তার আশা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরে এলে দলের ‘ভোটের প্রচারণার অর্ধেকই’ সেদিন হয়ে যাবে।
তারেক রহমান ফিরবেন ‘অতি শিগগির’: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন

- আপডেট সময় ০১:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে
‘অতি শিগগির’ তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সুনিদির্ষ্ট কোনো দিনক্ষণ বলেননি তিনি। তার আশা, তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে দলের ‘ভোটের প্রচারণার অর্ধেকই’ সেদিন হয়ে যাবে।
রোববার বিকালে রাজধানী ঢাকায় জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন এসব কথা বলেন।
আগের দিন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও তারেক রহমানের শিগগির দেশে আসার কথা বলেছিলেন।
এর দুদিন আগে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকার ভ্রমণ বিষয়ক কাগজপত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
তার ফিরে আসার বিষয়টি তারেক রহমানের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি মন্ত্রণালয়ে বিফ্রিংয়ে বলেছিলেন।
চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালে লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি দেশে আসেননি। এ সময়ে বিভিন্ন মামলা ও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তার দেশে আসার পথ খুললেও তিনি আসেননি। লন্ডন থেকেই দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি।
তারেক রহমানের দেশে আসার বিষয়ে রোববার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, “সারাদেশে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। অতি শিগগিরই আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। সেদিন (প্রত্যাবর্তনের দিন) বাংলাদেশের নির্বাচনের সমস্ত কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
“আমি বলছি, নির্বাচন হয়ে যাবে। তবে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সেদিনই নির্বাচনের অর্ধেক কার্য সমাপ্ত করতে পারব। সেটা কী? সারা বাংলাদেশে আমাদের নির্বাচনি প্রচারণা হয়ে যাবে।
“সেই প্রচারণা সেদিন অর্ধেক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তার প্রত্যাবর্তন হবে বাংলাদেশে একটি অবিস্মরণীয় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।”
এসময় মিলনায়তনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের খবরকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন; ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশ’।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “নির্বাচনের পথে যারাই কাঁটা বিছানোর চেষ্টা করবেন, যারাই বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন তাদের সকলের উদ্দেশে নসিহত হচ্ছে, আমরা এখন নির্বাচনে আবহাওয়ার মধ্যে আছি।”
এদিন বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।
সভায় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ অনুসারে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টামণ্ডলী শপথ নিয়েছেন। আমরা এখন কেন ধারাবাহিকতা পূর্ণ করতে যাব? কি উদ্দেশ্যে? অবশ্যই না- আমি বলব, সবারই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
‘‘আমরা মনে করি, যারা এগুলো চিন্তা করছেন, বিবেচনা করছেন, বিশেষজ্ঞরা আলাপ আলোচনা করছেন, বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন… আপনারা সবাই গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক ধারায় চিন্তা করবেন। এই জাতিকে অতি শিগগির একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কনস্টিটিউশনাল সংসদীয় একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

‘ফ্যাসিস্টদের রাজনীতির জায়গা নেই’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, যে ভালো রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা এবং প্রতিষ্ঠা লালনের মধ্য দিয়ে অপসংস্কৃতি অপরাজনীতি এবং ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে বিলুপ্ত করতে হবে। কারণ আমরা যদি ভালো আদর্শিক রাজনীতি উপস্থাপন করতে পারি তাহলে পরেই আওয়ামী লীগের সেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হবে।
“সর্বক্ষেত্রেই আপনারা দেখবেন বিকল্প যদি ভালো থাকে অতীতের সমস্ত ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক শক্তির কোন রাজনীতি বাংলাদেশে আর চেষ্টা করলেও প্রতিষ্ঠা পাবে না।”
রাজধানীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের মিছিলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকে দেখলাম কোথাও মিছিল দিচ্ছে। এক জায়গায় বলছে ‘জয়’, আরেক জায়গায় দেড় মাইল দূরে দৌড়াতে দৌড়াতে যেয়ে বলছে ‘বাংলা’। এই হচ্ছে এখন আওয়ামী লীগের অবস্থা। সুতরাং এই অবস্থা থেকে যাতে তারা মুক্তি না পায় সেইরকম রাজনীতি বাংলাদেশে আমাদেরকে স্থাপন করতে হবে। সুস্থ ধারার সুন্দর গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা আমাদেরকে করতে হবে।”
জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের র্যালির কর্মসূচি বাতিল করে নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্নতার মত জনবান্ধব কর্মসূচি দেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
আরপিও সংশোধনের কিছু বিষয় ‘অমূলক’
সালাহউদ্দিন বলেন, “আজকে একটা অধ্যাদেশের খসড়া দেখতে পেলাম, আরপিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ যেটা সবাই জানে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট। তার মধ্যে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব এনেছে সেটা এখন কেবিনেটর বিবেচনায় আছে। সেটা অধ্যাদেশ জারি হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
‘‘কিন্তু আমার কাছে কিছু কিছু বিষয় অমূলক মনে হয়েছে। কারণ আমরা প্রস্তাব করেছি, এই সরকার উন্মুক্ত আছে, স্বাধীন আছে, অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সেই সমস্ত সংস্কার প্রস্তাব যেগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে এবং সেগুলো যৌক্তিক, যেগুলো গ্রহণযোগ্য সেগুলো আপনারা অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করুন। আজকের এই অধ্যাদেশটি (আরপিও) মধ্যে আমার মনে হয়েছে আরপিও‘র ২১ ধারার সাব সেকশন ওয়ানে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে প্রতীক নিয়ে। যেকোন রাজনৈতিক দল দুই বা ততোধিক রাজনৈতিক দল যদি জোট করে নির্বাচনে সেই সময় সেই দলের প্রতীক তাকে নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।”
তিনি বলেন, ‘‘তাহলে ক্ষুদ্র দলগুলো, ছোট ছোট দলগুলো জোট করবে কেন? তারা তো জোট করবে একটা বৃহৎ দলের সাথে জোট করে যাতে তারা জিততে পারে কয়েকটি আসন। যদি তাকে তার মার্কা নিয়ে ইলেকশন করতে হয় তাহলে সেটা তারা জোট করতে চাইবে না।”
এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা না হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। অন্তত আমাদের সাথে হয়নি। এ বিষয়ে ঐক্যমত হয়নি। এরকম অমূল সংস্কারগুলো যদি আমরা আইনে নিয়ে আসি কোনো আলাপ আলোচনা ব্যতিরেকে…(তাহলে) পরে জটিলতা হতে পারে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সেজন্য বলব, যারা নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজ করেছেন, জাতীয় ঐক্য কমিশনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে বলছি, সরকারের উদ্দেশে বলছি, এমন কোনো বিধি-বিধান অধ্যাদেশের মাধ্যমে আপনারা জারি করবেন না পরবর্তীতে সেটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য।“
সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও অন্তর্বর্তী সরকারকে রয়েসয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রমিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ কর আইনজীবীরা বক্তব্য রাখেন।
মিজানুর রহমান খান – বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম