১১:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
অন্তর্বর্তী এই সময়ের মধ্যে দুবাইয়ের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে সরকার। পরে দায়িত্বে আসবে ডিপি ওয়ার্ল্ড বা অন্য কোনো কোম্পানি।

নিউমুরিং টার্মিনাল যাচ্ছে নেভির কাছে, তারপর ডিপি ওয়ার্ল্ড?

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট সময় ১১:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনটিসি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।

 

 

বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনটিসি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।

এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শিগগিরই শেষ হচ্ছে। এরপর ৬ মাস বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

অন্তর্বর্তী এই সময়ের মধ্যে দুবাইয়ের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে সরকার। পরে দায়িত্বে আসবে ডিপি ওয়ার্ল্ড বা অন্য কোনো কোম্পানি।

বুধবার সচিবালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বন্দরের পরিচালন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আপাতত নৌবাহিনীকে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “আমরা নেভিকে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। সেজন্য উনারা নেভির সঙ্গে চুক্তি করছেন। কালকে সিদ্ধান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় চাইলে অপারেটর নিয়োগ করতে পারবে।”

এতদিন চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী’ মনে করা হয়।

বন্দর ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক্স, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে বিপণন ও ঠিকাদারির ব্যবসা রয়েছে সাইফ পাওয়ারটেকের।

উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেক অনেক বছর ধরে কাজ করছিল। তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর ছয় মাস এক্সটেনশন দিয়েছিলাম। সেই ছয় মাস আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। এখন আর এক্সটেনশন দিচ্ছি না, কারণ ওটা ছিল ডিপিএম পদ্ধতিতে। তাই নিজেরা পরিচালনা করতে হবে। পাঁচ মাসের জন্য ওপেন টেন্ডার করাটা সময় সাপেক্ষ।”

“সিদ্ধান্ত হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এই ছয় মাস পরিচালনা করবে। এখন পোর্টকে অথরাইজ করা হচ্ছে ছয় মাস বা তার বেশি সময় একটা নির্দিষ্ট খরচের মধ্যে পরিচালনা করবে। বিধি অনুযায়ী তারা যে কোনো সময়ের জন্য অপারেটর নিয়োগ করতে পারে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সায় দেওয়া হয়েছে এবং বন্দরও চিন্তা করেছে যে আরও কাউকে না দিয়ে এটা আপাতত নেভিকে দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে নেভির অপারেটর আছে, টেকনিক্যাল নোহাউ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “নেভির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এরশাদকে প্রধান করে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য নেভাল হেড কোয়ার্টার থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি অপারেশনাল কমান্ডার না, লজিস্টিকসের কমান্ডার।”

বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মীদের পুরোপুরি কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “১৬ বছর একটা কোম্পানি কাজ করেছে। তাদেরও সহযোগিতা যেন নেভি পায় সেজন্য কাজ করা হবে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যেই অপারেট করুক না কেন, বন্দর থেকে কোনো লোকের চাকরি যাচ্ছে না। যে যেই পদে ছিলেন সেই পদে চাকরি করবেন।”

 

এরপর ডিপি ওয়ার্ল্ড?

ছয়মাস পর বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলার সময় আসেনি, কাজ চলছে। তবে ‘বিদেশিরা নিয়ে গেল পোর্ট’–এমন কথা শুনে আমি হাসি।”

তিনি বলেন, “সাইফ পাওয়ারটেক বা নেভির বাইরে কাউকে অপারেটর নিয়োগ দিতে পারব আমরা–বিষয়টি এমন নয়। সে যদি আসতে চায়, সে যদি বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে কী আমি তাকে দিতে পারব না? পোর্ট তো আর দিয়ে দেওয়া হয়নি। সেটা তো কর্তৃপক্ষের কাছেই আছে। সাইফ পাওয়ারটেক যে কাজটি করত, সেটা একটা বিদেশি কোম্পানি করবে, এটা হল বিষয়।

“আজকে যেমন নেভিকে দিলাম, কালকে নেভি না থাকলে আরেকজনকে দিতে হবে। সেখানে যদি ইন্টারন্যাশনাল কেউ আগ্রহী হয়, তাহলে আমি আমার সুবিধাটা দেখব। আমি যদি দেখি আমাদের সুবিধা হচ্ছে, তাহলে আগের সরকার কী করছে সেটা আপনারা ভুলে যান। আগের সরকারের অনেক কিছু আমরা কন্টিনিউ করছি, কিছু বাদ দিচ্ছি।”

এ বিষয়ে অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “এখনও নেগোশিয়েশন চলছে। ট্রানজিশনাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা বলবে যে কীভাবে কীভাবে চুক্তিগুলো হবে। আমাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো চুক্তি হবে না। আমরা তাদেরকে বলেছি, যদি কোনো লোক দরকার হয় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে প্রশিক্ষিত করবা। বাইরের কোনো লোক আনতে পারবা না। উপমহাদেশের কোনো লোক আনতে পারবা না।

 

বুধবার সচিবালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

 

 

“দ্বিতীয়ত তারা একটা বড় ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আসছে। তারা ইক্যুইপমেন্টের ভাড়া দেবে। আবার নতুন আধুনিক ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসবে। এখন দুটা কনটেইনার একসাথে নামানোর ক্রেন এসেছে। ওই রকম ক্রেন তো আমাদের এখানে নেই। প্রয়োজনে এগুলো রিপ্লেস করে ওগুলো আনতে হবে।

“আবার সেই ক্রেন আনতে গেলে আমাদের যে রেল ট্র্যাক আছে, সেগুলোও রিপ্লেস করতে হবে। আবার এসব ক্রেনের লোড নিতে পারবে কিনা সেগুলো দেখতে হবে। এসব ইনভেস্টমেন্ট তো যারা আসছে তারা করবে।”

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ডিপি ওয়ার্ল্ডের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সাখাওয়াত বলেন, “তারা বিশ্বের ৮৫টি আন্তর্জাতিক বন্দর পরিচালনা করছে। ইউরোপে আমি দেখে এসেছি। আমেরিকাতে বন্দর পরিচালনা করছে। মালয়েশিয়াতে করছে। দুবাই পোর্ট বা ডিপি ওয়ার্ল্ড কী এই পর্যন্ত কোনো দেশ নিয়ে গেছে বন্দর পরিচালনা করতে গিয়ে?

“এখানে কিছু লোকের কতগুলো স্বার্থ আছে। এরা (ডিপি ওয়ার্ল্ড) এলে হয়ত এই স্বার্থগুলো হবে না। বন্দরে চান্দাবাজি কী রকম হয় আপনারা ভালো করেই জানেন। আমরা আউটডক দিয়েছি, সেখানেও চান্দাবাজি হচ্ছে। কাস্টমসের লোকগুলো দেখন কী করছে! অনেকগুলো বিষয় এরকম রয়েছে। আমরা স্টাডি না করে, না দেখে, না বুঝে কোনো কাজ করতে যাচ্ছি না।”

ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি হলে তা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “দুবাইতে আমাদের ১৪ লাখ লোক রয়েছে। তারা আরও বলেছে, এখান থেকে তারা আরও ৪০০ ইঞ্জিনিয়ার নেবে।”

 

‘সুবিধা’ দেখছেন বন্দর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “অপারেশনের দায়িত্ব ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিচ্ছি, মালিকানা তাদের দিচ্ছি না। ডিপি ওয়ার্ল্ডের মত কোম্পানি এলে এখানে অনেক আধুনিক শিপ নোঙ্গর করবে। এখন যে জাহাজগুলো আসে এগুলোর অধিকাংশই ২০০২ সালের মডেলের। বড় বড় লাইনার সার্ভিস এখানে আসবে। এতে করে পোর্টের দক্ষতা বাড়বে।

“দ্বিতীয়ত, টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমটা কমে আসবে। তৃতীয়ত, তারা নতুন নতুন রুট তৈরি করতে পারবে। এখন ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য সিঙ্গপুরের ওপর, কলম্বোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তখন দেখা যাবে তারা অনেক ডাইরেক্ট শিপিংয়ের রুট বের করে ফেলছে। এতে জাহাজের ভাড়া যেমন কমবে, কন্টেইনারের ভাড়াও কমে যাবে।

“আমাদের কন্টেইনার ভাড়া এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি। এটাকে আমরা এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনতে পারব। এর একটা ইতিবাচক প্রভাব সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের ওপর পড়বে।”

বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিলে এখনকার তুলনায় কাজের গতি ও আর্থিক সাশ্রয় দুটোই ‘নিশ্চিত হবে’ বলে দাবি করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

বন্দরের অপারেশন দক্ষতা এখন যা আছে, সেখান থেকে ‘১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে’ বলে আশা প্রকাশ করনে তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, “এখন প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার থেকে ৫ হাজার টিউস (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা যাচ্ছে। এটা হয়তো তখন ছয় হাজারের ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে।”

 

বিদেশি কোম্পানি আনার বিরোধিতা

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কন্টেইনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এনসিটি। এই টার্মিনালের ৫টি জেটির মধ্যে চারটিতে কন্টেইনারবাহী বড় জাহাজ এবং অন্য একটি জেটিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী ছোট জাহাজ ভেড়ানো হয়।

বন্দরে যত কন্টেইনার ওঠা-নামা করে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় এনসিটিতে। ২০২৪ সালে মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর ৪৪ শতাংশ হয়েছে এই টার্মিনালে।

বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে এনসিটির পাঁচটি জেটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্মাণ কাজে বন্দরের খরচ হয়েছিল ৪৬৯ কোটি টাকা।

এর দুই বছর পর এনসিটির জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে বিনিয়োগ করার শর্তে পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তখন বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহীও ছিল। পরে সেই দরপত্র বাতিল করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তারপর টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য ২০১২ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর দরপত্র সংশোধনের নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে পরবর্তীতে মামলা হলে টার্মিনালের ইজারা ঝুলে যায়।

নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ২৫ জুন এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর জেটি পরিচালনায় বন্দরের সাথে চুক্তি করে সাইফ পাওয়ার টেক এবং এর দুই অংশীদার কোম্পানি।

সে বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এনসিটির ২ ও ৩ নম্বর জেটি পরিচালনায় বন্দরের সাথে চুক্তি করে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

দরপত্রের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য তারা এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর এনসিটিতে কন্টেইনার ওঠানামার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

পরে এনসিটি পরিচালনায় আর দরপত্র ডাকা হয়নি। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) প্রতিবার ছয় মাসের জন্য এনসিটির টার্মিনালগুলো পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড।

টানা ১১ বার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটি পরিচালনা করে সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশতম বারের মত আরও ছয় মাসের জন্য তাদের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শুরু থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এনসিটি পরিচালনায় কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন ও রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খরচ করেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

এনসিটিতে বছরে ১০ লাখ একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা আছে। ২০২৪ সালে দেশি বেসরকারি অপারেটর এনসিটিতে ১২ লাখ ৮১ হাজার একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশি অপারেটরের কাছে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখনই এনসিটি পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম আলোচনায় আসে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের মত অর্ন্তবর্তী সরকারও এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আগ্রহের কথা জানায়।

এবারও আলোচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম রয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে অবস্থান জানানোর পর বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক দল, বিভিন্ন বাম সংগঠন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ইতিমধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে’ জড়ানোর চেষ্টা বন্ধের দাবিতে গত ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চও করেছে কিছু বাম সংগঠন।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে ‘নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হবে না’ দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদের আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি।”

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম

নিউজটি শেয়ার করুন

অন্তর্বর্তী এই সময়ের মধ্যে দুবাইয়ের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে সরকার। পরে দায়িত্বে আসবে ডিপি ওয়ার্ল্ড বা অন্য কোনো কোম্পানি।

নিউমুরিং টার্মিনাল যাচ্ছে নেভির কাছে, তারপর ডিপি ওয়ার্ল্ড?

আপডেট সময় ১১:৪৬:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

 

 

বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনটিসি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।

এই টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শিগগিরই শেষ হচ্ছে। এরপর ৬ মাস বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

অন্তর্বর্তী এই সময়ের মধ্যে দুবাইয়ের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে সরকার। পরে দায়িত্বে আসবে ডিপি ওয়ার্ল্ড বা অন্য কোনো কোম্পানি।

বুধবার সচিবালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বন্দরের পরিচালন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আপাতত নৌবাহিনীকে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “আমরা নেভিকে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। সেজন্য উনারা নেভির সঙ্গে চুক্তি করছেন। কালকে সিদ্ধান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় চাইলে অপারেটর নিয়োগ করতে পারবে।”

এতদিন চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সাইফ পাওয়ারটেক। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী’ মনে করা হয়।

বন্দর ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক্স, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে বিপণন ও ঠিকাদারির ব্যবসা রয়েছে সাইফ পাওয়ারটেকের।

উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেক অনেক বছর ধরে কাজ করছিল। তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার পর ছয় মাস এক্সটেনশন দিয়েছিলাম। সেই ছয় মাস আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। এখন আর এক্সটেনশন দিচ্ছি না, কারণ ওটা ছিল ডিপিএম পদ্ধতিতে। তাই নিজেরা পরিচালনা করতে হবে। পাঁচ মাসের জন্য ওপেন টেন্ডার করাটা সময় সাপেক্ষ।”

“সিদ্ধান্ত হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এই ছয় মাস পরিচালনা করবে। এখন পোর্টকে অথরাইজ করা হচ্ছে ছয় মাস বা তার বেশি সময় একটা নির্দিষ্ট খরচের মধ্যে পরিচালনা করবে। বিধি অনুযায়ী তারা যে কোনো সময়ের জন্য অপারেটর নিয়োগ করতে পারে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সায় দেওয়া হয়েছে এবং বন্দরও চিন্তা করেছে যে আরও কাউকে না দিয়ে এটা আপাতত নেভিকে দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে নেভির অপারেটর আছে, টেকনিক্যাল নোহাউ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “নেভির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এরশাদকে প্রধান করে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য নেভাল হেড কোয়ার্টার থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি অপারেশনাল কমান্ডার না, লজিস্টিকসের কমান্ডার।”

বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মীদের পুরোপুরি কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “১৬ বছর একটা কোম্পানি কাজ করেছে। তাদেরও সহযোগিতা যেন নেভি পায় সেজন্য কাজ করা হবে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যেই অপারেট করুক না কেন, বন্দর থেকে কোনো লোকের চাকরি যাচ্ছে না। যে যেই পদে ছিলেন সেই পদে চাকরি করবেন।”

 

এরপর ডিপি ওয়ার্ল্ড?

ছয়মাস পর বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলার সময় আসেনি, কাজ চলছে। তবে ‘বিদেশিরা নিয়ে গেল পোর্ট’–এমন কথা শুনে আমি হাসি।”

তিনি বলেন, “সাইফ পাওয়ারটেক বা নেভির বাইরে কাউকে অপারেটর নিয়োগ দিতে পারব আমরা–বিষয়টি এমন নয়। সে যদি আসতে চায়, সে যদি বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে কী আমি তাকে দিতে পারব না? পোর্ট তো আর দিয়ে দেওয়া হয়নি। সেটা তো কর্তৃপক্ষের কাছেই আছে। সাইফ পাওয়ারটেক যে কাজটি করত, সেটা একটা বিদেশি কোম্পানি করবে, এটা হল বিষয়।

“আজকে যেমন নেভিকে দিলাম, কালকে নেভি না থাকলে আরেকজনকে দিতে হবে। সেখানে যদি ইন্টারন্যাশনাল কেউ আগ্রহী হয়, তাহলে আমি আমার সুবিধাটা দেখব। আমি যদি দেখি আমাদের সুবিধা হচ্ছে, তাহলে আগের সরকার কী করছে সেটা আপনারা ভুলে যান। আগের সরকারের অনেক কিছু আমরা কন্টিনিউ করছি, কিছু বাদ দিচ্ছি।”

এ বিষয়ে অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “এখনও নেগোশিয়েশন চলছে। ট্রানজিশনাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা বলবে যে কীভাবে কীভাবে চুক্তিগুলো হবে। আমাদের ক্ষতি হয় এমন কোনো চুক্তি হবে না। আমরা তাদেরকে বলেছি, যদি কোনো লোক দরকার হয় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে প্রশিক্ষিত করবা। বাইরের কোনো লোক আনতে পারবা না। উপমহাদেশের কোনো লোক আনতে পারবা না।

 

বুধবার সচিবালয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

 

 

“দ্বিতীয়ত তারা একটা বড় ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আসছে। তারা ইক্যুইপমেন্টের ভাড়া দেবে। আবার নতুন আধুনিক ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসবে। এখন দুটা কনটেইনার একসাথে নামানোর ক্রেন এসেছে। ওই রকম ক্রেন তো আমাদের এখানে নেই। প্রয়োজনে এগুলো রিপ্লেস করে ওগুলো আনতে হবে।

“আবার সেই ক্রেন আনতে গেলে আমাদের যে রেল ট্র্যাক আছে, সেগুলোও রিপ্লেস করতে হবে। আবার এসব ক্রেনের লোড নিতে পারবে কিনা সেগুলো দেখতে হবে। এসব ইনভেস্টমেন্ট তো যারা আসছে তারা করবে।”

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ডিপি ওয়ার্ল্ডের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সাখাওয়াত বলেন, “তারা বিশ্বের ৮৫টি আন্তর্জাতিক বন্দর পরিচালনা করছে। ইউরোপে আমি দেখে এসেছি। আমেরিকাতে বন্দর পরিচালনা করছে। মালয়েশিয়াতে করছে। দুবাই পোর্ট বা ডিপি ওয়ার্ল্ড কী এই পর্যন্ত কোনো দেশ নিয়ে গেছে বন্দর পরিচালনা করতে গিয়ে?

“এখানে কিছু লোকের কতগুলো স্বার্থ আছে। এরা (ডিপি ওয়ার্ল্ড) এলে হয়ত এই স্বার্থগুলো হবে না। বন্দরে চান্দাবাজি কী রকম হয় আপনারা ভালো করেই জানেন। আমরা আউটডক দিয়েছি, সেখানেও চান্দাবাজি হচ্ছে। কাস্টমসের লোকগুলো দেখন কী করছে! অনেকগুলো বিষয় এরকম রয়েছে। আমরা স্টাডি না করে, না দেখে, না বুঝে কোনো কাজ করতে যাচ্ছি না।”

ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি হলে তা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “দুবাইতে আমাদের ১৪ লাখ লোক রয়েছে। তারা আরও বলেছে, এখান থেকে তারা আরও ৪০০ ইঞ্জিনিয়ার নেবে।”

 

‘সুবিধা’ দেখছেন বন্দর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “অপারেশনের দায়িত্ব ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিচ্ছি, মালিকানা তাদের দিচ্ছি না। ডিপি ওয়ার্ল্ডের মত কোম্পানি এলে এখানে অনেক আধুনিক শিপ নোঙ্গর করবে। এখন যে জাহাজগুলো আসে এগুলোর অধিকাংশই ২০০২ সালের মডেলের। বড় বড় লাইনার সার্ভিস এখানে আসবে। এতে করে পোর্টের দক্ষতা বাড়বে।

“দ্বিতীয়ত, টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমটা কমে আসবে। তৃতীয়ত, তারা নতুন নতুন রুট তৈরি করতে পারবে। এখন ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য সিঙ্গপুরের ওপর, কলম্বোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তখন দেখা যাবে তারা অনেক ডাইরেক্ট শিপিংয়ের রুট বের করে ফেলছে। এতে জাহাজের ভাড়া যেমন কমবে, কন্টেইনারের ভাড়াও কমে যাবে।

“আমাদের কন্টেইনার ভাড়া এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি। এটাকে আমরা এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনতে পারব। এর একটা ইতিবাচক প্রভাব সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের ওপর পড়বে।”

বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিলে এখনকার তুলনায় কাজের গতি ও আর্থিক সাশ্রয় দুটোই ‘নিশ্চিত হবে’ বলে দাবি করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

বন্দরের অপারেশন দক্ষতা এখন যা আছে, সেখান থেকে ‘১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে’ বলে আশা প্রকাশ করনে তিনি।

মনিরুজ্জামান বলেন, “এখন প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার থেকে ৫ হাজার টিউস (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা যাচ্ছে। এটা হয়তো তখন ছয় হাজারের ওপরে নিয়ে যাওয়া যাবে।”

 

বিদেশি কোম্পানি আনার বিরোধিতা

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কন্টেইনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এনসিটি। এই টার্মিনালের ৫টি জেটির মধ্যে চারটিতে কন্টেইনারবাহী বড় জাহাজ এবং অন্য একটি জেটিতে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী ছোট জাহাজ ভেড়ানো হয়।

বন্দরে যত কন্টেইনার ওঠা-নামা করে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় এনসিটিতে। ২০২৪ সালে মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর ৪৪ শতাংশ হয়েছে এই টার্মিনালে।

বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে এনসিটির পাঁচটি জেটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্মাণ কাজে বন্দরের খরচ হয়েছিল ৪৬৯ কোটি টাকা।

এর দুই বছর পর এনসিটির জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে বিনিয়োগ করার শর্তে পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তখন বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগ্রহীও ছিল। পরে সেই দরপত্র বাতিল করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তারপর টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য ২০১২ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর দরপত্র সংশোধনের নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে পরবর্তীতে মামলা হলে টার্মিনালের ইজারা ঝুলে যায়।

নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১৫ সালের ২৫ জুন এনসিটির ৪ ও ৫ নম্বর জেটি পরিচালনায় বন্দরের সাথে চুক্তি করে সাইফ পাওয়ার টেক এবং এর দুই অংশীদার কোম্পানি।

সে বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এনসিটির ২ ও ৩ নম্বর জেটি পরিচালনায় বন্দরের সাথে চুক্তি করে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

দরপত্রের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য তারা এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর এনসিটিতে কন্টেইনার ওঠানামার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

পরে এনসিটি পরিচালনায় আর দরপত্র ডাকা হয়নি। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) প্রতিবার ছয় মাসের জন্য এনসিটির টার্মিনালগুলো পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড।

টানা ১১ বার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এনসিটি পরিচালনা করে সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশতম বারের মত আরও ছয় মাসের জন্য তাদের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শুরু থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এনসিটি পরিচালনায় কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন ও রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খরচ করেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

এনসিটিতে বছরে ১০ লাখ একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা আছে। ২০২৪ সালে দেশি বেসরকারি অপারেটর এনসিটিতে ১২ লাখ ৮১ হাজার একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশি অপারেটরের কাছে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখনই এনসিটি পরিচালনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম আলোচনায় আসে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের মত অর্ন্তবর্তী সরকারও এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আগ্রহের কথা জানায়।

এবারও আলোচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম রয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে অবস্থান জানানোর পর বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক দল, বিভিন্ন বাম সংগঠন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ইতিমধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে’ জড়ানোর চেষ্টা বন্ধের দাবিতে গত ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চও করেছে কিছু বাম সংগঠন।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দিলে ‘নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হবে না’ দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, “বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদের আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি।”

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

 

নিউজ ডেস্ক : বিডিপলিটিক্স টোয়েন্টিফোর ডটকম