল যে এই প্রজেক্টটা আসলে এত দেরি হল কেন এবং এতে কী কী অনিয়ম হয়েছে। কেন প্রকল্পগুলো এতবার সংশোধন করতে হয়, ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে প্রকল্প সুবিধা পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।”
আগের সরকারের নেওয়া এ প্রকল্প বন্ধ না করে বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা কাটাতে এর মূল্যায়ন করা হবে বলে উপদেষ্টার ভাষ্য।
তিনি বলেন, “চলমান প্রকল্প, এটা বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু এখন থেকে আগের যে অসুবিধাগুলো হয়েছে, ভুল ত্রুটি হয়েছে, সেটা যেন না হয়, সেজন্যই এটা খুঁটিয়ে দেখা, যাতে করে ভবিষ্যতের জন্য এই প্রকল্পটা এবং এই ধরনের আরো প্রকল্পগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়তে না হয়।”
এদিন একনেক সভায় আরও নয়টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন, একটি সংশোধিত এবং তিনটির ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
>> কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প।
>> বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৮১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ‘বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন’ প্রকল্প।
>> শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি।
>> শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প।
>> স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ৩৬০ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৮১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা করা হয়েছে।
>> গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৭৭৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি) প্রকল্প।
>> স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬৫ কোটি ১১ লাখ টাকার ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য দুটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
>> স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধি।
>> ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম