গত কয়েক সপ্তাহে তুরস্কে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ ইউরোপজুড়ে দাবানল, হুমকির মুখে তুরস্কের বুরসা

- আপডেট সময় ১১:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
তুরস্কে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা দাবানল দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম শহর বুরসাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, মারা গেছেন অন্তত দুজন।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর লিখেছে, গ্রিস, বুলগেরিয়া ও মন্টেনেগ্রোকেও অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা, খরা ও প্রবল বাতাসের ছড়িয়ে পড়া দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
উত্তর-পশ্চিম তুরস্কের বুরসা শহরকে ঘিরে থাকা পাহাড়ি বনে রোববার রাতে দ্রুত দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, তাতে পূর্বাঞ্চলীয় উপশহরগুলোর রাতের আকাশে লাল আভা দেখা দেয়।
জুনের শেষ দিক থেকে প্রতিদিনই তুরস্কে একাধিক ভয়াবহ দাবানল দেখা গেছে। শুক্রবার সরকার ইজমির ও বিলেজিক প্রদেশকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে।
তুরস্কের বনমন্ত্রী ইব্রাহিম ইউমাকলি জানান, রোববার রাতে বুরসার উত্তর-পূর্ব দিকের গ্রামগুলো থেকে ৩,৫১৫ জন মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে আগুন নেভাতে ১,৯০০ জনের বেশি দমকলকর্মী কাজ করছেন। বুরসা ও রাজধানী আঙ্কারার মধ্যে সংযোগকারী মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
একজন দমকলকর্মী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র মুস্তাফা বোজবে। তিনি বলেন, শহরের আশপাশের তিন হাজার হেক্টর (৭,৪১৩ একর) এলাকা পুড়ে গেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বুরসার বাইরে একটি পানি ট্যাঙ্কার খাদে পড়ে একজন নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ওরহান সারিবাল এ পরিস্থিতিকে ‘প্রলয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সকালে বাতাস কিছুটা কমে আসায় দমকল বাহিনী কিছুটা স্বস্তি পায়। তবে টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে আগে কৃষিজমি ও পাইন গাছ ছিল, সেখানে এখন ছাই ছড়িয়ে আছে।
মন্ত্রী ইউমাকলি জানান, শনিবার সারা দেশে ৮৪টি পৃথক আগুনের সঙ্গে লড়াই করেছে ফায়ার সার্ভিস। দেশটির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, ওই অঞ্চলের কারাবুকে মঙ্গলবার থেকে দাবানল চলছে এবং ১৯টি গ্রাম থেকে ১ হাজার ৮৩৯ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুরসা ও কারাবুক ছাড়াও দক্ষিণ তুরস্কের কাহরামানমারাশ অঞ্চলে একটি বড় দাবানল চলছে। মন্ত্রী সতর্ক করেছেন, যেসব আগুন পুরোপুরি নেভেনি, বাতাসের গতি বেড়ে গেলে সেগুলো আবার জ্বলতে পারে।
দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলো থেকে গবাদি পশু ও পোষা প্রাণীদের উদ্ধার করতে অগ্নিনির্বাপক ও উদ্ধারকর্মীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে দাবানলে আটকে পড়া বন্যপ্রাণীদের উদ্ধারের ছবি দেখা গেছে।

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, খরাভাব এবং প্রবল বাতাস এই দাবানলের মূল কারণ।
তুরস্কের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্বের সিরনাক প্রদেশে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। জুলাই মাসে আরও ১৩২ স্থানে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা যায়।
গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন উদ্ধারকর্মী ও বনকর্মী রয়েছেন, যারা বুধবার পশ্চিম তুরস্কের এসকিশেহির অঞ্চলে আগুনে নিহত হন।
তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইয়িলমাজ তুন্চ শনিবার জানান, গত ২৬ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৩৩টি প্রদেশে দাবানলের তদন্ত হয়েছে এবং ৯৭ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গ্রিসের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ ও কিথেরা দ্বীপে রোববারও দাবানল চলেছে, এর আগের দিন এথেন্সের উপশহর ক্রিওনেরিতে আগুন দেখা যয়। দেশজুড়ে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা বইছে এবং হালকা বাতাস প্রবাহিত হয়েছে।

ক্রিওনেরিতে পুলিশের সহায়তায় ২৭ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ প্রথমে সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল। কর্তৃপক্ষ তখন বলেছে, সরে যাওয়ার নির্দেশ না মানলে জনসাধারণ ও উদ্ধারকারী উভয়ই ঝুঁকিতে পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দাবানলে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং এক দমকলকর্মীকে পোড়া জখমের জন্য সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রিসের এভিয়া দ্বীপের দাবানল এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেখানে বহু প্রাণী খামারে পুড়ে মারা গেছে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
দক্ষিণ বুলগেরিয়ার গ্রিস ও তুরস্ক সীমান্তে এবং পশ্চিম সার্বিয়া সীমান্তে দমকলকর্মীদের দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বুলগেরিয়া সরকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোকে দুর্যোগপূর্ণ ঘোষণা করেছে। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকার বাসিন্দারা সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে আছেন।

জাতীয় ফায়ার সার্ভিস প্রধান আলেকজান্ডার জার্টভ বলেছেন, ২৩৬টি দাবানল সক্রিয় রয়েছে এবং প্রবল বাতাসের কারণে অনেকগুলো আরো ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগী দেশগুলোর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং রোবববার চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি ও সুইডেন থেকে দমকল বিমান বা হেলিকপ্টর আসার কথা।
দক্ষিণ-পশ্চিম স্ট্রুমিয়ানি অঞ্চলে রাতের দাবানলে পিছু হটতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। রোববার সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পশ্চিম ট্রান অঞ্চলে সার্বিয়া সীমান্তের কাছে গ্রামাঞ্চলে আগুন এগিয়ে আসায় অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
সূত্র : বার্তাসংস্থা রয়টার্স / ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর
বিশেষ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম