০২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
ব্যাংকটি ২০২৩ সালের শেষ দিকে সংকটে পড়ে। এরপর বিভিন্ন সময় তাদেরকে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তারল্য সহায়তার দেড় হাজার কোটি টাকা ‘ফেরত দিয়েছে’ ইসলামী ব্যাংক

নিঝুম আহমেদ - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০২:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে

 

তারল্য সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।

ব্যাংকটি বলছে, ৭০০ কোটি টাকা তারা ফেরত দিয়েছে গত ৩১ জুলাই; আর ৩০ জুন দেওয়া হয়েছে ৮০৯ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; আমানত আসছে; প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। গ্রাহকদের আস্থা অনেক বেড়েছে। এছাড়া এসএলআর ও সিআরআর সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারছে ব্যাংকটি।”

সাত মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাকি টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে।”

ইসলামী ব্যাংকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও।

সপ্তাহ খানেক আগে মুদ্রানীতি দেওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।

২০২৩ সালের শেষ দিকে তারল্য সংকটে পড়ে ইসলামী ব্যাংক। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরকে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয়। এখন সে টাকাই ফেরত দিচ্ছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতেও ব্যর্থ হত। এখন সে সমস্যা নেই। তাতে বোঝা যায় যায়, ব্যাংকটির তারল্য ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ধার দেয়।”

চলতি বছরের জুলাইতে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পদত্যাগ করেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এর মাস তিনেক আগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ করা হয় তাকে।

আর চলতি মাসে ওমর ফারুক খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে বেছে নেয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ; চেয়ারম্যান করা হয় জুবাইদুর রহমানকে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের ক্ষমতা নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলম। এরপর নানা সময় নামে-বেনামে ঋণ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে এক সময়ের সবল ব্যাংকটি আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায়।

২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দিন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে এস আলমের প্রভাবমুক্ত করার জন্য আন্দোলন হয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।

গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করেন। তাতে পর্ষদের ক্ষমতা এস আলমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য শরিয়াহভিত্তিক যেসব ব্যাংকের পর্ষদ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক থেকে নানা সময় ঋণের নামে অর্থছাড় করা হয়েছে। তবে সে টাকা ব্যাংকে আর ফেরত আসেনি। তবে ২০২৪ সালের অগাস্টের পর থেকে বেনামি ঋণ ও টাকার অপব্যবহার বন্ধ হয়েছে।

 

 

নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্যাংকটি ২০২৩ সালের শেষ দিকে সংকটে পড়ে। এরপর বিভিন্ন সময় তাদেরকে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তারল্য সহায়তার দেড় হাজার কোটি টাকা ‘ফেরত দিয়েছে’ ইসলামী ব্যাংক

আপডেট সময় ০২:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

 

তারল্য সহায়তা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।

ব্যাংকটি বলছে, ৭০০ কোটি টাকা তারা ফেরত দিয়েছে গত ৩১ জুলাই; আর ৩০ জুন দেওয়া হয়েছে ৮০৯ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে; আমানত আসছে; প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। গ্রাহকদের আস্থা অনেক বেড়েছে। এছাড়া এসএলআর ও সিআরআর সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারছে ব্যাংকটি।”

সাত মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাকি টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে।”

ইসলামী ব্যাংকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও।

সপ্তাহ খানেক আগে মুদ্রানীতি দেওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।

২০২৩ সালের শেষ দিকে তারল্য সংকটে পড়ে ইসলামী ব্যাংক। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরকে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেয়। এখন সে টাকাই ফেরত দিচ্ছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতেও ব্যর্থ হত। এখন সে সমস্যা নেই। তাতে বোঝা যায় যায়, ব্যাংকটির তারল্য ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, “ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ধার দেয়।”

চলতি বছরের জুলাইতে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পদত্যাগ করেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এর মাস তিনেক আগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ করা হয় তাকে।

আর চলতি মাসে ওমর ফারুক খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে বেছে নেয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ; চেয়ারম্যান করা হয় জুবাইদুর রহমানকে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের ক্ষমতা নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলম। এরপর নানা সময় নামে-বেনামে ঋণ দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে এক সময়ের সবল ব্যাংকটি আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে যায়।

২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দিন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে এস আলমের প্রভাবমুক্ত করার জন্য আন্দোলন হয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।

গত বছরের অগাস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করেন। তাতে পর্ষদের ক্ষমতা এস আলমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য শরিয়াহভিত্তিক যেসব ব্যাংকের পর্ষদ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক থেকে নানা সময় ঋণের নামে অর্থছাড় করা হয়েছে। তবে সে টাকা ব্যাংকে আর ফেরত আসেনি। তবে ২০২৪ সালের অগাস্টের পর থেকে বেনামি ঋণ ও টাকার অপব্যবহার বন্ধ হয়েছে।

 

 

নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম