০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর হিসেবে কোম্পানি খুলতে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশের বিধান রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে।

নতুন টেলিকম নীতিমালা: রবি-বাংলালিংকের ‘হতাশা-উদ্বেগ’, গ্রামীণফোন বলছে ‘ইতিবাচক’

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান - বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১২:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

 

সদ্য অনুমোদন পাওয়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মোবাইল অপারেটর রবি ও বাংলালিংক। আর শীর্ষস্থানীয় আরেক অপারেটর গ্রামীণফোন পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছে।

রবি ও বাংলালিংকের দাবি, এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনার সময় দেওয়া প্রস্তাবগুলো আমলে না নিয়েই নীতিমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের মূল আপত্তি কোম্পানির অংশীদারত্বের ১৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়া নিয়ে।

বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর হিসেবে কোম্পানি খুলতে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশের বিধান রেখে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ শীর্ষক এ নীতিমালা বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানি দুটি তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

নতুন নীতিমালা এ খাতে ‘একক নিয়ন্ত্রণ ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম’ কমে সুলভে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সরকার।

এ নীতিমালা অনুমোদনের পর দেশের তিনটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে দুটি রবি ও বাংলালিংক কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানা রাখার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে হতাশার পাশাপাশি উদ্বেগও তুলে ধরা হয়।

অপরদিকে গ্রামীণফোন বলেছে, “নতুন লাইসেন্সিং নীতিমালা খণ্ডিত লাইসেন্সিং থেকে সরে এসে একীভূতকরণের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

বিবৃতিতে রবি বলে, “টেলিকম নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ (সরকারের সঙ্গে) আলোচনার সময় দেওয়া কোনও প্রস্তাবকেই প্রতিফলিত করে না।

“এই ত্রুটি গভীর হতাশাজনক, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যাদের এই বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”

পৃথক বিবৃতিতে বাংলালিংক সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও তারাও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরে।

অপারেটরটি বলেছে, “আমরা সংশোধিত টেলিকম নীতিতে প্রতিফলিত ইতিবাচক পদক্ষেপগুলিকে স্বীকৃতি দিই, যেমন- সক্রিয় নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রাম ভাগাভাগির বিধানটি।

“বাধ্যতামূলক মালিকানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আমাদের কিছু উদ্বেগ রয়েছে যা বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। তবুও আমরা ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তবে গ্রামীণফোন পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছে। অপারেটরটি বলছে, “আমরা বিশ্বাস করি এটি এই খাতের জন্য উপকারী হবে।

”একই সাথে আমরা সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবসম্মত নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার আহ্বান জানাই, কারণ এটি কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

 

কার কত অংশ

বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ার নরওয়ের টেলিনরের হাতে। বাকি ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ দেশি উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। অপরদিকে, রবির ৯০ শতাংশ শেয়ার মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপের হাতে। পুঁজিবাজারে আছে ১০ শতাংশ।

আরেক বিদেশি অপারেটর বাংলালিংকের অংশীদারত্বের শতভাগ দুবাইভিত্তিক ভিওনের কাছে।

নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে রবিকে আরও ৫ শতাংশ এবং বাংলালিংককে ১৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

রবির প্রধান করপোরেট ও রেগুলেটরি কর্মকর্তা শাহেদ আলম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ থাকতে পারবে। এখানে আমাদের প্রথম উদ্বেগ হচ্ছে- আমরা কিন্তু এক্সিসটিং লাইসেন্সি। এখন বিনিয়োগের মাঝপথে এসে যদি আপনি বলেন যে আমার কিছু শেয়ার দুই বছরের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে তাহলে এখানে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হয়।

“এখানে কাকে পার্টনার হিসেবে পাবো সেটার একটা বিষয় আছে। আমরা ২০২০ থেকে শেয়ারবাজারে আছি। আপনি দেখেন শেয়ারে আমাদের পজিশন কোথায়। আমরা মনে করি আমাদের এই মার্কেটের ডেপথটা অনেক কম। ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার মত গভীরতা এই পুঁজিবাজারের নেই।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর হিসেবে কোম্পানি খুলতে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশের বিধান রাখা হয়েছে নতুন নীতিতে।

নতুন টেলিকম নীতিমালা: রবি-বাংলালিংকের ‘হতাশা-উদ্বেগ’, গ্রামীণফোন বলছে ‘ইতিবাচক’

আপডেট সময় ১২:৪৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

সদ্য অনুমোদন পাওয়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মোবাইল অপারেটর রবি ও বাংলালিংক। আর শীর্ষস্থানীয় আরেক অপারেটর গ্রামীণফোন পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছে।

রবি ও বাংলালিংকের দাবি, এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনার সময় দেওয়া প্রস্তাবগুলো আমলে না নিয়েই নীতিমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের মূল আপত্তি কোম্পানির অংশীদারত্বের ১৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দেওয়া নিয়ে।

বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর হিসেবে কোম্পানি খুলতে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশের বিধান রেখে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ শীর্ষক এ নীতিমালা বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হতে পারে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানি দুটি তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

নতুন নীতিমালা এ খাতে ‘একক নিয়ন্ত্রণ ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম’ কমে সুলভে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সরকার।

এ নীতিমালা অনুমোদনের পর দেশের তিনটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে দুটি রবি ও বাংলালিংক কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানা রাখার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে হতাশার পাশাপাশি উদ্বেগও তুলে ধরা হয়।

অপরদিকে গ্রামীণফোন বলেছে, “নতুন লাইসেন্সিং নীতিমালা খণ্ডিত লাইসেন্সিং থেকে সরে এসে একীভূতকরণের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

বিবৃতিতে রবি বলে, “টেলিকম নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ (সরকারের সঙ্গে) আলোচনার সময় দেওয়া কোনও প্রস্তাবকেই প্রতিফলিত করে না।

“এই ত্রুটি গভীর হতাশাজনক, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যাদের এই বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”

পৃথক বিবৃতিতে বাংলালিংক সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও তারাও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরে।

অপারেটরটি বলেছে, “আমরা সংশোধিত টেলিকম নীতিতে প্রতিফলিত ইতিবাচক পদক্ষেপগুলিকে স্বীকৃতি দিই, যেমন- সক্রিয় নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রাম ভাগাভাগির বিধানটি।

“বাধ্যতামূলক মালিকানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আমাদের কিছু উদ্বেগ রয়েছে যা বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। তবুও আমরা ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তবে গ্রামীণফোন পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেছে। অপারেটরটি বলছে, “আমরা বিশ্বাস করি এটি এই খাতের জন্য উপকারী হবে।

”একই সাথে আমরা সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবসম্মত নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার আহ্বান জানাই, কারণ এটি কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

 

কার কত অংশ

বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ার নরওয়ের টেলিনরের হাতে। বাকি ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ দেশি উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। অপরদিকে, রবির ৯০ শতাংশ শেয়ার মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপের হাতে। পুঁজিবাজারে আছে ১০ শতাংশ।

আরেক বিদেশি অপারেটর বাংলালিংকের অংশীদারত্বের শতভাগ দুবাইভিত্তিক ভিওনের কাছে।

নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে রবিকে আরও ৫ শতাংশ এবং বাংলালিংককে ১৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

রবির প্রধান করপোরেট ও রেগুলেটরি কর্মকর্তা শাহেদ আলম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ থাকতে পারবে। এখানে আমাদের প্রথম উদ্বেগ হচ্ছে- আমরা কিন্তু এক্সিসটিং লাইসেন্সি। এখন বিনিয়োগের মাঝপথে এসে যদি আপনি বলেন যে আমার কিছু শেয়ার দুই বছরের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে তাহলে এখানে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হয়।

“এখানে কাকে পার্টনার হিসেবে পাবো সেটার একটা বিষয় আছে। আমরা ২০২০ থেকে শেয়ারবাজারে আছি। আপনি দেখেন শেয়ারে আমাদের পজিশন কোথায়। আমরা মনে করি আমাদের এই মার্কেটের ডেপথটা অনেক কম। ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার মত গভীরতা এই পুঁজিবাজারের নেই।”

 

 

মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান – বিশেষ প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম