০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার কাজে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপরে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

ধুমধাম আয়োজনে যাওয়ার কথা ছিল শ্বশুরবাড়ি, এখন চিরঘুমে জান্নাতুল

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০১:১৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

 

খুব স্বল্প পরিসরে বিয়ে হয়েছিল জানুয়ারিতে, পা পড়েনি শ্বশুরবাড়ি; ফলে শিগগিরই বড় আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতায় স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার। কিন্তু তা আর কখনো হবে না!

জগতের সব আয়োজন উপক্ষো করে এখন চিরঘুমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এই সহকারী অধ্যাপক।

মাত্র ৩০ বছরে তার অনন্ত যাত্রায় শোকে পাথর পরিবার। কেঁদেছেন তার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফুল দিয়ে জানিয়েছেন শেষ শ্রদ্ধা, বিদায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) ভোট গণনার কাজে যোগ দিতে এসে শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন জান্নাতুল। এরপর চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

শুক্রবার এশার নামাজের পর পাবনা শহরের কাচারীপাড়া জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আরিফপুর সদর কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়েছে।

পাবনার সাংবাদিক রুমি খন্দকার ও সাবেক শিক্ষক লুৎফুন্নাহার পলির একমাত্র সন্তান মৌমিতা। রুমি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কাজ করেন।

তিনি বলেন, “(জাকসু) নির্বাচনের দায়িত্ব শেষে বাসায় ফেরার পর আমার সঙ্গে কথা হয়। সকালে ভোট গণনার কক্ষে যাওয়ার পথে হঠাৎ পড়ে গিয়ে মারা যায়।”

 

পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি উৎপল মির্জা বলেন, “সাভারে মেয়েটার বিয়ের প্রাথমিক সকল কার্যকলাপ সম্পন্ন করা হয়েছিল। খুব শিগগিরই অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা আর সম্ভব হল না।

“রুমি ভাইয়ের একমাত্র সন্তান এভাবে অকালে চলে যাবে আমরা ভবিনি। এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক আবদুল আলীম বলেন, “তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার সখ্য দীর্ঘদিনের। তার বাবা সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাবার সঙ্গে আমার বাসায় আসত (মৌমিতা), অনেক কথা হত।

“তার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করার। তার অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় একজন মেধাবী শিক্ষক হারাল, এ ক্ষতি অপূরণীয়।”

পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন জান্নাতুল। এরপর ২০২১ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

তার মৃত্যুর বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বলেন, “তিনি সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে চাপ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। চাপের কারণে তিনি হয়তো ঘুমাতে পারেননি।

“সকালে অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি। গার্ড পাঠিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আসার পর তিনি তিন তলায় উঠতে গিয়ে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়; হাসপাতালে নেওয়ার আগেই।”

জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা হওয়ার কথা ছিল ওএমআর মেশিনে। কিন্তু ছাত্রদলের অভিযোগের মুখে তা হাতে গোনার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এ কারণে ভোটের পরের দিন শুক্রবার রাত গড়ালেও ফল প্রকাশ হয়নি।

ভোট গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সুলতানা আক্তার বলছেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) যদি ভোট গণনা ফল দিয়ে দেওয়া হত, তাহলে হয়ত তার মৃত্যু হত না।”

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার কাজে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপরে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

ধুমধাম আয়োজনে যাওয়ার কথা ছিল শ্বশুরবাড়ি, এখন চিরঘুমে জান্নাতুল

আপডেট সময় ০১:১৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

খুব স্বল্প পরিসরে বিয়ে হয়েছিল জানুয়ারিতে, পা পড়েনি শ্বশুরবাড়ি; ফলে শিগগিরই বড় আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতায় স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার। কিন্তু তা আর কখনো হবে না!

জগতের সব আয়োজন উপক্ষো করে এখন চিরঘুমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এই সহকারী অধ্যাপক।

মাত্র ৩০ বছরে তার অনন্ত যাত্রায় শোকে পাথর পরিবার। কেঁদেছেন তার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ফুল দিয়ে জানিয়েছেন শেষ শ্রদ্ধা, বিদায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) ভোট গণনার কাজে যোগ দিতে এসে শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন জান্নাতুল। এরপর চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

শুক্রবার এশার নামাজের পর পাবনা শহরের কাচারীপাড়া জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আরিফপুর সদর কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়েছে।

পাবনার সাংবাদিক রুমি খন্দকার ও সাবেক শিক্ষক লুৎফুন্নাহার পলির একমাত্র সন্তান মৌমিতা। রুমি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কাজ করেন।

তিনি বলেন, “(জাকসু) নির্বাচনের দায়িত্ব শেষে বাসায় ফেরার পর আমার সঙ্গে কথা হয়। সকালে ভোট গণনার কক্ষে যাওয়ার পথে হঠাৎ পড়ে গিয়ে মারা যায়।”

 

পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি উৎপল মির্জা বলেন, “সাভারে মেয়েটার বিয়ের প্রাথমিক সকল কার্যকলাপ সম্পন্ন করা হয়েছিল। খুব শিগগিরই অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা আর সম্ভব হল না।

“রুমি ভাইয়ের একমাত্র সন্তান এভাবে অকালে চলে যাবে আমরা ভবিনি। এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক আবদুল আলীম বলেন, “তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার সখ্য দীর্ঘদিনের। তার বাবা সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাবার সঙ্গে আমার বাসায় আসত (মৌমিতা), অনেক কথা হত।

“তার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা করার। তার অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় একজন মেধাবী শিক্ষক হারাল, এ ক্ষতি অপূরণীয়।”

পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পাবনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন জান্নাতুল। এরপর ২০২১ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

তার মৃত্যুর বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বলেন, “তিনি সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে চাপ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। চাপের কারণে তিনি হয়তো ঘুমাতে পারেননি।

“সকালে অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি। গার্ড পাঠিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আসার পর তিনি তিন তলায় উঠতে গিয়ে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়; হাসপাতালে নেওয়ার আগেই।”

জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা হওয়ার কথা ছিল ওএমআর মেশিনে। কিন্তু ছাত্রদলের অভিযোগের মুখে তা হাতে গোনার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এ কারণে ভোটের পরের দিন শুক্রবার রাত গড়ালেও ফল প্রকাশ হয়নি।

ভোট গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সুলতানা আক্তার বলছেন, “কাল (বৃহস্পতিবার) যদি ভোট গণনা ফল দিয়ে দেওয়া হত, তাহলে হয়ত তার মৃত্যু হত না।”

 

 

সাবরিনা জাহান- বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম