তবে রায়ের কোন অংশগুলো নিয়ে আপত্তি, কোন যুক্তিতে আপিল করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিতে পারেননি।
তত্ত্বাবধায়কের রায়ে সন্তুষ্ট হলেও ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে আপিল করব: বদিউল আলম

- আপডেট সময় ০৫:২৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর রায়ে সন্তুষ্ট হলেও তাতে কিছু ‘অসঙ্গতি’ আছে দাবি করে আপিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ সদস্য বলেন, “আমরা এবার আপিল করব। সংক্ষেপে বলতে পারি, রায়টার ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট, তবুও আমরা আপিল করব।”
তবে রায়ের কোন অংশগুলো নিয়ে আপত্তি, কোন যুক্তিতে আপিল করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিতে পারেননি।
নিজের লেখা একটি বই দেখিয়ে তিনি বার বার বলেছেন, ওই বইতে তিনি ‘সবই’ বলেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়। তাতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়।
গতবছর ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি ফের জোরালো হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ অগাস্ট রিট আবেদন করেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি। পরে বিএনপি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি সংগঠন এবং কয়েকজন ব্যক্তি এ রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হয়।
শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এর মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ তৈরি হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আপনারা জানেন যে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছিল, শেখ হাসিনা যদিও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তিনি স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছিল। একসময় তিনি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করেছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যই তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছেন উচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত এবং বিভক্ত রায়ের অজুহাতে। যদিও সেই বিভক্ত রায়ে বলা হয়েছে দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।
“এ বিষয় নিয়ে সংসদে তেমন কোনো আলাপ হয় নাই। একতরফাভাবে পাস হয়েছে। পাস হওয়ার পরে এ নিয়ে তেমন কথাবার্তাও হয়নি।”
এ বিষয়ে নিজের কাজের কথা তুলে ধরে সুজন সম্পাদক বলেন, “এই অধমই প্রথম এই বইটিতে (নিজের লেখা বই দেখিয়ে) তুলে ধরেছি। সেটার (পঞ্চদশ সংশোধনী) গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এমনকি আইনগত বৈধতাও ছিল না।
“২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর আমি একটা লেখা লিখেছিলাম–এটা কার সংবিধান। সেখানে আমি বলেছি, এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। শুধু এ লেখাই নয়, আমি বহু লেখা লিখেছি। অনেক সংবাদপত্রে লিখেছি, টেলিভিশনে দিয়েছি।”
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমি বইও লিখেছি, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের অপরাজনীতি’–এটা ছিল টাইটেল, কিন্তু জানেন তো, ২৩ সালে তখন অপবাদ দিয়েছে। অপবাদ দিলেও সব ঠিক আছে। এর পরে আমরা ঠিক করেছি, আমরা রিট পিটিশনে যাব, আমার সাথে আরও চারজন ছিলেন, গতবছর অগাস্টে মামলা দাখিল করেছি। আমাদের লিড আইনজীবী শরীফ ভুঁইয়া এখানে আছেন।”
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা থেকেই আমরা রিটটা করেছি। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ, এই যুক্তিতে রিট করেছি। এই আইনজীবীরা অত্যন্ত সুচারুভাবে এই কাজটা করেছেন। যার ফলে আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলেছে। এবং তারা এই কাজটা করেছেন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা শ্রমের ভিক্তিতে। বিনা টাকায়।”
আইনজীবী শরীফ ভুঁইয়া বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনী শুধু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে না, এটা আরও অনেক ব্যাপক। এটাকে আমি সংবিধানের পাইকারি পুণর্লিখন বলেছিলাম। বেশিরভাগ মানুষের মতের বাইরে গিয়ে সংবিধানের একটি পাইকারি পুণর্লিখন। এই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামোকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে নষ্ট করে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল। এই জিনিসগুলো আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় কোর্টের কাছে আর্গু করেছিলাম।
“ড. মজুমদার যে বইটা দেখালেন, সেখানে এগুলো পাবেন। কীভাবে বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। এই রায়ে অনেকগুলো দিককে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। সে কারণে রায়ের ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট।”
তিনি বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনী অনেকগুলো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছিল। এই দিকগুলো রায়ে পুরোপুরি আলোচিত হয়নি। সেই দিক থেকে রায়টা ভালো, তবে কিছুটা অসম্পূর্ণতা আছে বলে আমি মনে করি।”
ওই রায়ের কোন কোন অংশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে জানতে চাইলে শরীফ ভুঁইয়ার বক্তব্য শেষে প্রশ্ন করতে বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
শরীফ বলেন, “পঞ্চদশ সংশোধনীর যে অংশ বাতিল করেছে আদালত, সেই অংশগুলো সাথে সাথেই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল দুইভাবে। একটা আমাদের আপিল বিভাগ একটা রায়ের মাধ্যমে বাতিল করেছিল, আরেকটা সংসদেও বাতিল করেছিল।
“সংসদ যে বাতিল করেছিল সেটা এই রায়ের (পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ বাতিলের রায়) মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়টা এখনও রয়ে গেছে। ওই মামলার রায় ড. মজুমদারদের পক্ষে যখন আসবে, তখন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুরোপুরি ফিরবে।”
এই আইনজীবীও বলেন, “সংবিধান সংশোধনের একটা প্রক্রিয়া আছে, সেই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ হয়নি (পঞ্চদশ সংশোধনীতে)। এই জিনিসগুলো ড. মজুমদারের বইতে সুন্দরভাবে আছে। পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোটা বাতিল হয়নি, আমরা বলেছিলাম বাতিল করতে।”
এবার তাহলে কোন কোন পয়েন্টে আপিল করা হবে, কবে নাগাদ করা হবে–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওটা আমি যেটা বলছিলাম, যে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমার যেটা মনে হয়, আপিল বিভাগ থেকে আমাদের কিছু নির্দেশনা, আরও আলাপ আলোচনা প্রয়োজন। কারণ ভবিষ্যতেও সংবিধানের আরও সংশোধনী হবে।
“পঞ্চদশ সংশোধনীতে কিছু ভালো জিনিসও সংযোজন হয়েছে। যদি প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে পুরো সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়, তাহলে এই ভালো জিনিসগুলোও বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এটা একটা সমস্যা আছে, তা হল যে কোনো সরকার একটা খারাপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খারাপ সযশোধনী করে দুয়েকটা ভালো জিনিস জুড়ে দিতে পারে। যাতে করে সংশোধনীটি টিকে যায়। সেজন্য গভীরভাবে পর্যালোচনা করার জন্য আপিল করব, আপিল করে দেখব, আপিল বিভাগ একইভাবে দেখছেন, নাকি আরও ভালো বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।”
নিজের একটি এবং বদিউল আলম মজুমদারের বইটি উঁচিয়ে শরীফ বলেন, “আমাদের এই দুটো বইয়ে এই বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে পাবেন। কাজেই আমরা আপিল করব।”
কবে আপিল করা হবে জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার পাশ থেকে বলেন, “আমার মনে হয় কিছুটা অস্পষ্টতা আছে, অস্পষ্টতা দূর করি… আপনারা জানেন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটা, আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর পরে হাই কোর্টে মামলা হয়েছে, দুটি বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কথা বলা হয়েছিল। আপিল বিভাগে একটি বিভক্ত রায় দিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল করেছে তারা। আদালতে জটিলতা আছে, আমরা ওদিকে যাব না। পরে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল করা হয়।
“আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের জন্য রিট করেছি, এই রিটের রায় হয়েছে। এখন আমরা হাই কোর্টের মামলার আপিল করব।”
সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, কোন বিষয়ের ওপর আপিল করা হবে।
মজুমদার তখন বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত সুযোগ পাইনি, আমরা এগুলো দেখব।”
পাশ থেকে আইনজীবী শরীফ বলেন, “আমরা সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করেছি।”
আবারও দুটি বই বুকে নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আর আপনারা এই বইতে খুঁটিনাটি বিষয় পাবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ব্যাপারে মিথ্যাচার হয়েছে, জালিয়াতি হয়েছে, এগুলো সব এটাতে (বই) লিগ্যাল আর্গুমেন্টে পাবেন।”
তাহলে বইয়ের বিজ্ঞাপন করতেই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে কি না– এমন প্রশ্নে বদিউল আলম বিরক্তির সঙ্গে বলে ওঠেন, “কী কী, কী বললেন?”
তখন একজন সাংবাদিক বলেন, “কোন উদ্দেশ্যে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন, আপনারা যা বলেছেন এগুলোতো মামলার ধারাবাহিকতা।”
তখন বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আজকে সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মামলার যে রায়টা হয়েছে, এখানে অনেক অস্পষ্টতা আছে। এই অস্পষ্টতা দূর করার জন্য এবং আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম কী সেটা তুলে ধরার জন্য। এখন কী পদ্ধতিতে আমরা যাচ্ছি এবং ফলাফলটা কী পাব, এই তথ্যগুলো স্পষ্ট করার জন্য।”
নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম