০৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দুর্নীতির ৯৮ মামলায় আসামি ১১১ সরকারি ব্যক্তি

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১২:৩৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৮১ বার পড়া হয়েছে

দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চলতি বছরের ছয় মাসে ৯৮টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় ২১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে ১১১ জনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।

দুদকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ছয় মাসে বিভিন্ন মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ১১১ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ৪৬ জন বেসরকারি চাকরিজীবী, ১৯ জন ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য পেশার ৩৭ জনকে আসামি করেছে দুদক। এদিকে, ছয় মাসে দায়ের হওয়া ৯৮টি মামলার মধ্যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৪৯টি, জালিয়াতির ঘটনায় ১০টি মামলা ছাড়াও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুদক।

দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ছয় মাসে দাখিল করা অভিযোগপত্রে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে তেমন অভিযোগ না আসায় রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি

দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও সেখানে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা বা চার্জশিট না হওয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এবার তেমন কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।

আসামি যারা

গত ছয় মাসে দায়ের করা মামলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মামলা হলো- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৩০ মে দায়ের করা মামলায় ইউনুস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের (বিআইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিআইএফসির তহবিল লুটপাটের অভিযোগে ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে। যেখানে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা, বিআইএফসির এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আসামি হয়েছেন।

গত ছয় মাসে দায়ের করা মামলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মামলা হলো- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৩০ মে দায়ের করা মামলায় ইউনুস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্স ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (কাস্টমার সার্ভিস) শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ ও দেবেশ চৌধুরী, এয়ারওয়ার্দিনেস কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ারসহ ২৩ কর্মকর্তা, তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোং লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, নরসিংদী সদরের বরখাস্ত হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন বিশ্বাস, রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মুহিবুল ইসলাম ভূইয়া, ডলি কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদ হোসেন মল্লিক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, পল্টন শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক এএসএম মোরশেদ আলী, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুজ্জামান, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সাবেক নিয়ন্ত্রক মুন্সী রুহুল আমীন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন, ঢাকা ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক ও পিপিআই প্রকল্প পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মিঞা মো. মিজানুর রহমান, ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক ও পিপিআই পরিচালনা পর্ষদের সাবেক অফিস ব্যবস্থাপক মো. হাবিব উল্লাহ ভূইয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার দেহরক্ষী ও পুলিশের নায়েক টারজান খীসা, ঢাকা বেঞ্চ অফিসের পুলিশ পরিদর্শক মীর মো. আবুল কালাম আজাদ, উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ সরকারি মৈত্রী হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. হাবিবুর রহমান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম।

৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল, অভিযুক্ত ১৯৪ 

অন্যদিকে, দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ছয় মাসে দাখিল করা অভিযোগপত্রে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে তেমন অভিযোগ না আসায় রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১৯৪ আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৪ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৩২ জন বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ২৮ জন ব্যবসায়ী এবং তিনজন জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য পেশার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। অভিযোগপত্রের মামলাগুলোর মধ্যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ৩৪টি, আত্মসাতের অভিযোগের ৪৮টি এবং জালিয়াতির অভিযোগের সাতটি মামলা রয়েছে।

গত ছয় মাসে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৯৮টি ও চার্জশিট ৯২টি হলেও দুদক যথেষ্ট সক্রিয় আছে বলে দাবি করেছেন কমিশনার জহুরুল হক। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান বলছে আমাদের অফিস সক্রিয়, অনেক কাজ করছে। অভিযোগ যে খাতে নেই, সেখানে আমরা কিছু করি না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে কমিশন থেকে কোনো উদ্যোগ থাকবে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, ‘আমরা ওই সব ভাবি না। আমরা রাজনীতি করি না। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে, নির্বাচনের সময় মিথ্যা অভিযোগ হতে পারে, আমরা তো যাচাই-বাছাই করি। আমরা অভিযোগ আইন মোতাবেক দেখি, আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট না হয়, সেই অভিযোগ যাচাই-বাছায় কমিটি গ্রহণ করে না। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে, অনুসন্ধান করে যদি মামলা হয়, তারপর তদন্ত করি।’

গত পাঁচ বছরে মোট এক হাজার ৬৮০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২১৫টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ২২৪টি, ২০২১ সালে ২৬০টি, ২০২০ সালে ২২৮টি, ২০১৯ সালে ২৬৭টি এবং ২০১৮ সালে ২৩৬টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে মোট এক হাজার ৬৮০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২১৫টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ২২৪টি, ২০২১ সালে ২৬০টি, ২০২০ সালে ২২৮টি, ২০১৯ সালে ২৬৭টি এবং ২০১৮ সালে ২৩৬টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

দুদক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের তিন হাজার ২৯৫টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৬৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান থাকলেও উচ্চ আদালতের আদেশে ৪২৮টি মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অপরদিকে, বর্তমানে উচ্চ আদালতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মামলার মধ্যে ৬৭০টি রিট মামলা, ৭৮৭টি ফৌজদারি বিবিধ মামলা, এক হাজার ১১৭টি ক্রিমিনাল আপিল মামলা ও ৫৫৯টি ফৌজদারি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

ট্যাগস

নিউজটি শেয়ার করুন

দুর্নীতির ৯৮ মামলায় আসামি ১১১ সরকারি ব্যক্তি

আপডেট সময় ১২:৩৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩

দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চলতি বছরের ছয় মাসে ৯৮টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় ২১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে ১১১ জনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।

দুদকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ছয় মাসে বিভিন্ন মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ১১১ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ৪৬ জন বেসরকারি চাকরিজীবী, ১৯ জন ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য পেশার ৩৭ জনকে আসামি করেছে দুদক। এদিকে, ছয় মাসে দায়ের হওয়া ৯৮টি মামলার মধ্যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৪৯টি, জালিয়াতির ঘটনায় ১০টি মামলা ছাড়াও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুদক।

দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ছয় মাসে দাখিল করা অভিযোগপত্রে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে তেমন অভিযোগ না আসায় রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি

দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও সেখানে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা বা চার্জশিট না হওয়ার কারণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এবার তেমন কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।

আসামি যারা

গত ছয় মাসে দায়ের করা মামলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মামলা হলো- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৩০ মে দায়ের করা মামলায় ইউনুস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের (বিআইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিআইএফসির তহবিল লুটপাটের অভিযোগে ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে। যেখানে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা, বিআইএফসির এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আসামি হয়েছেন।

গত ছয় মাসে দায়ের করা মামলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মামলা হলো- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৩০ মে দায়ের করা মামলায় ইউনুস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্স ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (কাস্টমার সার্ভিস) শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ ও দেবেশ চৌধুরী, এয়ারওয়ার্দিনেস কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ারসহ ২৩ কর্মকর্তা, তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোং লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, নরসিংদী সদরের বরখাস্ত হওয়া সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন বিশ্বাস, রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মুহিবুল ইসলাম ভূইয়া, ডলি কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদ হোসেন মল্লিক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, পল্টন শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক এএসএম মোরশেদ আলী, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুজ্জামান, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সাবেক নিয়ন্ত্রক মুন্সী রুহুল আমীন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিক উদ্দিন, ঢাকা ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক ও পিপিআই প্রকল্প পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মিঞা মো. মিজানুর রহমান, ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক ও পিপিআই পরিচালনা পর্ষদের সাবেক অফিস ব্যবস্থাপক মো. হাবিব উল্লাহ ভূইয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার দেহরক্ষী ও পুলিশের নায়েক টারজান খীসা, ঢাকা বেঞ্চ অফিসের পুলিশ পরিদর্শক মীর মো. আবুল কালাম আজাদ, উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ সরকারি মৈত্রী হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. হাবিবুর রহমান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আশরাফুল আলম।

৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল, অভিযুক্ত ১৯৪ 

অন্যদিকে, দুদকের মামলায় গত ছয় মাসে ৯২টি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেগুলোতে ১৯৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ছয় মাসে দাখিল করা অভিযোগপত্রে কোনো রাজনীতিবিদ নেই। তবে, তালিকায় মাত্র চারজন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। আসামির তালিকায় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিরা না থাকার বিষয়ে দুদক থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে তেমন অভিযোগ না আসায় রাজনীতিবিদ-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে ১৯৪ আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৪ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৩২ জন বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ২৮ জন ব্যবসায়ী এবং তিনজন জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য পেশার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। অভিযোগপত্রের মামলাগুলোর মধ্যে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ৩৪টি, আত্মসাতের অভিযোগের ৪৮টি এবং জালিয়াতির অভিযোগের সাতটি মামলা রয়েছে।

গত ছয় মাসে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ৯৮টি ও চার্জশিট ৯২টি হলেও দুদক যথেষ্ট সক্রিয় আছে বলে দাবি করেছেন কমিশনার জহুরুল হক। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান বলছে আমাদের অফিস সক্রিয়, অনেক কাজ করছে। অভিযোগ যে খাতে নেই, সেখানে আমরা কিছু করি না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে কমিশন থেকে কোনো উদ্যোগ থাকবে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, ‘আমরা ওই সব ভাবি না। আমরা রাজনীতি করি না। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে, নির্বাচনের সময় মিথ্যা অভিযোগ হতে পারে, আমরা তো যাচাই-বাছাই করি। আমরা অভিযোগ আইন মোতাবেক দেখি, আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট না হয়, সেই অভিযোগ যাচাই-বাছায় কমিটি গ্রহণ করে না। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে, অনুসন্ধান করে যদি মামলা হয়, তারপর তদন্ত করি।’

গত পাঁচ বছরে মোট এক হাজার ৬৮০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২১৫টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ২২৪টি, ২০২১ সালে ২৬০টি, ২০২০ সালে ২২৮টি, ২০১৯ সালে ২৬৭টি এবং ২০১৮ সালে ২৩৬টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে মোট এক হাজার ৬৮০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি এবং ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২১৫টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে দুদক। এর মধ্যে ২০২২ সালে ২২৪টি, ২০২১ সালে ২৬০টি, ২০২০ সালে ২২৮টি, ২০১৯ সালে ২৬৭টি এবং ২০১৮ সালে ২৩৬টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

দুদক থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের তিন হাজার ২৯৫টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৬৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান থাকলেও উচ্চ আদালতের আদেশে ৪২৮টি মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অপরদিকে, বর্তমানে উচ্চ আদালতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মামলার মধ্যে ৬৭০টি রিট মামলা, ৭৮৭টি ফৌজদারি বিবিধ মামলা, এক হাজার ১১৭টি ক্রিমিনাল আপিল মামলা ও ৫৫৯টি ফৌজদারি রিভিশন মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।