০২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
নৌ পুলিশ বলছে, মৃত্যুর অনেক পরে মরদেহ উদ্ধার হওয়া আর জনবল-লজিস্টিক সংকটে অনেকটাই বেগ পেতে হয় নিহতের পরিচয় শনাক্তে।

দেশের নদীগুলো যেন মরদেহের ‘ডাম্পিং জোন’

নিঝুম আহমেদ - জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১০:২১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে বিভিন্ন নদী থেকে ৩০১টি মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ।

 

হত্যার পর মরদেহ ফেলার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে দেশের নদীগুলো। ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছর বেড়েছে মরদেহ ফেলার ঘটনা। এসব মরদেহের মধ্যে আবার ৩০ শতাংশের কোনো পরিচয়ই মিলছে না। এতে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। নৌ পুলিশ বলছে, মৃত্যুর অনেক পরে মরদেহ উদ্ধার হওয়া আর জনবল-লজিস্টিক সংকটে অনেকটাই বেগ পেতে হয় নিহতের পরিচয় শনাক্তে।

গত ২৩ আগস্ট ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে ৪টি মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাটে যুবকের হাতের সঙ্গে যুবতীর এক হাত চালের বস্তা দিয়ে ছিল বাঁধা অবস্থায়। আর কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে উদ্ধার হওয়া নারী ও শিশুর গলায় ছিল কাপড় প্যাঁচানো। স্থানীয়রা বলেন, হাত-পা বাঁধা ছিল। লাশের অবস্থাও খারাপ ছিল। আশেপাশের মানুষ নদীতে লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেছে।

শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার পাশের তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতেও ঘটছে একই ঘটনা। একের পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কে এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, কারা লাশ ফেলে যাচ্ছে, কীভাবেই বা এসব মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে আশেপাশের এলাকাবাসী। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে প্রশাসনকে।

নৌ-পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে নদীতে প্রতি মাসে গড়ে যেখানে ৩৬টি মরদেহ উদ্ধার হতো চলতি বছর সেটি গিয়ে দাড়িয়েছে ৪৩টিতে। এসব মরদেহের মধ্যেই ৩০ শতাংশের কোনো পরিচয়ই মিলছে না। 

২০২৪ সালে বিভিন্ন নদীতে ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ২৯৯, আর পরিচয় মেলেনি ১৪১টির। অন্যদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসেই মরদেহ পাওয়া গেছে ৩০১টি। যার মধ্যে ৯২টি শনাক্ত করা যায়নি। 

হত্যার পর মরদেহ গায়েবের ডাম্পিং জোন হিসেবে পরিণত হয়েছে রাজধানীর আশেপাশের নদীগুলো। একের পর এক লাশ ভেসে ওঠায় নদীপথে চলাচলকারীরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এটি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চান সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, হত্যা করে মানুষকে নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। যা রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নৌ-পুলিশের দাবি, নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশিরভাগই পচা-গলা। এতে আঙ্গুলের ছাপ ও চেহারা দেখে শনাক্ত করা যায় না। একই সঙ্গে সারা দেশের নদীগুলোতে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সক্ষমতাও নেই বাহিনীটির। নৌ-পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যে পরিমাণে ইউনিট থাকা প্রয়োজন সেটি নেই। ঘাটতি রয়েছে লজিস্টিক সাপোর্টেরও। তবে লজিস্টিক সাপোর্ট ও ইউনিটগুলো বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চলছে।’

নদী ও তীরবর্তী অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতের পর সিসিটিভি স্থাপন করে, টহল ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ অপরাধ বিশ্লেষকের। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘কোন স্পটগুলো অপরাধীরা বেশি ব্যবহার করেছে সেটি চিহ্নিত করে সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে হবে। না হলে এই ধরনের অপরাধের প্রবণতা বাড়তে থাকবে।’

নৌ-পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্য ইউনিটগুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শও অপরাধ বিশ্লেষকদের।

 

 

নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

নৌ পুলিশ বলছে, মৃত্যুর অনেক পরে মরদেহ উদ্ধার হওয়া আর জনবল-লজিস্টিক সংকটে অনেকটাই বেগ পেতে হয় নিহতের পরিচয় শনাক্তে।

দেশের নদীগুলো যেন মরদেহের ‘ডাম্পিং জোন’

আপডেট সময় ১০:২১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

 

হত্যার পর মরদেহ ফেলার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে দেশের নদীগুলো। ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছর বেড়েছে মরদেহ ফেলার ঘটনা। এসব মরদেহের মধ্যে আবার ৩০ শতাংশের কোনো পরিচয়ই মিলছে না। এতে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। নৌ পুলিশ বলছে, মৃত্যুর অনেক পরে মরদেহ উদ্ধার হওয়া আর জনবল-লজিস্টিক সংকটে অনেকটাই বেগ পেতে হয় নিহতের পরিচয় শনাক্তে।

গত ২৩ আগস্ট ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে ৪টি মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাটে যুবকের হাতের সঙ্গে যুবতীর এক হাত চালের বস্তা দিয়ে ছিল বাঁধা অবস্থায়। আর কেরানীগঞ্জের মীরেরবাগে উদ্ধার হওয়া নারী ও শিশুর গলায় ছিল কাপড় প্যাঁচানো। স্থানীয়রা বলেন, হাত-পা বাঁধা ছিল। লাশের অবস্থাও খারাপ ছিল। আশেপাশের মানুষ নদীতে লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেছে।

শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার পাশের তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতেও ঘটছে একই ঘটনা। একের পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্কে এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, কারা লাশ ফেলে যাচ্ছে, কীভাবেই বা এসব মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে আশেপাশের এলাকাবাসী। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে প্রশাসনকে।

নৌ-পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে নদীতে প্রতি মাসে গড়ে যেখানে ৩৬টি মরদেহ উদ্ধার হতো চলতি বছর সেটি গিয়ে দাড়িয়েছে ৪৩টিতে। এসব মরদেহের মধ্যেই ৩০ শতাংশের কোনো পরিচয়ই মিলছে না। 

২০২৪ সালে বিভিন্ন নদীতে ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ২৯৯, আর পরিচয় মেলেনি ১৪১টির। অন্যদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসেই মরদেহ পাওয়া গেছে ৩০১টি। যার মধ্যে ৯২টি শনাক্ত করা যায়নি। 

হত্যার পর মরদেহ গায়েবের ডাম্পিং জোন হিসেবে পরিণত হয়েছে রাজধানীর আশেপাশের নদীগুলো। একের পর এক লাশ ভেসে ওঠায় নদীপথে চলাচলকারীরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এটি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চান সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, হত্যা করে মানুষকে নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। যা রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নৌ-পুলিশের দাবি, নদী থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশিরভাগই পচা-গলা। এতে আঙ্গুলের ছাপ ও চেহারা দেখে শনাক্ত করা যায় না। একই সঙ্গে সারা দেশের নদীগুলোতে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সক্ষমতাও নেই বাহিনীটির। নৌ-পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যে পরিমাণে ইউনিট থাকা প্রয়োজন সেটি নেই। ঘাটতি রয়েছে লজিস্টিক সাপোর্টেরও। তবে লজিস্টিক সাপোর্ট ও ইউনিটগুলো বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চলছে।’

নদী ও তীরবর্তী অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতের পর সিসিটিভি স্থাপন করে, টহল ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ অপরাধ বিশ্লেষকের। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘কোন স্পটগুলো অপরাধীরা বেশি ব্যবহার করেছে সেটি চিহ্নিত করে সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে হবে। না হলে এই ধরনের অপরাধের প্রবণতা বাড়তে থাকবে।’

নৌ-পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অন্য ইউনিটগুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শও অপরাধ বিশ্লেষকদের।

 

 

নিঝুম আহমেদ – জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম