০১:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
“এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি,” বলেন সালাহউদ্দিন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন, ঐকমত্যের বৈঠকে বিএনপির যে প্রস্তাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৯:২১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

 

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের পক্ষে দল একমত হলেও এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, কীভাবে মনোনীত হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।

রোববার ১৩ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও যে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, তা জানা গেছে বৈঠক পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর সংবাদ সম্মেলনে।

বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বিকল্প বলেছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতির নিয়োগ নিয়েও তাদের প্রস্তাবের কথা বলেছেন তিনি।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বাদশতম দিনের আলোচনায় এ দুটি বিষয় ছাড়াও ছিল জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ে আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আছে (সংবিধানের) ৯৫ অনুচ্ছেদে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় যদি তার প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য অন্যান্য যোগ্যতা থাকে। সেখানে হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল বিভাগ বা অন্য কোনো মাপকাঠি, ওখানে কোনো কিছু উল্লেখ করা নাই।

“সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগের জন্য আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম তিনজনের মধ্য থেকে যেন করা হয়।”

আলোচনায় জ্যেষ্ঠতম দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান করতে একটা জায়গায় আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোনো দল তার নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়। তখন তারা দুইজনের বিধান সংবিধানে রাখতে পারবে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই, এখানে আমরা একমত হয়েছি।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগকে বাদ রেখে কয়েকটি বিকল্প রাখা যায় কিনা তা নিয়ে সবার একমত হওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে তো দ্বিমত সারা জাতির মধ্যেই নাই। সবাই একমত। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগের পুরোটাই হচ্ছে বিচার বিভাগ নির্ভর। তো সেজন্য বিচার বিভাগ নির্ভর প্রস্তাবগুলোর বাইরে যদি কয়েকটি প্রস্তাবে আমরা আগে একমত হতে পারি সবাই মিলে, তাহলে বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়।

সালাহউদ্দিনের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না। রাষ্ট্রপতিকে না রাখতে পারলেই ভালো, তারপরও যদি ঐকমত্যে আসা না যায় সেই ক্ষেত্রে একদম শেষ বিকল্প হিসেবে রাখা যায় একটা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে।

তিনি বলেন, সাধারণ নিয়মে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার ৩০ দিন আগে রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান নিয়োগের উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশের নাগরিক যারা উপযুক্ত, উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন।

যদি পছন্দ মত না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার ও বিরোধী দল থেকে মনোনীত ডেপুটি স্পিকার আলাদা করে নাম প্রস্তাব করবেন। সেখান থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে একজনকে ঠিক করা হবে।

এ ক্ষেত্রে সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতিও করতে পারেন, স্পিকারও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে তিনি শুধু শুনানি করবেন, ভোট দিতে পারবেন না। আর স্পিকার সভাপতিত্ব করলে তার ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা থাকবে। এভাবে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করতে পারেন তাহলে সে প্রক্রিয়া এখানে সমাপ্ত হবে।

আর যদি সেটা না হয় সে ক্ষেত্রে আরেকটি প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী পক্ষ থেকে যিনি হবেন) এই চারজন, সাথে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করবেন এবং রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। আলোচনার যদি ঠিক হয় তাহলে ভালো।

এভাবেও যদি প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, সংসদে তৃতীয় বৃহৎ দলের একজন প্রতিধির সঙ্গে বিরোধী দল বাদে যারা নূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের পক্ষ থেকে একজনকে রাখা হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।

তিনি বলেন, “এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি।

“এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না, তাদের মধ্য থেকে যাদের পাওয়া যায় সেখান থেকে মনোনয়ন হবে।

“প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপটি স্পিকারের কমিটি যাচাই বাছাই করে একজনকে মনোনীত করতে পারেন।

“এরপরেও যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিকে রাখার বা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটা নিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি না হয়ে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে করা যায় কিনা এটাও সিদ্ধান্তে আসবে।”

বিএনপির নেতা বলেন, বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের তরফে যেসব প্রস্তাব আসছে, তারা চান সেগুলো নিয়ে আলোচনা হোক।

“আমরা চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটা বিকল্প আসুক, বিচার বিভাগকে বাদ দিয়ে। যেহেতু বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখাটাই হচ্ছে সবার উদ্দেশ্য।”

জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে ঐক্যমত হয়েছে হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা ঘোষণার যে ক্ষমতা আছে, সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের বিধান না রেখে কমিশনের প্রস্তাব ছিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া। আজকে এই বিষয়ে সর্বসম্মত ঐক্যমত হয়েছে।

“জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধী দলের নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলের উপনেতা যেন অংশগ্রহণ করেন, তাকে আহ্বান জানানো হয়, তো সেটা সংযুক্ত করা হয়েছে।”

গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।

পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।

বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য।

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়।

এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।

স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে।

পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।

মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে।

এর পর ২ জুন শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। রোববার ছিল দ্বাদশতম দিনের আলোচনা।

এদিনের বৈঠকের সূচনায় কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে। সেটার লক্ষ্য ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি।

“আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যে যেভাবে হোক- একটি যৌক্তিক জায়গায় আসা। তা জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ।”

 

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

“এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি,” বলেন সালাহউদ্দিন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন, ঐকমত্যের বৈঠকে বিএনপির যে প্রস্তাব

আপডেট সময় ০৯:২১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

 

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের পক্ষে দল একমত হলেও এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, কীভাবে মনোনীত হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।

রোববার ১৩ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও যে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, তা জানা গেছে বৈঠক পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর সংবাদ সম্মেলনে।

বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বিকল্প বলেছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতির নিয়োগ নিয়েও তাদের প্রস্তাবের কথা বলেছেন তিনি।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বাদশতম দিনের আলোচনায় এ দুটি বিষয় ছাড়াও ছিল জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ে আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, “রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আছে (সংবিধানের) ৯৫ অনুচ্ছেদে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় যদি তার প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য অন্যান্য যোগ্যতা থাকে। সেখানে হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল বিভাগ বা অন্য কোনো মাপকাঠি, ওখানে কোনো কিছু উল্লেখ করা নাই।

“সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগের জন্য আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম তিনজনের মধ্য থেকে যেন করা হয়।”

আলোচনায় জ্যেষ্ঠতম দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান করতে একটা জায়গায় আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোনো দল তার নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়। তখন তারা দুইজনের বিধান সংবিধানে রাখতে পারবে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই, এখানে আমরা একমত হয়েছি।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগকে বাদ রেখে কয়েকটি বিকল্প রাখা যায় কিনা তা নিয়ে সবার একমত হওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে তো দ্বিমত সারা জাতির মধ্যেই নাই। সবাই একমত। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগের পুরোটাই হচ্ছে বিচার বিভাগ নির্ভর। তো সেজন্য বিচার বিভাগ নির্ভর প্রস্তাবগুলোর বাইরে যদি কয়েকটি প্রস্তাবে আমরা আগে একমত হতে পারি সবাই মিলে, তাহলে বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়।

সালাহউদ্দিনের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না। রাষ্ট্রপতিকে না রাখতে পারলেই ভালো, তারপরও যদি ঐকমত্যে আসা না যায় সেই ক্ষেত্রে একদম শেষ বিকল্প হিসেবে রাখা যায় একটা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে।

তিনি বলেন, সাধারণ নিয়মে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার ৩০ দিন আগে রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান নিয়োগের উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশের নাগরিক যারা উপযুক্ত, উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন।

যদি পছন্দ মত না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার ও বিরোধী দল থেকে মনোনীত ডেপুটি স্পিকার আলাদা করে নাম প্রস্তাব করবেন। সেখান থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে একজনকে ঠিক করা হবে।

এ ক্ষেত্রে সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতিও করতে পারেন, স্পিকারও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে তিনি শুধু শুনানি করবেন, ভোট দিতে পারবেন না। আর স্পিকার সভাপতিত্ব করলে তার ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা থাকবে। এভাবে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করতে পারেন তাহলে সে প্রক্রিয়া এখানে সমাপ্ত হবে।

আর যদি সেটা না হয় সে ক্ষেত্রে আরেকটি প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী পক্ষ থেকে যিনি হবেন) এই চারজন, সাথে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করবেন এবং রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। আলোচনার যদি ঠিক হয় তাহলে ভালো।

এভাবেও যদি প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, সংসদে তৃতীয় বৃহৎ দলের একজন প্রতিধির সঙ্গে বিরোধী দল বাদে যারা নূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের পক্ষ থেকে একজনকে রাখা হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।

তিনি বলেন, “এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি।

“এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না, তাদের মধ্য থেকে যাদের পাওয়া যায় সেখান থেকে মনোনয়ন হবে।

“প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপটি স্পিকারের কমিটি যাচাই বাছাই করে একজনকে মনোনীত করতে পারেন।

“এরপরেও যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিকে রাখার বা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটা নিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি না হয়ে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে করা যায় কিনা এটাও সিদ্ধান্তে আসবে।”

বিএনপির নেতা বলেন, বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের তরফে যেসব প্রস্তাব আসছে, তারা চান সেগুলো নিয়ে আলোচনা হোক।

“আমরা চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটা বিকল্প আসুক, বিচার বিভাগকে বাদ দিয়ে। যেহেতু বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখাটাই হচ্ছে সবার উদ্দেশ্য।”

জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে ঐক্যমত হয়েছে হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা ঘোষণার যে ক্ষমতা আছে, সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের বিধান না রেখে কমিশনের প্রস্তাব ছিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া। আজকে এই বিষয়ে সর্বসম্মত ঐক্যমত হয়েছে।

“জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধী দলের নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলের উপনেতা যেন অংশগ্রহণ করেন, তাকে আহ্বান জানানো হয়, তো সেটা সংযুক্ত করা হয়েছে।”

গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।

পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।

বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য।

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়।

এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।

স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে।

পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।

মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে।

এর পর ২ জুন শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। রোববার ছিল দ্বাদশতম দিনের আলোচনা।

এদিনের বৈঠকের সূচনায় কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, “কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে। সেটার লক্ষ্য ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি।

“আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যে যেভাবে হোক- একটি যৌক্তিক জায়গায় আসা। তা জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ।”

 

 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম