০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
দুই উপজেলায় সমাবেশ করতে না পেরে এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার থেকে বান্দরবান চলে যান।

নাসীরুদ্দীনের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য: বিএনপির বিক্ষোভের মুখে এনসিপির সভা পণ্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ০৯:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

 

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে ‘নব্য গডফাদার’ আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে কক্সবাজারের ঈদগাহ ও চকরিয়া উপজেলা সমাবেশ করতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

চকরিয়ায় পথ সমাবেশ করার জন্য একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া সেই স্থানের আশপাশের রাস্তায় ডিভাইডার ভাঙচুর করতে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুই উপজেলায় সমাবেশ করতে না পেরে এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার থেকে বান্দরবান চলে যান।

‘জুলাই পদযাত্রা’র গাড়িবহরে থাকা এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিন শনিবার বিকেল ৫টায় বলেন, তারা চকরিয়া পার হয়েছেন, কিন্তু কিছু লোক আটকা পড়েছেন।

‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার কক্সবাজারে সমাবেশ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা। দুপুরে কক্সবাজারের শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেন।

 

 

তিনি বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন। তিনি ঘের দখল করছেন; মানুষের জায়গা জমি দখল করছেন; চাঁদাবাজি করছেন।”

এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ শেষ করে কক্সবাজার ছাড়ে এনসিপির গাড়িবহর। যাত্রাপথে সমাবেশ করার কথা ছিলো ঈদগাঁও উপজেলায়। সেখানে বিএনপির তোপের মুখে সমাবেশ না করেই রওনা চলে যান এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এরই মধ্যে চকরিয়াতে এনসিপির সমাবেশস্থলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”

এরপর কক্সবাজারেও বিক্ষোভে নামে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা এনসিপির সমাবেশ ঘিরে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে সড়কে আগুন দেয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ করে।

জেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিমুর রহমান বলেন, “সালাউদ্দিন আহমদ সারা বাংলাদেশের অহংকার। আর তার নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

“নাসীরুদ্দীন পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয় বলে এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯৯৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য হন সালাউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়।

সালাহউদ্দিনকে আটকের পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফিরে আসেন বিএনপি সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

 

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

দুই উপজেলায় সমাবেশ করতে না পেরে এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার থেকে বান্দরবান চলে যান।

নাসীরুদ্দীনের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য: বিএনপির বিক্ষোভের মুখে এনসিপির সভা পণ্ড

আপডেট সময় ০৯:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

 

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে ‘নব্য গডফাদার’ আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে কক্সবাজারের ঈদগাহ ও চকরিয়া উপজেলা সমাবেশ করতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

চকরিয়ায় পথ সমাবেশ করার জন্য একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া সেই স্থানের আশপাশের রাস্তায় ডিভাইডার ভাঙচুর করতে দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুই উপজেলায় সমাবেশ করতে না পেরে এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজার থেকে বান্দরবান চলে যান।

‘জুলাই পদযাত্রা’র গাড়িবহরে থাকা এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিন শনিবার বিকেল ৫টায় বলেন, তারা চকরিয়া পার হয়েছেন, কিন্তু কিছু লোক আটকা পড়েছেন।

‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার কক্সবাজারে সমাবেশ করেন এনসিপি নেতাকর্মীরা। দুপুরে কক্সবাজারের শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেন।

 

 

তিনি বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন। তিনি ঘের দখল করছেন; মানুষের জায়গা জমি দখল করছেন; চাঁদাবাজি করছেন।”

এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দুপুর আড়াইটার দিকে সমাবেশ শেষ করে কক্সবাজার ছাড়ে এনসিপির গাড়িবহর। যাত্রাপথে সমাবেশ করার কথা ছিলো ঈদগাঁও উপজেলায়। সেখানে বিএনপির তোপের মুখে সমাবেশ না করেই রওনা চলে যান এনসিপি নেতাকর্মীরা।

এরই মধ্যে চকরিয়াতে এনসিপির সমাবেশস্থলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”

এরপর কক্সবাজারেও বিক্ষোভে নামে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা এনসিপির সমাবেশ ঘিরে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে সড়কে আগুন দেয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ করে।

জেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিমুর রহমান বলেন, “সালাউদ্দিন আহমদ সারা বাংলাদেশের অহংকার। আর তার নামে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

“নাসীরুদ্দীন পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয় বলে এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯৯৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য হন সালাউদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তার সন্ধান পায়।

সালাহউদ্দিনকে আটকের পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১১ আগস্ট প্রায় ৯ বছর পর দেশে ফিরে আসেন বিএনপি সরকারের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।

 

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম